দুই আসামির নাম বাদ দিয়ে অভিযোগপত্র
গাজীপুরে সাবেক সাংসদের ছেলে হাবিবুর রহমান ওরফে ফয়সাল হত্যা মামলায় এজাহারভুক্ত দুই আসামির নাম বাদ দিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের অভিযোগ উঠেছে কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
মামলার বাদী মাসুমা সুলতানা বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী তদন্তের ফলাফল বাদীকে অবহিতকরণ ফরমে তাঁর (বাদী) স্বাক্ষর রয়েছে। কিন্তু ওই ফরমে তিনি কোনো স্বাক্ষর করেননি। এ বিষয়ে তিনি বৃহস্পতিবার পুলিশের মহাপরিদর্শক এবং ঢাকা রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শকের বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
পুলিশের ওই দুই কর্মকর্তা হলেন কালীগঞ্জ থানার ওসি আবু বকর মিয়া ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা একই থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সৈয়দ আবুল হাশেম।
২০১৭ সালের ৩০ জুলাই রাতে কালীগঞ্জ পৌর এলাকার ভাদগাতী গ্রামের বাড়ির পাশে একটি মুদিদোকানে সাবেক সাংসদ প্রয়াত মোখলেছুর রহমান ওরফে জিতু মিয়ার ছেলে হাবিবুর রহমানকে (৩২) বুকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের বড় বোন মাসুমা সুলতানা বাদী হয়ে ওই বছরের ১ আগস্ট কালীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
পুলিশের আইজিপির কাছে দেওয়া অভিযোগে মাসুমা সুলতানা উল্লেখ করেন, ২০১৭ সালের ৩০ জুলাই রাত সাড়ে আটটার দিকে তাঁর ভাই হাবিবুর রহমানকে পিস্তল দিয়ে গুলি করে হত্যার ঘটনায় তিনি ছয়জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও তিন-চারজনকে আসামি করে কালীগঞ্জ থানায় মামলা করেন। পরবর্তী সময়ে ওই মামলার প্রধান আসামি তৌহিদুল ইসলাম ওরফে রিমনকে র্যাব-১–এর সদস্যরা একটি পিস্তলসহ গ্রেপ্তার করেন। পরে কালীগঞ্জ থানায় র্যাব সদস্য ও ওয়ারেন্ট অফিসার আবু বকর মিয়া বাদী হয়ে অস্ত্র আইনে আরেকটি মামলা করেন। এর এক দিন পর তৌহিদুল ইসলাম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
জবানবন্দিতে হত্যায় ব্যবহৃত অবৈধ পিস্তলের মালিকানা নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন তৌহিদুল। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, কালীগঞ্জ পৌর যুবলীগের সভাপতি বাদল হোসেন তাঁর ভাই এনামুল হককে পিস্তলটি কিনে দিয়েছিলেন। এনামুল হক তাঁর সহযোগী মো. হুমায়ূনকে অবৈধ পিস্তলটি দেন। হুমায়ূন তৌহিদুলকে দিয়ে হত্যার মিশন বাস্তবায়ন করান। ঘটনাস্থলে হুমায়ূন উপস্থিত ছিলেন। তৌহিদুল জবানবন্দি দেওয়ার তিন মাস পর এনামুল বিদেশে পালিয়ে যান।
মাসুমা সুলতানা আরও বলেন, তাঁকে (বাদী) না জানিয়ে অত্যন্ত গোপনে চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি আদালতে হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। পরে মামলা তদারকির জন্য নিযুক্ত তাঁর (বাদী) আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে দাখিল করা অভিযোগপত্র সংগ্রহ করে তিনি জানতে পারেন, এজাহারভুক্ত গুরুত্বপূর্ণ দুই আসামি হুমায়ূনের ভাই মনজুর হোসেন ও তৌহিদুলের বাবা সাইদুল ইসলাম মোসলেমউদ্দিনের নাম অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে এবং অভিযোগপত্রের সঙ্গে ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী তদন্তের ফলাফল বাদী/সংবাদদাতাকে অবহিতকরণ ফরমে তাঁর (বাদী) স্বাক্ষর অবিকল জাল করে অভিযোগপত্রের সঙ্গে দাখিল করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। স্বাক্ষর জাল করে আদালতে দাখিল করা অভিযোগপত্রটি কালীগঞ্জ থানার ওসি মো. আবু বকর মিয়া এবং মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সৈয়দ আবুল হাশেমের সই করা।
মামলার বাদী মাসুমা সুলতানা বলেন, ‘স্বাক্ষর জাল করে আমাকে না জানিয়েই দুজন গুরুত্বপূর্ণ আসামির নাম বাদ দিয়ে তারা অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে।’
এসআই আবুল হাশেম বলেন, ‘ওই ফরমে বাদীই স্বাক্ষর করেছিলেন। এখন তিনি যদি অস্বীকার করে অভিযোগ দেন, তাহলে আমাদের কী করার আছে।’ ওসি আবু বকর মিয়া বলেন, ‘তাঁর (বাদী) স্বাক্ষর জাল করার প্রশ্নই ওঠে না। আমরা তদন্ত করে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছি। বাদীর সেটি পছন্দ না হলে তার নারাজি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।’