আগাম পেঁয়াজ তুলে ক্ষতির শিকার
পাবনার সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলায় বৃষ্টি নামার ভয়ে কৃষকেরা জমি থেকে দ্রুত পেঁয়াজ তুলে ফেলছেন। অনেক ক্ষেত্রেই এসব পেঁয়াজ শতভাগ পরিপক্ব নয় বলে কৃষকেরা জানিয়েছেন। তা ছাড়া পেঁয়াজ তোলার হিড়িকে হাটবাজারে পেঁয়াজের দাম কমে গেছে। ফলে এবার পেঁয়াজ বিক্রি করে কৃষকের উৎপাদন খরচও উঠছে না।
সংশ্লিষ্ট উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সাঁথিয়া ও বেড়ায় প্রচুর পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়ে থাকে। চলতি বছর সাঁথিয়ায় ১৬ হাজার ৯৫০ হেক্টর ও বেড়া উপজেলায় ৪ হাজার ৬২০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। অন্য যেকোনো বছরের তুলনায় দুই উপজেলাতেই পেঁয়াজের অনেক বেশি আবাদ হয়েছে। এবার উৎপাদিত পেঁয়াজের মান আর ফলনও ভালো।
পেঁয়াজচাষিরা জানান, সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলায় মূলকাটা ও হালি পদ্ধতিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়ে থাকে। মূলকাটা পদ্ধতিতে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে পেঁয়াজের আবাদ করে ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে পেঁয়াজ ঘরে তোলা হয়। অন্যদিকে হালি পদ্ধতিতে ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে পেঁয়াজের আবাদ করে মার্চ-এপ্রিলে তা ঘরে তোলা হয়। কৃষকের ঘরে এখন হালি পদ্ধতির পেঁয়াজ তোলা হচ্ছে। হালি পেঁয়াজ দীর্ঘদিন ঘরে সংরক্ষণ করা যায়। তবে সংরক্ষণ করতে হলে অবশ্যই তা পূর্ণ পরিপক্ব হতে হয়।
কৃষকেরা জানান, এক–দুই সপ্তাহ ধরে কৃষকেরা হালি পেঁয়াজ ঘরে তুলতে শুরু করেছেন। অবশ্য যেসব পেঁয়াজ কিছুটা দেরিতে লাগানো হয়েছিল, তা এখনো ঘরে তোলার উপযোগী হয়নি। আর দু–এক সপ্তাহ গেলেই দুই উপজেলার প্রায় সব জমির পেঁয়াজ পুরোপুরি পরিপক্ব হয়ে ঘরে তোলার উপযোগী হতো। কিন্তু হঠাৎ করেই কৃষকদের মধ্যে আবহাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে। গত দুদিনে দুই উপজেলায় হালকা বৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া আবহাওয়ার পূর্বাভাস থেকে অনেক কৃষক জানতে পেরেছেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আবার বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই কৃষকেরা ভয়ে দ্রুত পেঁয়াজ ওঠাতে শুরু করেছেন। এক-দুই সপ্তাহ আগে পেঁয়াজ তোলায় পেঁয়াজের ফলনে বড় ধরনের ঘাটতি দেখা না দিলেও গুণগত মানে কিছুটা সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে কৃষকেরা জানান। তবে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় যে সমস্যা দেখা দিয়েছে, তা হলো একসঙ্গে অনেক কৃষক পেঁয়াজ তোলায় বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়ে গেছে। ফলে দাম কমে গেছে। এখন পেঁয়াজ বিক্রি করে কৃষকেরা প্রত্যাশিত দাম পাচ্ছেন না।
কৃষকদের সূত্রে জানা যায়, পেঁয়াজ তোলার আগে বৃষ্টি হলে পেঁয়াজ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে পেঁয়াজের রং যেমন নষ্ট হয়, তেমনি পেঁয়াজ পচে যায়। ২০১৭ সালে পেঁয়াজ তোলার আগে ভারী বৃষ্টি হওয়ায় দুই উপজেলার বেশির ভাগ কৃষকেরই পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এরপর থেকে এখানকার পেঁয়াজচাষিরা বৃষ্টি নিয়ে শঙ্কিত থাকেন।
গত বৃহস্পতিবার এ দুই উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দুই উপজেলার কৃষকদের মধ্যেই পেঁয়াজ তোলার হিড়িক পড়ে গেছে। তাঁরা আত্মীয়স্বজনকে নিয়ে যে যার মতো পেঁয়াজ তুলছেন।
বেড়া উপজেলার বড়শিলা গ্রামের পেঁয়াজচাষি সাইদুর রহমান বলেন, ‘এরই মধ্যে দুই দিন অল্প বৃষ্টি হয়া গেছে। যদি ভারী বৃষ্টি হয়, তবে সব পেঁয়াজ শেষ হয়া যাবি। তাই সব কাজ-কাম বাদ দিয়্যা পেঁয়াজ তোলা শুরু করিছি।’
বেড়া উপজেলার মনজুর কাদের মহিলা কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আগের চেয়ে কৃষকেরা এখন সচেতন ও শিক্ষিত। অনেক কৃষকই এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করে এবং পত্রিকা পড়ে আবহাওয়ার খোঁজ রাখেন। বৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা দেখে আমাদের এলাকার কৃষকদের মধ্যে পেঁয়াজ তোলার হিড়িক পড়ে গেছে।’
এদিকে দুই উপজেলার বিভিন্ন পেঁয়াজের হাট ঘুরে প্রচুর নতুন পেঁয়াজের আমদানি দেখা গেছে। হাটে ওঠা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৬৫০ টাকা মণ দরে। কৃষকেরা জানান, এই দামে পেঁয়াজ বিক্রি করে তাঁদের উৎপাদন খরচও উঠছে না। এবার প্রতি মণ পেঁয়াজের উৎপাদনে তাঁদের ৭০০ টাকার বেশি খরচ হয়েছে বলে কৃষকেরা জানান।
বেড়া পৌর এলাকার করমজা হাটের নিউ ইছামতী কাঁচামালের আড়তের ব্যবস্থাপক আবু সাঈদ বলেন, গত বছর এই সময়ে প্রতি মণ নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে এক হাজার টাকার কাছাকাছি। অথচ এবার ৫৫০ থেকে ৬৫০ টাকা।
সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা যথাক্রমে ঈসমাইল হোসেন ও রঞ্জন প্রামাণিক জানান, স্বাভাবিকভাবেই কৃষকেরা এখন পেঁয়াজ ঘরে তুলছেন। এবার পেঁয়াজের ফলন ও মান ভালো। তাই দ্রুত পেঁয়াজ তোলা হলেও পেঁয়াজের কোনো সমস্যা নেই।