ইয়াবা পাচারে বাবুর্চি-সাপুড়ে

>
  • বাবুর্চি, সাপুড়ে, পর্যটকসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ বেশি টাকার লোভে ইয়াবা পাচার করছেন
  • সাপের বাক্সে করে ইয়াবা পাচারের সময় আবুল হোসেন নামের এক ব্যক্তি ধরা পড়েন

বাবুর্চি, সাপুড়ে, পর্যটকসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষকে ব্যবহার করে ইয়াবা পাচার চলছে। তল্লাশি অভিযান জোরদার হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজর এড়াতে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা এই কৌশল নিয়েছেন। মাঝেমধ্যে কিছু চালান ধরা পড়লেও বেশির ভাগই অধরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে চট্টগ্রাম হয়ে সারা দেশে ইয়াবা পাচার হয়ে থাকে। গত বছরের মে মাস থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ পথে অভিযান জোরদার করলে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা অন্য কৌশল বেছে নেন।

৪৪ বছর বয়সী ওমর ফারুক। ঢাকার ধামরাইয়ের হরিদাসপুর ধোপের বাড়ি জামে মসজিদে ১৫ বছর ইমামের দায়িত্ব পালন করেছেন। পাশাপাশি ওই এলাকায় হাফেজিয়া নুরানি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। সেখানে পড়ত এক ইয়াবা ব্যবসায়ীর ছেলে। তিনিই ফারুককে ইয়াবা ব্যবসার প্রস্তাব দেন। তাঁর কথামতো গত ছয় মাসে চারটি চালান কক্সবাজার থেকে ঢাকায় নিয়ে যান ফারুক। প্রতিটি চালানের জন্য আসা-যাওয়া খরচ বাদে তিনি পান ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। ১৩ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী একটি বাসে তল্লাশি চালিয়ে ইমাম ফারুককে গ্রেপ্তারের পর কোতোয়ালি থানার পুলিশ এসব তথ্য জানতে পারে। তাঁর কোমরে ও পাঞ্জাবির পকেটে বিশেষ কৌশলে রাখা ৬ হাজার ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করা হয়।

ফারুকের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার বলেন, লোভে পড়ে তাঁর স্বামী এ পথে পা বাড়াতে পারেন। ধরা পড়ার আগে তিনি কিছুই জানতেন না। জেল থেকে ছাড়া পেলে তাঁকে এ কাজ আর করতে দেবেন না।

গত ২৬ জানুয়ারি নগরের মইজ্জ্যার টেক এলাকায় ইয়াবা পাচারের সময় এনায়েত উল্লাহ নামে মসজিদের এক ইমামকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁর পেট থেকে ২ হাজার ইয়াবা বড়ি বের করা হয়। নগরের চন্দনপুরা শাহি জামে মসজিদের খতিব মাওলানা হেলাল উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, খারাপ কাজের জন্য দুনিয়াতে শাস্তি তো আছেই। পরকালের ভয়াবহ শাস্তির কথাও মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেন ইমামেরা। এতে অনেক মানুষ খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকেন। দুঃখের বিষয়, কিছু ইমাম নামধারী ব্যক্তি খারাপ কাজে জড়িয়ে পড়ছেন। প্রকৃত ইমাম শত অভাবে থাকলেও অন্যায় পথে পা বাড়াবেন না।

সাপুড়ে সেজে সাপের বাক্সে করে ইয়াবা পাচারের সময় আবুল হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে গত ২৫ জানুয়ারি গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় তাঁর
কাছ থেকে ৫ হাজার ইয়াবা বড়ি জব্দ করা হয়। গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর স্টেশন রোড এলাকা থেকে ৬ হাজার ৮০০ ইয়াবাসহ দুই মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। তাঁরা বাবুর্চি সেজে মাদক পাচার করে আসছিলেন। ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যটকের বেশে ইয়াবা পাচারের সময় আটজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

র‍্যাব-৭ চট্টগ্রামের অধিনায়ক লে. কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে র‍্যাব কঠোর অবস্থানে থাকায় পাচারকারীরা অভিনব কৌশলে সমাজের ভিন্ন পেশার লোকজনকে লোভে ফেলে পাচারে ব্যবহার করছে। যত কৌশলই নেওয়া হোক। কেউ পার পাবে না।