গড়াই নদ পুনঃখনন বন্ধ করে দিলেন প্রতিমন্ত্রী
কুষ্টিয়ার গড়াই নদ পুনঃখনন প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। গতকাল শুক্রবার দুপুরে কুষ্টিয়া শহর–সংলগ্ন হরিপুর ইউনিয়নে পদ্মা-গড়াই মোহনায় খননকাজ পরিদর্শন শেষে অসন্তুষ্ট হয়ে তিনি এ সিদ্ধান্ত জানান।
পরিদর্শন শেষে প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘এভাবে চলতে দেওয়া যাবে না। এখন যেটা করা হচ্ছে, সেটা বলতে গেলে নালার মতো খনন করা হচ্ছে। এটাকে আরও চওড়া করতে হবে। পদ্মার পানি এনে গড়াইয়ে ফেলতে হবে। এ জন্য এখনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং সেটা মন্ত্রণালয় থেকে বাস্তবায়ন করা হবে।’ তিনি বলেন, ৩০০ মিটার চওড়া করে খনন করা হবে। তিনটি খননযন্ত্র কাজ করছে। আরও দুটি খননযন্ত্র আনা হবে। সব মিলিয়ে পাঁচটি খননযন্ত্র দিয়ে রাত–দিন কাজ শুরু করবে। এই মুহূর্তে যে দুটি খননযন্ত্র দিয়ে কাজ চলছে, সেটা বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সঠিক পরিকল্পনা করে ৩০০ মিটার চওড়া খনন করে পদ্মার পানি গড়াইয়ে প্রবাহিত করা হবে।
খননে অনিয়ম ও খননযন্ত্র থেকে তেল চুরি হয়েছে সাংবাদিকদের, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যদি কোনো প্রমাণ থাকে, সেটা নিয়ে আসেন, আমি তাঁর (কর্মকর্তা) বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিচ্ছি সেটা দেখেন।’
এ সময় প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহমুদুল ইসলাম, প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম ওয়াহেদুজ্জামান, গড়াই খনন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পীযূষ কৃষ্ণ কুণ্ডুসহ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রকল্প পরিচালক মনিরুজ্জামান বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রী খনন স্থগিত করেছেন। মন্ত্রণালয় থেকে নতুন নির্দেশনা আসার পরই কাজ শুরু হবে। সাত কোটি টাকা ব্যয়ে এই অংশে খনন চলছিল; যা জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল।’
পাউবো সূত্র জানায়, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সুন্দরবনসহ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গড়াই খনন প্রকল্প হাতে নেয়। ১৯৯৮ সালে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই নদ খনন করা হয়। খননের পর আবার পলি পড়ে। ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে চার বছর মেয়াদি বৃহত্তর আকারের খনন করতে ‘গড়াই নদ পুনরুদ্ধার প্রকল্প-২’ প্রকল্প গ্রহণ করে। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯৪২ কোটি টাকা। দ্বিতীয় প্রকল্পটি বছরখানেক আগে শেষ হয়। সারা বছর মিঠাপানির প্রবাহ সচল রাখতে প্রকল্পটি নেওয়া হলেও দৃশ্যত তেমন কোনো ফল মিলছে না। গড়াই নদে তৃতীয় দফা খননের জন্য প্রায় ৫৯০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। চার বছর মেয়াদি এ প্রকল্পে ৩৭ কিলোমিটার নদী খনন ও ৭ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ করা হবে।
এ নিয়ে গত ৫ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোর প্রথম পাতায় ‘দুবারে সফলতা নেই, এবার ৬০০ কোটি টাকার প্রকল্প’ শিরোনামে প্রতিবেদন ছাপা হয়।