বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী দুর্গাসাগর দিঘিতে শুরু হয়েছে অষ্টমী তিথির পুণ্যস্নান। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে হাজার হাজার নারী-পুরুষ এখানে আসতে শুরু করেন। তাঁরা দিঘির সুবিশাল ঘাটে নেমে স্নান করেন। আজ শনিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত তিথি অনুযায়ী এই স্নান চলবে বলে জানান আয়োজকেরা।
প্রতিবছর চৈত্র মাসের অষ্টমী তিথিতে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা দূরদূরান্ত থেকে এই দিঘিতে আসেন পুণ্যস্নানের উদ্দেশে। আগত ভক্তদের বিশ্বাস, এই জল স্পর্শমাত্রই সবার পাপমোচন হয়। এই পবিত্র জলে স্নান করলে চিরমোক্ষ লাভ করা যায়।
পুণ্যস্নান উপলক্ষে দুর্গাসাগর দিঘির কাছেই স্থানীয় মাধবপাশা চন্দ্রদ্বীপ স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে আয়োজন করা হয়েছে শিল্প মেলার। পুণ্যস্নানে আগতরা এই মেলা উপভোগ করেন।
মেলা ও পুণ্যস্নান ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার রায় জানান, পুণ্যস্নান ও মেলা উপলক্ষে কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রস্তুতি চলে। প্রতিবছর এই তিথিতে অসংখ্য সনাতন ধর্মাবলম্বী এখানে আসেন পুণ্যস্নানের জন্য। বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য মানুষের আগমনে এই এলাকা মুখর হয়ে ওঠে। তবে এবার উপস্থিতি আগের বছরগুলোর চেয়ে অনেকটা কম।
দুর্গাসাগর দিঘির রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নিয়োজিত প্রবীণ এক কর্মী মোসলেম আলী সরদার (৬৯)। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই এই দিঘিতে পুণ্যস্নান দেখে আসছি। এ ছাড়া বাবা-দাদার মুখেও পুণ্যস্নান হতো বলে শুনেছি।’ তিনি বলেন, দুর্গাসাগর দিঘির বয়স অন্তত ২০০ বছর। ১৭৮০ সালে খনন করা এই দিঘিতে দেড় শ বছরের বেশি সময় ধরে পুণ্যস্নান উৎসব হয়ে আসছে।
মোসলেম আলী বলেন, প্রতিবছর এখানে প্রায় এক লাখ লোকের সমাগম হয়। কিন্তু এবার সমাগম কম। এবার ১৫-২০ হাজারের বেশি হবে না। আবহাওয়া খারাপ হওয়ায় এবার উপস্থিতি কম হয়েছে বলে মনে করছেন তিনি।
গতকাল সকালে দিঘিপাড়ে গিয়ে দেখা যায়, আগত ভক্তরা দিঘির পাশে একটি নির্দিষ্ট স্থানে পূজা-অর্চনা করছেন। পূজা-অর্চনা শেষে তাঁরা দিঘিতে নেমে স্নান সেরে নিচ্ছেন। অনেকে আবার মঙ্গলের আশায় সন্তানের মাথা ন্যাড়া করে দিচ্ছেন। ভোর থেকেই শুরু হয় স্নান। তা চলে রাত অবধি।
এখানে আগতদের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত পুলিশ কাজ করছে। পিরোজপুর থেকে আসা সতীশ-চম্পা দম্পতি পুণ্যের জন্য এই দিঘিতে স্নান করতে এসেছেন। তাঁরা বলেন, তাঁদের পূর্বপুরুষেরাও পুণ্যলাভের জন্য এখানে স্নান করতে আসতেন। এরই ধারাবাহিকতায় পুণ্যলাভের জন্য তাঁরাও সন্তানকে নিয়ে এখানে এসেছেন।