বগুড়া সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম ওরফে শাহীন হত্যা মামলার প্রধান আসামি ও বগুড়া পৌরসভার প্যানেল মেয়র আমিনুল ইসলামের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বগুড়ার উপশহর পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক আমবার হোসেন আমিনুলের সাত দিনের রিমান্ড চান। বগুড়ার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত-৩-এর বিচারক বিল্লাল হোসাইন শুনানি শেষে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
বিএনপির নেতা মাহবুব আলম হত্যা মামলার প্রধান আসামি আমিনুল ইসলামকে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে রাজধানীর মতিঝিলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ বুধবার দুপুর ১২টার দিকে কঠোর নিরাপত্তা ও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরিহিত অবস্থায় তাঁকে বগুড়ার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। আমিনুল ইসলামকে হাজির করার সময় আদালত এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়। আদালতে হাজির করার সময় আমিনুল ইসলামকে হাস্যোজ্জ্বল ও স্বাভাবিক দেখাচ্ছিল।
রিমান্ড মঞ্জুরের বিষয়টি নিশ্চিত করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আমবার হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এই মামলায় গ্রেপ্তার অপর দুই আসামি পায়েল শেখ এবং মো. রাসেল আগেই আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। তাঁরা আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিতে মোটর মালিক গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মাহবুব আলম খুন হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মোটর মালিক গ্রুপের এক ‘বড় ভাই’র নির্দেশে মাহবুব আলমকে খুন করা হয়েছে বলেও তাঁরা স্বীকারোক্তিতে উল্লেখ করেছেন। মাহবুব আলমের স্ত্রীর দায়ের করা হত্যা মামলায়ও আমিনুল ইসলামকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এসব কারণে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন হওয়ায় আদালতে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
আমিনুল ইসলাম বগুড়া পৌরসভার প্যানেল মেয়র ছাড়াও জেলা মোটর মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক এবং বগুড়া সদর উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি। তিনি ঢাকা-উত্তরবঙ্গ রুটে চলাচলকারী শাহ ফতেহ আলী পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
১৪ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০টার দিকে বগুড়া শহরের উপশহর বাজারের দশতলা বিল্ডিং এলাকায় বিএনপির নেতা মাহবুব আলমকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মাহবুবের স্ত্রী আকতার জাহান বাদী হয়ে ১৬ এপ্রিল বগুড়া সদর থানায় ১১ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। মামলায় বগুড়া পৌরসভার প্যানেল মেয়র আমিনুল ইসলামকে প্রধান আসামি করা হয়।
মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ও বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী বলেন, মাহবুব আলম হত্যাকাণ্ডের পর গা ঢাকা দেন মোটর মালিক গ্রুপের নেতা আমিনুল ইসলাম। এই মামলায় গ্রেপ্তার আসামি পায়েল শেখ এবং রাসেল আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতেও হত্যাকাণ্ডে আমিনুল ইসলামের সম্পৃক্ততার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এ কারণে তাঁকে গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক দল মাঠে নামে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মতিঝিল এলাকা থেকে আমিনুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বিএনপির নেতা ও আইনজীবী মাহবুব হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই চিহ্নিত খুনিদের গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধন, প্রতিবাদ সভাসহ নানা কর্মসূচি পালন করছে বগুড়া জেলা বিএনপি এবং জেলা আইনজীবী সমিতি। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মাহবুব আলমের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে এসে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।