'উপজেলা নির্বাচন একেবারে পারফেক্ট হবে, মনে করি না'
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘উপজেলা নির্বাচন একেবারে পারফেক্ট হবে, এটা আমি মনে করি না। পারফেক্ট বিষয়টি ভিন্ন। কোনো বিষয়কে পারফেক্ট বলা ঠিক না, ভুলত্রুটি নিয়েই আমরা এগিয়ে যাই।’
আজ শনিবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের গণতন্ত্রকে পুরোপুরি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার আগে কিছু কিছু ভুলত্রুটি আমাদের অতিক্রম করতে হবে। এটা থাকবে এবং এটা নিয়ে এগোতে হবে। নির্বাচন করতে করতে একসময় দেখা যাবে প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্র রূপ নিয়েছে। যে কারণে এ ধরনের ত্রুটি-বিচ্যুতির বিষয়গুলো কারও নজরে ততটা আসবে না।’
সিটি উপনির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, উপজেলা নির্বাচন হচ্ছে। যাঁরা এসব অপবাদ দেন, তাঁদের সরেজমিন গিয়ে উপজেলা নির্বাচন দেখতে বলুন। তারপর তাঁদের ধারণা কত অমূলক, অলীক, এর প্রমাণ পাবেন। তিনি বলেন, সিটি উপনির্বাচনের দিন সারা দিন মেঘলা আকাশ থাকার কারণে ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। তবে বিকেলে মেঘলা আকাশ না থাকায় ভোটার উপস্থিতি বেড়েছে। আকাশ মেঘলা, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে যাঁরা আসতে পারেননি, দুপুরের পর থেকে তাঁরা আসতে শুরু করেন।
উপজেলা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীর বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ঢাকা সিটি করপোরেশন উপনির্বাচনে অনেকের আশঙ্কা ছিল, প্রতিদ্বন্দ্বিতা উন্মুক্ত করে দেওয়ার পর সংঘাত-সহিংসতা হবে। কিন্তু এ পর্যন্ত কোথাও কোনো খারাপ ঘটনা ঘটেনি। তিনি বলেন, ৩৬টি ওয়ার্ডের কোথাও কোথাও ১০ জন করে প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। তবু কোথাও কোনো সংঘর্ষ হয়নি।
বিএনপির আমলের প্রসঙ্গ এনে মন্ত্রী কাদের বলেন, ‘সিটি নির্বাচন নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেন। সাংবাদিকদের মনে হয় মনে আছে, বিএনপিরও ভুলে যাওয়ার কথা নয়। ২০০১ সালে জাতীয় নির্বাচনের পরপরই সাদেক হোসেন খোকা মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়, তখন তো কাউকে মনোনয়ন জমা দিতে দেওয়া হয়নি। এত বড় সিটি এখানে কিন্তু কেউই মনোনয়নপত্র দিতে পারেননি। এবার তো কোনো বাধা ছিল না। বিএনপি যদি চাইত, তারা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারত। জাতীয়, স্থানীয় সরকার কোনো নির্বাচনে আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কাউকে বাধা দিইনি। এখানেও কোনো বাধা ছিল?’
নিজেদের দলের বাইরের ব্যক্তিকে মেয়র হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আতিকুল ইসলামকে যখন মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তখন তাঁকে ওন করেই দেওয়া হয়েছে। হয়তো নেতা ছিলেন না, সমর্থক ছিলেন। আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিলেন, অন্য কোনো দল কখনো করেননি। তিনি বিজিএমইএ নির্বাচন করতেন, সেখানেও আওয়ামী লীগ প্যানেল থেকে তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন। মেয়র আনিসকেও তো মনোনয়ন দিয়েছিলাম, তিনিও তো আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন না।’
ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের এক মন্তব্যের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ধ্বংসের পথে তাঁদের বিধ্বংসী রাজনীতি। ছদ্মবেশী, বিধ্বংসী যে রাজনীতি তাঁরা করেন, সেই বিধ্বংসী রাজনীতি ধ্বংসের পথে আরেক ধাপ এগিয়ে। নির্বাচনের ইতিহাস বলে যারা বয়কট করবে, তাদের কিন্তু জনবিচ্ছিন্নতা, রাজনৈতিক ভাগ্য অনিবার্য হয়ে গেল। তিনি বলেন, বিএনপিকেও এ কথা বলি, গত সাধারণ নির্বাচনে জনমতের হাওয়াটা তাদের অনুকূলে থাকত, তাহলে এর প্রভাবটা তাদের ফলাফলে পড়ত। জনমত যেদিকে থাকে, নির্বাচনের ফল সেদিকেই টার্ন করবে, এটা নির্বাচনের ইতিহাস।’
দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাঁরা জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে কাদের বলেন, ‘পরবর্তী কার্যনির্বাহী কমিটির মিটিংয়ে বিষয়টি আলোচনা করা হবে। কার্যনির্বাহী কমিটির বাইরে অন্য কোনো ফোরামে এই সিদ্ধান্ত হতে পারে না। সেখানে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হবে, এখন এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।’
জাতীয় পার্টির বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জাতীয় পার্টি বিরোধী দল হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার যে অঙ্গীকার করেছিল, সিটি নির্বাচনে সেটির কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। বিরোধী দল যদি শক্তভাবে বিরোধিতা করত, তাহলে নির্বাচনটা আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতো। সংসদের ভেতরে ও বাইরের উভয় রাজনৈতিক দলকে আমরা শক্তিশালী দেখতে চাই।’
এ সময় আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, সদস্য এস এম কামাল হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।