মানসিক হাসপাতালে সিটিস্ক্যান ছাড়া সব যন্ত্র অচল

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগে এমআরআই, সিটিস্ক্যান, আলট্রাসনোগ্রাম এবং এক্স–রে করানোর যন্ত্র আছে। এর মধ্যে সিটিস্ক্যান যন্ত্র ছাড়া সব যন্ত্রই অচল। কোনো যন্ত্র ছয় বছর ধরে নষ্ট। কোনো যন্ত্র বসানোর পরে এক দিনের জন্যও চালু হয়নি। কোনোভাবে চলা সিটিস্ক্যান যন্ত্রটিও যেকোনো সময় অচল হয়ে যেতে পারে বলছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

রোগীর স্বজনেরা বলছেন, হাসপাতালের ভেতরে পরীক্ষাগুলো করানোর সুবিধা না থাকায় বাইরে গিয়ে পরীক্ষা করাতে খরচ বাড়ে, যাতায়াতের ঝক্কি পোহাতে হয়। কিছু ক্ষেত্রে মানসিক অসুস্থ রোগীকে বাইরে নেওয়া-আনা করা কঠিন হয়ে পড়ে। এতে অনেকে পরীক্ষা করাতে নিরুৎসাহিত হন।

হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক বলছেন, এমআরআই যন্ত্র নষ্ট থাকায় রোগ নির্ণয়ে অসুবিধা হচ্ছে। বাইরে থেকে পরীক্ষাটি বেশি টাকায় করতে হয় বলে অনেক রোগীই করান না। তখন লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হয়। সে ক্ষেত্রে অনেক সময় সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা কঠিন। আর এক্স-রে এবং আলট্রাসনোগ্রাম ছাড়া নিয়মিত চিকিৎসা চালিয়ে নেওয়াও কঠিন।

রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার পরিধি বাড়াতে হাসপাতালে ২০০৯ সালে ৫ লাখ ৫১ হাজার মার্কিন ডলার খরচ করে এমআরআই যন্ত্রটি চালু করা হয়। এক বছর পরেই এটি নষ্ট হয়। ১৫ লাখ ৭৪ হাজার টাকায় যন্ত্রটি মেরামত করা হয়। আবার বছরখানেক পর ২০১৩ সালে দ্বিতীয়বারের মতো যন্ত্রটি নষ্ট হলে আর চলেনি। গত ১০ বছরে যন্ত্রটি দুই মেয়াদে মাত্র বছর দুই সচল ছিল।

হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহবুবা আহমেদ বলেন, সিটিস্ক্যানের মাধ্যমে মস্তিষ্কের অনেক সমস্যা চিহ্নিত করা যায় না। মস্তিষ্কের টিস্যুর সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কার্যকর দিক দেখার জন্য এমআরআই খুব জরুরি।

দীর্ঘদিন থেকে মাথাব্যথাসহ মানসিক সমস্যায় ভুগছেন ৫৮ বছরের এক রোগী। এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এলে তাঁকে এমআরআই করতে বলা হয়। হাসপাতালের যন্ত্রটি নষ্ট থাকায় এই রোগীর পরিবারের সদস্যরা আরেকটি সরকারি হাসপাতাল থেকে এমআরআই করানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু সেখানে সিরিয়াল পেতে দেরি হওয়ায় আট হাজার টাকা খরচ করে একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে পরীক্ষাটি করান। অথচ এখানে এই সেবা পেতে খরচ হতো তিন হাজার টাকা। এক্স-রেও তিনি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে করিয়েছেন। এই রোগীর স্বজন মাসুদুর রহমান বলেন, এ ধরনের রোগী টানাহেঁচড়া করা খুব কষ্টের। তা ছাড়া খরচও অনেক বেশি হয়।

এ ছাড়া ২০০২ সালে ৩০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার একটি এক্স-রে যন্ত্র বসানো হয়। কিন্তু সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান যন্ত্রটি চালুই করতে পারেনি। এরপর ২০১০ সালে কেনা ডিজিটাল এক্স-রে যন্ত্রটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এখনো বুঝে নেয়নি। কারণ হিসেবে কর্তৃপক্ষ বলছে, কাগজপত্র অনুযায়ী এক হাজার মিলিঅ্যাম্পিয়ার এক্স-রে যন্ত্র সরবরাহ করার কথা। কিন্তু এক্স-রে যন্ত্র বসানোর পরে যন্ত্র যাচাই–বাছাই কমিটি দেখতে পায় বসানো যন্ত্রটি ৮০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার। তারপর কর্তৃপক্ষ যন্ত্রটি বুঝে নেয়নি। বছরের পর বছর এক্স-রে যন্ত্র দুটি পড়ে আছে।

আলট্রাসনোগ্রাম যন্ত্র নষ্ট হয়েছে গত বছরের নভেম্বরে। তারপর আর যন্ত্রটি চালু করা যায়নি বলে জানান এ বিভাগের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট কামরুল ইসলাম। রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগে কেবল সিটিস্ক্যান যন্ত্রটি কোনোভাবে চলছে। তবে এই যন্ত্রটিতেও সমস্যা আছে।

ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মোহিত কামাল প্রথম আলোকে বলেন, তিনি সম্প্রতি দায়িত্ব নিয়েছেন। যথাযথ কর্তৃপক্ষকে এসব সমস্যা নিয়ে চিঠি দিয়েছেন। স্বাস্থ্য ও পরিবার মন্ত্রণালয় থেকে পরিদর্শন শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। সিটিস্ক্যান যন্ত্র চালু থাকায় বিশেষ ধরনের রোগী ছাড়া তেমন অসুবিধা হয় না।