>
- ফুলবাড়িয়া ও সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
- ত্রিশালে নির্বাচন স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট এ আদেশ দেন।
- ৩১ মার্চ এ নির্বাচন হবে।
৩১ মার্চ ময়মনসিংহের ১০টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ১০টি উপজেলার মধ্যে সাতটিতে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীরাও চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ওই সাতটি উপজেলায় বিদ্রোহীদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা।
ময়মনসিংহের ১৩টি উপজেলার মধ্যে তারাকান্দা ছাড়া বাকি ১২টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে গফরগাঁও উপজেলায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। কাজেই গফরগাঁও উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। এ ছাড়া ফুলবাড়িয়া ও সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া ত্রিশালে নির্বাচন স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট এ আদেশ দেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন। নির্বাচন কমিশনের উপসচিব আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত আদেশের চিঠি গত বৃহস্পতিবার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শক্তিশালী কোনো বিরোধী দল অংশ নেয়নি। তাতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিজয় অনেকটা নিশ্চিত ছিল। কিন্তু বিদ্রোহীরা থাকায় উপজেলাগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের আভাস মিলছে। এ ছাড়া বিদ্রোহীদের নির্বাচন থেকে সরানোর জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে দলীয় কোনো চাপ নেই। এ সুযোগে বিভিন্ন উপজেলায় বিদ্রোহীরা দাপটের সঙ্গে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। এই জেলার ধোবাউড়া, ফুলপুর, গৌরীপুর, ঈশ্বরগঞ্জ, নান্দাইল, ভালুকা ও মুক্তাগাছা উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের সঙ্গে নিজ দলের বিদ্রোহীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ধোবাউড়ায় প্রিয়তোষ বিশ্বাস বাবুল আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী। এ উপজেলায় বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন চারজন। তাঁরা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান, উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মনজু মৃধা, উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান সাগর ও যুগ্ম আহ্বায়ক ডেভিড চিসিম রানা। চারজন বিদ্রোহী থাকায় দলীয় প্রার্থী প্রিয়তোষ বিশ্বাস বিপাকে পড়েছেন। তবে তিনি দলীয় ভোট পেয়ে নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
ফুলপুরে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হাবিবুর রহমান উপজেলা পরিষদের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বিদ্রোহী প্রার্থী আতাউল করিম। বিদ্রোহী প্রার্থীকে বড় চ্যালেঞ্জ মনে করছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। গত মঙ্গলবার উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ হাকিম সরকার স্বাক্ষরিত চিঠির মাধ্যমে আতাউল করিমকে ফুলপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে এ বহিষ্কার মানেন না আতাউল ও তাঁর সমর্থকেরা।
গৌরীপুরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিধু ভূষণ দাসের প্রতিদ্বন্দ্বী দুই বিদ্রোহী। তাঁরা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলী আহাম্মদ খান পাঠান ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন খান। দুই বিদ্রোহী প্রার্থী সরব হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী।
মুক্তাগাছায় দলীয় প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর পাল্টাপাল্টি অভিযোগে নির্বাচনী উত্তাপ ছড়াচ্ছে। দলীয় প্রার্থী বিল্লাল হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘন ও নিজের কর্মীদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল হাই আকন্দের। আবদুল হাই আকন্দ পৌরসভার দুইবারের সাবেক মেয়র। অন্যদিকে বিল্লাল হোসেন একাধিকবার স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিলেও জয়ী হতে পারেননি। এবারও বিল্লালের সামনে বড় বাধা বিদ্রোহী প্রার্থী।
নান্দাইলে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবদুল মালেক চৌধুরীর অভিযোগ, ওই আসনের বর্তমান সাংসদ আনোয়ারুল আবেদিন খান বিদ্রোহী প্রার্থী হাসান মাহমুদের পক্ষে কাজ করছেন। সম্প্রতি আবদুল মালেক ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন। তবে সাংসদ অভিযোগ অস্বীকার করেন।
ঈশ্বরগঞ্জে দলীয় প্রার্থী মাহমুদ হাসানের প্রতিদ্বন্দ্বী বিদ্রোহী প্রার্থী বদরুল আলম ও ভালুকায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী গোলাম মোস্তফার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আছেন বিদ্রোহী প্রার্থী মহিউদ্দিন।
ফুলবাড়িয়া ও সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। ফুলবাড়িয়ায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন আবদুল মালেক সরকার ও সদরে আশরাফ হোসাইন। এ ছাড়া গফরগাঁও উপজেলায় তিনটি পদেই প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, নীতিগতভাবে আওয়ামী লীগের কর্মীদের নৌকা প্রতীকের নির্বাচন করা উচিত। তাঁরা তা–ই করছেন। স্বতন্ত্র হিসেবে অংশ নেওয়া দলীয় ‘বিদ্রোহী’রাও নিজেদের মতো কাজ করছেন। দলীয়ভাবে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ নেই।