বিদেশে নারী কর্মী পাঠানো কমেছে

>
  • গত বছর সৌদি আরব থেকে ফিরেছেন ১ হাজার ৩৫৩ জন নারী গৃহকর্মী
  • ২০১৭ সালে কাজের জন্য বিদেশে গেছেন ১ লাখ ২১ হাজার ৯২৫ নারী
  • ২০১৮ সালে বিদেশে গেছেন ১ লাখ ১ হাজার ৬৯৫ নারী
  • আগের বছরের চেয়ে প্রায় ১৭ শতাংশ কম।

কাজের নিরাপদ পরিবেশ না থাকায় সৌদি আরব থেকে প্রায় প্রতি মাসেই নারী গৃহকর্মীরা ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর অন্তত ১ হাজার ৩৫৩ জন নারী সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরেছেন। তাঁদের প্রায় সবাই নির্যাতনের কারণে ফিরে আসার কথা বলেছেন। চলতি বছরের বছর প্রথম তিন মাসে দেশটি থেকে ফিরেছেন কমপক্ষে ৬৩৬ জন নারী গৃহকর্মী।

বাংলাদেশ থেকে কাজের জন্য বিদেশে যাওয়া নারীদের ৮০ শতাংশের গন্তব্য সৌদি আরব। সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম উইং থেকে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে সম্প্রতি পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়, গত বছরের জানুয়ারি থেকে এ বছরের মার্চ পর্যন্ত দেশে ফিরেছেন ২ হাজার ২২২ নারী গৃহকর্মী। আরও অনেকেই দেশে ফেরার জন্য সেফহোমে (নিরাপদ আবাস) অবস্থান করছেন। নতুন করে অনেকে সেফহোমে আসছেন। এতে সৌদিতে নারী কর্মী পাঠানো কমে যাচ্ছে।

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) সূত্রে জানা গেছে, ২০০০ সাল থেকে শুরু করে ২০১৭ পর্যন্ত প্রতিবছর বিদেশে নারী কর্মীর অভিবাসন বেড়েছে। ২০১৭ সালে গেছেন ৪৫৪ জন, ২০১৫ সালে এটি ১ লাখ অতিক্রম করে। ২০১৭ সালে কাজের জন্য দেশ ছাড়েন ১ লাখ ২১ হাজার ৯২৫ নারী গৃহকর্মী। ২০১৮ সালে এসে হঠাৎই তা কমে যায়। সংখ্যাটি কমে হয় ১ লাখ ১ হাজার ৬৯৫। গত বছরের প্রথম দুই মাসে ১৬ হাজার ৬২৪ নারী গৃহকর্মী সৌদি আরব গেলেও এ বছরের প্রথম দুই মাসে গেছেন ১৪ হাজার ৩৯৪ জন। ফিরে আসা কমাতে না পারলে এ খাতে কর্মী পাঠানো কমে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশি অভিবাসী মহিলা শ্রমিক অ্যাসোসিয়েশনের (বমসা) সাধারণ সম্পাদক শেখ রুমানা প্রথম আলোকে বলেন, সৌদি আরব থেকে নারীরা নির্যাতিত হয়ে ফিরে আসায় মানুষ ভয় পাচ্ছেন। সবাই হয়তো নির্যাতিত হচ্ছেন না, ভাষাগত দক্ষতার অভাবেও অনেকে খাপ খাওয়াতে না পেরে ফিরে আসছেন। ফিরে আসার খবর ছড়িয়ে পড়ায় প্রশিক্ষণ নিয়েও অনেকে যেতে রাজি হচ্ছেন না।

গৃহ খাতে কর্মী নিতে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করে সৌদি আরব। প্রথমে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ রিয়াল (প্রতি রিয়াল এখন ২২ টাকা) বেতনের কথা বলা হলেও শেষ পর্যন্ত ৮০০ রিয়ালেই গৃহকর্মী পাঠাতে রাজি হয় বাংলাদেশ। জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মী পাঠালে আয়ও বাড়বে, ফিরে আসার সংখ্যাও কমবে। এ ছাড়া দূতাবাস ও শ্রম উইংয়ে জনবল বাড়িয়ে হলেও সৌদিতে নজরদারি বাড়ানো দরকার।

বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব রৌনক জাহান প্রথম আলোকে বলেন, সৌদিতে নারী কর্মী পাঠানোর আগে এক মাসের প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক থাকলেও তা হয়তো মানা হচ্ছে না। ফিরে আসা কর্মীদের নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে এজেন্সিগুলোকে জবাবদিহি করা হচ্ছে।

অভিবাসন খাতের সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না করেই নারী গৃহকর্মীদের সৌদি আরবে পাঠানো হচ্ছে। ভাষার সমস্যাও রয়েছে। ফিরে আসা নারীরা যৌন নির্যাতনসহ নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ভয়াবহ বিবরণ দিচ্ছেন। কাজের নিরাপদ পরিবেশের নিশ্চয়তা না থাকায় বিদেশ যেতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন অনেক নারী কর্মী।

বেসরকারিভাবে বিদেশে কর্মী পাঠানো এজেন্সিগুলোর সংগঠন বায়রার মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ফিরে আসা কর্মীদের সব অভিযোগ সত্য নয়। দূতাবাস থেকে তদন্ত করা হলে প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশই খাপ খাওয়াতে না পেরে ফিরে আসছে। নির্ধারিত সময়ের আগে ফিরে আসায় জরিমানা গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।

ব্র্যাক অভিবাসন প্রোগ্রামের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি মাসে সৌদি আরব থেকে নির্যাতিত নারীর ফিরে আসার সংখ্যা বাড়ছে। গত জানুয়ারিতে ১৮২ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২৫৫ জন এবং মার্চে ফিরেছেন ১৯৯ জন। তবে যাঁরা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার পর নিজ দায়িত্বে চলে যান, তাঁদের তথ্য ব্র্যাকের কাছে নেই। তাই ফিরে আসা নারী কর্মীর প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।