সুইডেন থেকে খুনের নির্দেশ
>
- রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক হত্যা
- যুবলীগ, ছাত্রদল নেতাসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র প্রস্তুত
- সাতজন হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন
সুইডেনে পালিয়ে থাকা বাংলাদেশি সন্ত্রাসী জাহিদুল ইসলাম ওরফে নাহিদের নির্দেশে বনানীর একটি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক সিদ্দিক হোসাইন মুন্সিকে খুন করা হয় বলে তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, চাঁদার জন্য এই খুন হয়। আর খুনিদের ভাড়া করা ও খুনের পরিকল্পনা করেন ছাত্রদল ও যুবলীগের তিন নেতা।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. গোলাম সাকলায়েন প্রথম আলোকে বলেন, সুইডেনে অবস্থানরত জাহিদুল ইসলামসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র চূড়ান্ত করা হয়েছে। দুই-তিন দিনের মধ্যে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। অভিযোগপত্রে অন্য যে চারজনের নাম থাকছে, তাঁরা হলেন সাবেক ছাত্রদল নেতা হেলালউদ্দিন, বাড্ডার যুবলীগের নেতা জাকির হোসেন, ভাড়াটে খুনি আরিফ হোসেন ও মো. নূর আমিন ওরফে নুরা।
২০১৭ সালের ১৪ নভেম্বর রাতে মুখোশধারী কয়েক যুবক বনানীর বি ব্লকের ৪ নম্বর রোডের চারতলাবিশিষ্ট ১১৩ নম্বর বাড়ির নিচতলায় জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এস মুন্সি ওভারসিজে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি চালান। এতে ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক সিদ্দিক মুন্সি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। দুর্বৃত্তদের এলোপাতাড়ি গুলিতে প্রতিষ্ঠানটির তিন কর্মচারী মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে মোস্তাক (৪২), মোখলেসুর রহমান (৩৮) ও পারভেজ আহমেদ (২৮) আহত হন। এ ঘটনায় সিদ্দিক মুন্সির স্ত্রী জোসনা বেগমের করা মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় ডিবির উত্তর বিভাগ।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাস্তা থেকে জব্দ করা সিসি ক্যামেরায় ডিবি পুলিশ দেখতে পায়, ঘটনার পর এস মুন্সি ওভারসিজ থেকে চার যুবক বের হচ্ছেন। তাঁরা হলেন নুরুল ইসলাম ওরফে নুরী, আল আমিন, সাদ্দাম ও শরফউদ্দিন। এই চারজনই সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন। পরে তাঁরা ডিবির সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। তাঁরা পেশাদার খুনি। এ ছাড়া ওই হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা হলেন হেলালউদ্দিন (৩৮), জাকির হোসেন (৩২), আরিফ হোসেন (২৩), মো. নূর আমিন ওরফে নুরা (২৭) ও ইয়াসিন (৩১)। নূর আমিন ও ইয়াসিন ছাড়া বাকি তিনজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
মামলার তদন্ত সূত্র জানায়, আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ, আদালতে দেওয়া জবানবন্দি ও বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে বেরিয়ে এসেছে সুইডেন থেকে জাহিদুল ইসলাম ওরফে নাহিদ রিক্রুটিং এজেন্সির ব্যবসায়ী সিদ্দিক মুন্সি হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। জাহিদুল ছাত্রদলের সাবেক নেতা। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র আইনসহ কয়েকটি মামলা রয়েছে। তিনি এখন সুইডেনে অবস্থান করছেন। তাঁর সহযোগী হেলালও ছাত্রদলের সাবেক নেতা। হেলালকে বলা হয়, সিদ্দিকের অফিসে মোটা অঙ্কের নগদ টাকা পাওয়া যাবে। হেলালউদ্দিন তাঁর পরিচিত বাড্ডার যুবলীগ নেতা জাকির হোসেনের সহায়তা চান। জাকির হোসেন খুনি ভাড়া করেন। এরপর পেশাদার খুনি নুরুল ইসলাম ওরফে নুরী তাঁর সহযোগী পিচ্চি আল আমিন, সাদ্দাম, নূর আমিন ওরফে নুরা, আরিফ ও শরফউদ্দিনকে নিয়ে একাধিক বৈঠক করে হত্যার দিনক্ষণ চূড়ান্ত করেন।
ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. গোলাম সাকলায়েন বলেন, হত্যাকাণ্ডে সাতজন অংশ নেন আর পরিকল্পনায় ছিলেন দুজন। তবে নিহত সিদ্দিক মুন্সির ব্যবসায় যুক্ত থাকা তাঁর জামাতা আবু হানিফ বলেন, পুলিশ বলেছে চাঁদার জন্য তাঁর শ্বশুরকে খুন করা হয়েছে। কিন্তু হামলাকারীরা তো কোনো টাকা নেয়নি।