'সোনার বাংলার স্বপ্ন পূরণে মেধাবী মানুষ প্রয়োজন'
‘আমাদের সন্তানেরা যত বিষয়ে জানে, বোঝে ও চিন্তা করে, তার ধারে-কাছেও আমরা অভিভাবকেরা যাই না। এ অনুষ্ঠান অভিভাবকদের মনে এ ধারণা জন্মাবে যে শুধু ভালো ছাত্র হওয়া, ভালো রেজাল্ট করা কোনো মানুষের মূলমন্ত্র হতে পারে না। তাকে সব বিষয়ে পারদর্শী হতে হয় এবং মানুষের মতো মানুষ হতে হয়।’
গতকাল শুক্রবার ফরিদপুর আঞ্চলিক গণিত উৎসবে যোগ দেওয়া শিক্ষার্থীদের চোখে, মুখে ও আচরণে উদ্দীপনার ছবি দেখে এ উপলব্ধি হয়েছে বলে জানান সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের জীববিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক জীবন কৃষ্ণ সাহা। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘সোনার বাংলাদেশের স্বপ্ন সার্থক করতে হলে মেধাবী মানুষ প্রয়োজন। যার জোগান প্রতিবছর দিয়ে যাচ্ছে গণিত উৎসব।’
‘গণিত শেখো, স্বপ্ন দেখো’ স্লোগানকে সামনে রেখে গতকাল দিনভর ফরিদপুর উচ্চবিদ্যালয়ে আঞ্চলিক গণিত উৎসবের আয়োজন করা হয়। গণিতের ভীতি দূর করে গণিতের প্রতি ভালোবাসার উৎসবে দিনভর মেতে ছিল শিক্ষার্থীরা।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে উৎসবের উদ্বোধন করেন ফরিদপুর উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক শামীমা বেগম। একই সময়ে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন ফরিদপুর ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজার শেখ সাহাবুদ্দিন এবং আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়ার্ডের পতাকা উত্তোলন করেন প্রবীণ গণিত শিক্ষক জগদীশ চন্দ্র ঘোষ।
উদ্বোধন ঘোষণা করে শামীমা বেগম বলেন, ‘গণিত আমাদের স্বপ্ন দেখায়, গণিত আমাদের নিজেকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার পথ দেখায়। আমরা স্বপ্ন দেখতে চাই জেগে জেগে। যাতে সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারি। গণিত উৎসব আমাদের মগজের কোটরে সে স্বপ্নের বীজ বপন করে দেয়।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিটের একটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর গণিতের গানের মাধ্যমে শুরু হয় দ্বিতীয় আয়োজন। শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব।
‘জ্যামিতির সর্বশেষ আবিষ্কার কী’, ‘মেশিনে ওজনের পাশাপাশি দ্রব্যের মূল্য কীভাবে বলা হয়’, ‘শূন্য দিয়ে কোনো সংখ্যা গুণ করলে গুণফল শূন্য হয় কেন’, ‘ঘড়ির কাঁটা ডান দিকে না ঘুরে বাঁ দিকে ঘুরলে কী এমন ক্ষতি হতো’-এমন নানা বুদ্ধিদীপ্ত, চমকপ্রদ ও চিত্রাকর্ষক প্রশ্নে শিক্ষকদের ব্যতিব্যস্ত করে রাখে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের জীববিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক জীবন কৃষ্ণ সাহা, রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আমিমুল এহসান, গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক পরিমল কুমার কুন্ডু, সহকারী অধ্যাপক শহীদুল রহমান, পদার্থবিদ্যা বিভাগের কৃষ্ণ গোপাল সাহা, সরকারি ইয়াছিন কলেজের গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এস এম আসাদুজ্জামান ও সরকারি সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক সুকান্ত কুমার দে।
সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ফরিদপুর শাখার ডেপুটি ম্যানেজার শেখ সফিউদ্দিন। তিনি বলেন, গণিত উৎসব শিক্ষার্থীদের মনের গণিত ভীতি দূর করতে সাহায্য করছে। এ ভীতি দূর করে নিজেকে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলে দেশ ও সমাজের প্রয়োজনে আত্মনিয়োগ করতে হবে। তবেই সার্থক হবে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ও প্রথম আলোর এ উদ্যোগ।
নড়াইল, মাগুরা, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী ও ফরিদপুরের ১২৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৫৩২ শিক্ষার্থী চারটি গ্রুপে ভাগ হয়ে এ উৎসবে অংশ নেয়। এর মধ্যে থেকে ৮০ জনকে নির্বাচিত করা হয়। নির্বাচিতরা আগামী ১ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠিত জাতীয় গণিত উৎসবে অংশ নেবে। নির্বাচিত ৮০ জনের মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে ২২, জুনিয়র পর্যায়ে ২৩, সেকেন্ডারি পর্যায়ে ১৮ ও হায়ার সেকেন্ডারি পর্যায়ে ১৭ জন।