২ মাসেও রহস্যের কিনারা হয়নি

সাহাব উদ্দিন
সাহাব উদ্দিন

একই রাতে দুটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল। একটি সিলেটের ওসমানীনগরে, অপরটি সিলেট নগরের মদিনা মার্কেট এলাকায়। নিহত দুজনই পেশায় ব্যবসায়ী। ঘটনা পৃথক হলেও প্রায় অভিন্ন কায়দায় হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল। মাথা থেঁতলানো অবস্থায় নিজ বসতঘরে পাওয়া গিয়েছিল দুজনের মরদেহ।

ওসমানীনগরের হত্যাকাণ্ডের কারণ ও চারজন খুনির পরিচয় দুদিনের মধ্যে উদ্‌ঘাটিত হয়। কিন্তু নগরের মদিনা মার্কেটে ব্যবসায়ী হত্যার কারণ দুই মাসেও উদ্‌ঘাটিত হয়নি—আজ পর্যন্ত ধরা পড়েনি কেউ।

দুটি হত্যার ঘটনাই ঘটেছিল গত ৩০ জানুয়ারি রাতে। সে হিসাবে গতকাল শনিবার ঘটনার দুই মাস অতিবাহিত হয়েছে। ওসমানীনগরে খুন হন ইউনুছ আলী (২৬)। আর সিলেটের মদিনা মার্কেট খুন হন সাহাব উদ্দিন (৪০)।

ইউনুছ আলী হত্যা সম্পর্কে ওসমানীনগর পুলিশ সূত্র জানায়, ৩১ জানুয়ারি ভোরে তাজপুর কলেজ গেটসংলগ্ন এলাকার বসতঘর থেকে ইউনুছ আলীর লাশ উদ্ধার করা হয়। ইট দিয়ে তাঁর মাথা থেঁতলানো অবস্থায় ছিল। ‘মায়ের দোয়া সিট সেন্টার’ নামে অটোরিকশা ডেকোরেশন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিক ছিলেন ইউনুছ। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পাশের একটি কক্ষে বসবাস করতেন। হত্যার আলামত সংগ্রহ করে পরদিনই খুনি শনাক্ত করে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ঘটনার দুই দিনের মধ্যে খুনি শনাক্ত ও কারণ উদ্‌ঘাটিত হওয়ার বিষয়ে ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মামুন জানান, ঘটনার পর ২ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার হওয়া চারজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করেন। চারজনই এখন কারাবন্দী।

ইউনুছ হত্যাকাণ্ডের রাতেই সিলেট নগরের মদিনা মার্কেটের ফল ব্যবসায়ী সাহাব উদ্দিন (৪০) খুন হন নিজ বসতঘরে। মদিনা মার্কেট এলাকার একটি ভাড়া বাসার কক্ষে থাকতেন তিনি। ৩১ জানুয়ারি ভোরে দরজা খোলা দেখে আশপাশ এলাকার মানুষজন ঘরে ঢোকেন। দেখতে পান সাহাব উদ্দিনের মাথা থেঁতলানো। ছোপ ছোপ রক্ত পড়ছিল।

সাহাব উদ্দিনের সঙ্গে ওই কক্ষে বসবাস করতেন আরও একজন ফল ব্যবসায়ী। তাঁর নাম রহমান মিয়া। সাহাব উদ্দিনের ভাই সাজ্জাদ আহমদ বাদী হয়ে ঘটনার দিন রাতে সিলেট কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। মামলায় শুধু রহমান মিয়ার নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাতনামা আরও চার-পাঁচজনকে আসামি করা হয়। কিন্তু ঘটনার দুই মাসেও খুনের কারণ ও আসামি গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

দক্ষিণ সুরমার মোগলাবাজারের সুলতানপুর গ্রামে সাহাব উদ্দিনের বাড়ি। সিলেট নগরের পশ্চিম-উত্তর দিকের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক এলাকা মদিনা মার্কেটে ‘সাহাব উদ্দিন ফল ভান্ডার’ নামে তাঁর একটি ফলের দোকান আছে। ব্যবসার সুবাদে তিনি মদিনা মার্কেটের হাবিব মিয়ার কলোনির একটি কক্ষে ভাড়া বাসায় থাকতেন।

প্রতিবেশীসহ ব্যবসায়ীদের ধারণা, কলোনির ওই কক্ষে সাহাব উদ্দিনের সঙ্গে রহমান মিয়া নামের একজন ফল ব্যবসায়ী থাকতেন। ঘটনার পর থেকে রহমান পলাতক থাকায় প্রাথমিকভাবে তাঁকে খুনি হিসেবে ধারণা করে মামলা করা হয়েছে। তবে হত্যার কারণ উদ্‌ঘাটিত হয়নি এখনো। রহমান মিয়া নগরের আম্বরখানা এলাকায় ফলমূলের ব্যবসা করতেন।

মদিনা মার্কেট এলাকা সিলেট নগরের পশ্চিম-উত্তর দিকের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক এলাকায়। সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের পাশের এই এলাকার সন্নিকটে রয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেসরকারি মেডিকেল কলেজ এবং বিভিন্ন আবাসিক এলাকা। রয়েছে ফলের বাজার, মাছের বাজারসহ সহস্রাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। ফল ব্যবসায়ী হত্যার কারণ উদ্‌ঘাটন ও হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করার দাবিতে মদিনা মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির ব্যানারে ওই দিনই এক ঘণ্টা দোকানপাট বন্ধ রেখে প্রতিবাদ জানানো হয়।

দুই মাসের মধ্যেও খুনি ও খুনের কারণ উদ্‌ঘাটিত না হওয়ায় হতাশ সাহাব উদ্দিনের ভাই সাজ্জাদ আহমদ। হত্যার বিচার দাবির একটি ব্যানার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে সাঁটিয়ে অপেক্ষায় আছেন তিনি। সাজ্জাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘একমাত্র আসামি পলাতক থাকা অবস্থায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন বলে আমরা জেনেছি। কিন্তু এ ব্যাপারে পুলিশও কিছু নির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না। তাই আসামি গ্রেপ্তার ও হত্যার কারণ উদ্‌ঘাটিত হবে কি না, এ নিয়ে দ্বিধার মধ্যে আছি আমরা।’

ওসমানীনগরের ঘটনা দুই দিনের মধ্যে উদ্‌ঘাটন করতে সক্ষম হলো পুলিশ, আসামিও গ্রেপ্তার হলো, কিন্তু নগরের ঘটনার দুই মাস পরও কিছু হলো না—এ নিয়ে ক্ষোভ আছে মদিনা মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির নেতাদের মধ্যে।

গতকাল যোগাযোগ করলে সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানার সহকারী কমিশনার (এসি) মো. ইসমাইল বলেন, খুনি শনাক্ত হয়েছে, মামলা হয়েছে। কিন্তু খুনের কারণ উদ্‌ঘাটন জটিল আকার ধারণ করেছে। এতে গোয়েন্দা বিভাগকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গত এক সপ্তাহ হয় মামলাটি পুরোপুরি গোয়েন্দা বিভাগ তদন্ত করছে। তাঁরা আশা করছেন, সবই বের হয়ে আসবে এখন।