মশা নিয়ন্ত্রণে ক্রাশ প্রোগ্রাম পরিচালনার পাশাপাশি একই সময়ে নগরের নালা–নর্দমা ও জলাবদ্ধ অংশগুলো আবর্জনামুক্ত করার কার্যক্রম চালু রাখার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। একই সঙ্গে মশক নিয়ন্ত্রণে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে আলাদা আলাদা কমিটি গঠনের জন্য কাউন্সিলরদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
গতকাল শুক্রবার মশক নিয়ন্ত্রণ ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম সম্পর্কিত এক মতবিনিময় সভায় মেয়র এই নির্দেশ দেন। মহাখালীর সিটি করপোরেশন মার্কেটে আয়োজিত এই সভায় মেয়র বলেন, ‘পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের আমি বলতে চাই, ক্রাশ প্রোগ্রামের সঙ্গে সঙ্গে সকল ড্রেন, সকল কালভার্টসহ যেখানে যেখানে পানি জমে আছে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আপনারা তা পরিষ্কার করবেন। বর্ষা আসছে। এই কাজটা আমাদের দ্রুততার সঙ্গে করতে হবে।’
সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ও মশক নিধনে যুক্ত শতাধিক কর্মীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এই সভায় মেয়রের পাশাপাশি ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেসবাহুল ইসলাম, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাকির হাসান, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দেওয়ান আবদুল মান্নান, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জিন্নাত আলী ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মফিজুর রহমান বক্তব্য দেন।
বক্তব্যের শুরুতে সিটি করপোরেশনের মশক নিধন কর্মীদের উদ্দেশে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আপনারা আপনাদের দায়িত্ব পালন করেন। আপনাদের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য যা যা করণীয় তা আমি করব। কিন্তু ভাইয়েরা কাজে ফাঁকি দেওয়া যাবে না। আমি ফাঁকিবাজি পছন্দ করি না।’ মশক নিধন কর্মীদের নিয়মিত কার্যক্রম নজরদারিতে রাখা হবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আজকের পরে আমি যেকোনো জায়গায়, যেকোনো সময় চলে যাব। যদি নিয়মের কোনো ব্যত্যয় ঘটে, আমি কঠোর হতে বাধ্য হব।’
মশার উপদ্রব থেকে মুক্তি পেতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার পরামর্শও দেন মেয়র। করপোরেশনের কর্মকর্তা ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা সবাইকে ডাক দিন। এই মশা শুধু আপনাকে বা আমাকে কামড় দেবে না। সবাইকে কামড় দেবে। মশা কিন্তু বুঝবে না কে হিন্দু, কে বৌদ্ধ, কে মুসলমান। আসুন, আমরা ঢাকাকে মশামুক্ত করি। সমস্যা আমাদের অনেক। কিন্তু আমাদের যা কিছু আছে তা নিয়েই আমরা ঝাঁপিয়ে পড়ব। লোক দেখানো ফগিং মেশিন মারা চলবে না। এটাকে কার্যকর করতে হবে।’
এ ছাড়া মশক নিয়ন্ত্রণ ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম নিয়মিত পর্যবেক্ষণের আওতায় রাখার জন্য ওয়ার্ড কাউন্সিলর, এলাকার গণমাধ্যমকর্মী, শিক্ষক প্রতিনিধি, ধর্মীয় নেতা, আবাসিক এলাকার প্রতিনিধি, মশক সুপারভাইজার ও ওয়ার্ড সচিবের সমন্বয়ে আলাদা আলাদা কমিটি গঠন করার ঘোষণাও দেন মেয়র।
এদিকে মেয়রের বক্তব্যে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মশার উপদ্রবের বিষয়টিও উঠে আসে। সম্প্রতি বিমানবন্দরের যাত্রী দর্শনার্থীসহ অন্যদের মশার উৎপাত থেকে রক্ষার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা নিয়ে রুলও জারি করেছেন উচ্চ আদালত। এ বিষয়ে মেয়র বলেন, ‘বিদেশিরা আমাকে ফোন করে বিমানবন্দরে মশার উপদ্রবের কথা বলেন। এটা লজ্জার। বিমানবন্দর এলাকাটি সিভিল এভিয়েশনের আওতাভুক্ত হলেও আমরা সেখানে কাজ করতে চাই। কারণ, মশা কোনো সীমানা মানে না। বিমানবন্দরের ভেতরটাও আমাদের পরিষ্কার রাখতে হবে।’