আ.লীগ নেতার দখল থেকে পুকুর মুক্ত করলেন ইউএনও
>.চলতি বছরে পুকুরটি ইজারা দেওয়ার পদক্ষেপ নিচ্ছে উপজেলা প্রশাসন
. এ নিয়ে ইউএনও ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় গত বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুর রহমান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হকের দখলে থাকা সরকারি পুকুর মুক্ত করেছেন। আট বছর ধরে তিনি ওই পুকুরটি দখলে রেখেছিলেন।
চলতি বছরে পুকুরটি ইজারা দেওয়ার পদক্ষেপ নিচ্ছে উপজেলা প্রশাসন। এ নিয়ে ইউএনও আরিফুর রহমান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
উপজেলা প্রশাসন ও ভূমি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ১৪টি জলমহাল হিসেবে ১৪টি পুকুর রয়েছে। প্রতিবছর উপজেলা ভূমি কার্যালয় থেকে পুকুরগুলো ইজারা দেওয়া হয়। কিন্তু ২০১০ সাল থেকে বাঘবেড় ইউনিয়নের সন্ন্যাসীভিটা এলাকায় ২ একর ৪২ শতাংশের পুকুরটি খাস কালেকশনের নামে উপজেলা দক্ষিণ রানিগাঁও গ্রামের মো. ফজলুল হক দখলে নেন। ২০১৬ সালে ফজলুল হক উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান।
২০১০ সাল থেকে তিনি পুকুরটি দখলে রেখে মাছ চাষ করছেন। ১৫ থেকে ২০টি ভূমিহীন পরিবার ২০–২৫ বছর আগে থেকে ওই পুকুরপারে ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছিল।
পুকুরের পানির চাপে পাড় ভেঙে যাওয়ায় তাদের বাড়িঘর ভেঙে যাওয়ার মুখে পড়েছে। ওই ভূমিহীন পরিবারগুলো এই পুকুরটি ইজারা নিয়ে মাছ
চাষ করতে চায়।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ইউএনও আরিফুর ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) লুবনা শারমিন সন্ন্যাসীভিটা এলাকায় গিয়ে ওই পুকুরটি আওয়ামী লীগ নেতার কাছ থেকে মুক্ত করেন। পরে তাঁরা এই পুকুরটি চলতি বছর থেকে ইজারা দেওয়া সিদ্ধান্ত নেন।
গতকাল শনিবার সকালে পুকুরপাড়ে গিয়ে কথা হয় ওই ভূমিহীন পরিবারগুলোর সদস্যদের সঙ্গে। এ সময় তাঁরা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই পুকুরে আওয়ামী লীগ নেতা ফজলুল হক মাছ চাষ করছেন। এ সময় তাঁরা পুকুরটি ভূমিহীন পরিবারের নামে সরকারিভাবে ইজারা দেওয়ার অনুরোধ জানান।
ভূমিহীন শ্রমিক সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ফজলুল ভাই দীর্ঘদিন ধরইরা সরকারি লিজ নেওয়ার কতা কইয়া পুকুরে মাছ চাষ করতাছেন। পানির চাপে আমগর বাড়িঘর ভাঙা যাইতেছে। ওই দিন ইউএনও স্যার পুকুরে আইছিল। তহন জানলাম এত দিন অবৈধভাবে পুকুরে মাছ চাষ অইছে। সরকারিভাবে পুকুরডা ভূমিহীন পরিবারগরে দিলে আমগর বিরাট উপকার অইতো।’
ভূমিহীন আছিয়া খাতুন বলেন, ‘মাছ চাষ করায় পুকুরের পাড় ভাইঙা অহন বাড়িগর ভাঙতাছে। ফজলু ভাই আমগেও কইছে এই পুকুর সরকারের কাছ থাইকা ইজারা নেওয়া অইছে।
অহন হুনতাছি অবৈধভাবে দখল কইরা মাছ চাষ করছে। যদি সরকারি সহযোগিতায় আমগেও পুকুরডা ইজারা দিত, তাইলে আমগর মতো ভূমিহীনদের লাইগা বিরাট উপকার অইতো।’
এ ব্যাপারে জানতে ফজলুল হকের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউএনও আরিফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পুকুরটি অবৈধভাবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ভোগদখল করছিলেন।
অবৈধ দখল মুক্ত করতে সরেজমিনে গিয়ে দ্রুত পুকুরের মাছ সরাতে বলা হয়েছে। চলতি বছর থেকে পুকুরটি ইজারা দেওয়া হবে।’