আন্দোলনের মুখে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দুঃখ প্রকাশ
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে অবশেষে নিজের অবস্থান থেকে সরে এসেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এস এম ইমামুল হক। শিক্ষার্থীদের নিয়ে করা তাঁর মন্তব্যের জন্য তিনি দুঃখপ্রকাশ করেছেন। গতকাল শুক্রবার রাত ১০টার দিকে ই-মেইলে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি এই দুঃখপ্রকাশ করেন। উপাচার্যের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ এই বিবৃতি গণমাধ্যমে পাঠান।
ওই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ‘২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং সোসাইটি কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠানে আমার প্রদত্ত বক্তব্যের একটি বাক্যকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে কিছু ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের রাজাকার সম্বোধন করিনি বরং বলেছি, যারা মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদ্যাপনের অনুষ্ঠানে বাধা সৃষ্টি করতে চায়, তাদের এহেন কার্যক্রম রাজাকার সদৃশ। ওই শব্দটি আমি কোনোভাবেই আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে বলিনি। এরপরও যদি আমার ওই বক্তব্যে কোনো শিক্ষার্থী মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে থাকে, তবে তার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চলমান রাখার স্বার্থে আমি সব শিক্ষার্থীর সহযোগিতা কামনা করছি।’
২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও নগরের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সম্মানে চা-চক্র ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে এতে শিক্ষার্থীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে ও পাঁচ দফা দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। ওই দিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি আয়োজিত আন্তবিভাগীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে উপাচার্য এস এম ইমামুল হক আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে অভিহিত করেন বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তবে শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করার অভিযোগ শুরু থেকেই অস্বীকার করে আসছিলেন উপাচার্য।
শিক্ষার্থীদের অব্যাহত বিক্ষোভের মুখে গত বুধবার রাত তিনটার দিকে গণমাধ্যমে পাঠানো বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার হাসিনুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ঘোষণা এবং শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশের কথা জানানো হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। এ সময় তাঁরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিও জানান। বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি হল থেকে শিক্ষার্থীদের বের করে দেওয়ার চেষ্টা করলেও শিক্ষার্থীরা প্রতিরোধ গড়ে তোলায় তা সম্ভব হয়নি।
এদিকে উপাচার্য দুঃখ প্রকাশ করার পরও শিক্ষার্থীরা তাঁর পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আজ শনিবার সকালে আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থী প্রথম আলোকে বলেন, ‘উপাচার্য গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এটা আমরা শুনেছি। কিন্তু আমাদের দাবি তাঁকে শিক্ষার্থীদের মাঝে আসতে হবে এবং প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে তাঁকে পদত্যাগ করতে হবে। কারণ তিনি শিক্ষার্থীদের যে মানসিক কষ্ট দিয়েছেন, তাতে তিনি নৈতিকভাবে এই পদে থাকার অধিকার হারিয়েছেন। এ জন্য আজ বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ অব্যাহত থাকবে।’