প্রার্থীদের প্রচারে ঢিমেতাল, ভোটাররাও আগ্রহী নন
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র উপনির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার গত রোববার থেকে শুরু হয়েছে। প্রচার চলবে আরও ১০ দিন। চার দিনে প্রচার জমে ওঠেনি। দু-একজন প্রার্থী ছাড়া কাউকে প্রচার চালাতে দেখা যায়নি।
মেয়র প্রার্থীদের পোস্টারও চোখে পড়েনি। ভোটাররা বলছেন, জাতীয় নির্বাচন দেখে তাঁরা সিটি উপনির্বাচন নিয়ে আগ্রহ পাচ্ছেন না। যে কারণে নির্বাচনী আমেজ নিয়েও তাঁরা চিন্তিত নন।
তিন দিন সরেজমিনে ঢাকার বাড্ডা থেকে গুলশান-১ নম্বর হয়ে গুলশান-২, বনানী, মহাখালী ও মোহাম্মদপুর ঘুরে কোথাও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন উপনির্বাচনের প্রচার দেখা যায়নি। কোনো মেয়র প্রার্থীর প্রচারের মাইকও এসব এলাকায় পাওয়া যায়নি। তবে বাড্ডার দুটি জায়গায় নৌকার প্রার্থী আতিকুল ইসলামের ২০ থেকে ২৫টি পোস্টার দেখা গেছে। কারওয়ান বাজার এলাকায় প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টির (পিডিপি) প্রার্থী শাহীন খানের প্রচারের মাইক দেখা গেছে। অন্য মেয়র প্রার্থীদের কোনো কার্যক্রম দেখা যায়নি।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রতীক বরাদ্দের পর গত সোমবার দুটি মাজার জিয়ারত করার মধ্য দিয়ে নৌকার প্রার্থী আতিকুল ইসলাম তাঁর নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন। ওই দিন তিনি মিরপুর শাহ আলী মাজার এলাকা, বালিকা বিদ্যালয় শপিং কমপ্লেক্স, শাহ আলী মার্কেট কাঁচাবাজার এবং ডিএনসিসি সুপার মার্কেট এলাকার ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে দোয়া ও ভোট চান। এরপর থেকে তিনি প্রতিদিনই ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করছেন। গণসংযোগের বাইরে প্রচারে তাঁরও তেমন কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি।
নির্বাচনী প্রচারের বিষয়ে নৌকার প্রার্থী আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিনি প্রতিদিনই গণসংযোগ করছেন। আজ নিকুঞ্জ, কচুক্ষেত ও সাঁতারকুল এলাকায় গণসংযোগ করেছেন। ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া পেয়েছেন, নির্বাচনে জয়ের বিষয়ে তিনি অনেক আশাবাদী।
পোস্টার ও মাইক কম ব্যবহারের বিষয়ে আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি শব্দদূষণ করতে চাই না। শব্দদূষণ কমাতে মাইকের ব্যবহার কম করার পক্ষে। আজকাল ঢাকা শহরের মানুষ বাইরের হর্নের শব্দে অস্থির, সে কারণে মাইকের কম ব্যবহার করছি। আর পোস্টার ব্যবহার করে শহর নোংরা করতে চাই না। আমার পোস্টারে কোনো পলিথিন নেই, অরগানিক পোস্টার। আর পোস্টার টাঙানো হয়েছে পাটের দড়ি দিয়ে, যেন পরিবেশের কোনো ক্ষতি না হয়। একটি সবুজ ঢাকার জন্য এমন উদ্যোগ।’
প্রচারের বিষয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থী শাফিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিদিনই তিনি গণসংযোগ করছেন। যতটুকু পারছেন, গণসংযোগ করছেন। আগামীকালও গণসংযোগ করবেন। তিনি বলেন, জনগণের কাছ থেকে তিনি আশাব্যাঞ্জক সাড়া পাচ্ছেন। নির্বাচনী প্রচারে পোস্টার টাঙানো ও মাইকিংয়ের বিষয়ে তেমন কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না, এমন প্রশ্নের জবাবে শাফিন আহমেদ বলেন, ‘যতটুকু পারছি করছি। এখনো তো সময় আছে, হয়ে যাবে।’
প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টির (পিডিপি) প্রার্থী শাহীন খান। নির্বাচন নিয়ে তিনি আশাবাদী, তবে তাঁর অভিজ্ঞতা হতাশাজনক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মানুষের মনে আগ্রহ নেই, এটা হচ্ছে মূল। অনেকে জানেই না যে কী নির্বাচন হচ্ছে। আমাদের সিইসি (প্রধান নির্বাচন কমিশনার) বলেছেন ৩০ (জাতীয় সংসদ নির্বাচন) তারিখের মতো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, ভোট চাইতে গেলে মানুষ এ কথা বলে হাসিঠাট্টা করে। মানুষ বলে, ভোট তো আগের রাতেই হয়ে যায়।’ তবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট হলে তিনি জয়ী হবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।
উত্তর সিটি উপনির্বাচনে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আবদুর রহিম। তিনি শুক্রবার ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। এখন থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর।
প্রচারের বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুর রহিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা প্রচার শুরু করেছি। ইশতেহার ঘোষণা হয়েছে।’ তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত যে পরিবেশ, তাতে তিনি ভালোভাবে একটি নির্বাচন করতে পারবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন।
উত্তর সিটির বিভিন্ন এলাকার ভোটাররা বলছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ দেখে তাঁরা এই নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের আগ্রহ বোধ করছেন না। এ ছাড়া এই নির্বাচনে বিএনপি নেই, আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছাড়া অন্য কোনো মেয়র প্রার্থী রাজনৈতিকভাবে পরিচিত নন। যে কারণে উত্তর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর ‘জয়’ অনেকটা ‘সুনিশ্চিত’। এমন ধরনের নির্বাচন নিয়ে খুব বেশি উন্মাদনার কিছু নেই। আর ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়া যাবে কি না, এ নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন কয়েকজন ভোটার।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজয়ের পর উত্তর সিটি করপোরেশন উপনির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। উপনির্বাচনে দলটির কোনো প্রার্থী নেই। এ ছাড়া অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থীও রাজনৈতিকভাবে তেমন পরিচিত না হওয়ার কারণে মানুষের মধ্যে তেমন কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না।
মহাখালী এলাকার একজন ব্যবসায়ী আয়নাল মিয়া। তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে চিন্তাভাবনা করে লাভ কী? যিনিই নির্বাচিত হন, তিনিই সড়ক-ফুটপাত পরিষ্কারের কথা বলে তাঁর মতো ছোট ছোট দোকানি উচ্ছেদ করেন, এ জন্য নির্বাচন নিয়ে তিনি কোনো আগ্রহ পান না।
বনানী এলাকার একজন ভোটার মো. লোকমান সরদার বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে এখন আর উৎসবের কিছু নেই। জাতীয় নির্বাচনে যা হলো, এরপর আর ভোট দেওয়ার আশা করে লাভ নেই। ভোটকেন্দ্রে গিয়ে লাভ নেই, গিয়ে দেখা যায় ভোট দেওয়া হয়ে গেছে।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাসেম গত রোববার প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাসেম বলেন, ভোটের ৩২ ঘণ্টা আগে প্রচার বন্ধ করতে হবে। অর্থাৎ ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টা পর্যন্ত প্রচার চালাতে পারবেন প্রার্থীরা। ২৮ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।