খালেদা জিয়া জেলে ভাবতেও চোখে পানি চলে আসে: মওদুদ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেছেন, দলকে পুনর্গঠন করতে হবে। দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মী আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত। কিন্তু যাঁরা নেতৃত্বে, তাঁরা সফল হননি। দলের নেতা-কর্মী, সমর্থকদের শক্তিকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যায়, এত বড় একটি সংগঠন, এত বড় এর সমর্থন, অথচ এই দলের নেত্রী এক বছর ধরে কারাগারে। এটা ভাবতেও চোখে পানি চলে আসে।’
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবন্দিত্বের এক বছরপূর্তি উপলক্ষে আজ শুক্রবার বিকেলে ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক প্রতিবাদ সভায় মওদুদ আহমদ এ কথা বলেন। ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি এবং দেশব্যাপী দলের বন্দী নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে’ এ প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বিএনপির নেতারা বলেন, খালেদা জিয়াকে আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্ত করা সম্ভব নয়। রাজপথে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে তাঁকে মুক্ত করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। আইনি প্রক্রিয়ায় হলে অনেক আগেই খালেদা জিয়া মুক্ত হতেন। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পরিবর্তে রাজপথে কঠোর আন্দোলন ছাড়া তাঁকে মুক্ত করা সম্ভব না।
প্রতিবাদ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, নির্বাচনে ভোট দিতে না পারার কারণে দলের নেতা-কর্মীরা হতাশ নন। নেতা-কর্মীরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছেন। এই অবস্থায় বিএনপিকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। দলের লাখ লাখ নেতা-কর্মী মামলা নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। অনেকে বাড়িতে যেতে পারেন না, তাঁদের পাশে দাঁড়াতে হবে। নেতা-কর্মীদের সাহায্য করতে হবে। তিনি আরও বলেন, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে যাঁরা বিএনপির হয়ে সংসদ নির্বাচন করেছেন, তাঁরা এলাকায় দলের নেতা-কর্মীদের পাশে দাঁড়াবেন। যাঁরা নেতা-কর্মীদের পাশে থাকবেন না, সেটি মনিটর করা হবে। পরবর্তী সময় দলীয়ভাবে সে বিষয়টি মূল্যায়ন করা হবে। খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। সে জন্য দলকে সুসংগঠিত করতে হবে। কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা খন্দকার মোশাররফ বলেন, এবারের সরকার হলো ভোট ডাকাতির সরকার। এভাবে প্রতারণা করে বেশি দিন টিকে থাকা যায় না। তিনি অভিযোগ করেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের দিন ছিল ৩০ ডিসেম্বর। কিন্তু নির্বাচন হয়েছে ২৯ তারিখ রাতে। এটি একটি অস্বাভাবিক ঘটনা। আরেকটি অস্বাভাবিক ঘটনা হলো, পুরোনো মন্ত্রীদের বাদ দিয়ে নতুনদের নিয়ে গঠিত মন্ত্রিসভা। এমন অস্বাভাবিক ঘটনা নিয়ে কোনো সরকার টিকে থাকতে পারে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, এই সরকার বাংলাদেশকে পৃথিবীর তলাবিহীন একটি দেশে পরিণত করেছে। এটার ভয়ংকর দিকটা হলো এই, এটার কারণে রাজনীতিতে একটি বিরাট শূন্যতা তৈরি হয়েছে। যাঁরা সরকারে আছেন, তাঁরা আরামে আছেন তাই বুঝতে পারছেন না। বিরোধী দলবিহীন একটি রাষ্ট্র বেশি দিন টিকতে পারবে না। সে জন্য আমাদের খুব দ্রুত পুনর্বাসন ও পুনর্গঠনের কর্মসূচি সফল করতে হবে। খুব শিগগির আন্দোলন করে এই সরকারের পতন ঘটানো হবে।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আন্তর্জাতিক চক্র, তাদের অনুগত দাস এবং এই সরকারের চক্রান্তের কারণে খালেদা জিয়া কারাগারে আছেন। বিচারপতিদের কাছে সুবিচার পাওয়া যাবে না। তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসের ৮ দিন চলে গেছে, বাকি আছে ২০ দিন। ঢাকার ১০০টি ওয়ার্ডের প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে ১০ জন করে এক হাজার নারী কর্মীকে নিয়ে একদিন জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান ধর্মঘট করুন। একইভাবে তারপরের দিন ছাত্রদলের এক হাজার কর্মী অবস্থান ধর্মঘট পালন করবেন। তারপরে বিএনপি যাঁদের মনোনয়ন দিয়েছে, তাঁরা আধা বেলা অবস্থান করবেন। এভাবে ২০ দিন অবস্থান ধর্মঘট করুন। তখন জনগণের মন গলবে। এ ছাড়া খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার কোনো পথ নেই।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘বিচার ও আইনের মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব না। তাহলে কি খালেদা জিয়া কারাগারে মারা যাবেন? বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনগুলো বিলুপ্ত হয়ে যাবে? এটা আমাদের ভেবে দেখা উচিত।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের লড়াইয়ের জন্য তৈরি হতে হবে। এই লড়াইয়ের এক ও অদ্বিতীয় কাজ হবে খালেদা জিয়ার মুক্তি। আর এই লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে দেশের গণতন্ত্র মুক্তি পাবে এবং স্বাধীনতা ফিরে আসবে।’
দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে আমরা এক বছরেও মুক্ত করতে পারিনি। আন্দোলন ও নির্বাচন একসঙ্গে করলে কোনোটিই হবে না। এ জন্য কর্মসূচি দিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘নেত্রী বলেছেন, আন্দোলন ও কর্মসূচি দেওয়া যাবে না। এসব কথা বিশ্বাস করা যাবে না। হরতাল দিতে হবে। শেখ হাসিনাকে সরাতে কর্মসূচি দিতেই হবে।’
আবদুস সালাম আরও বলেন, ‘অনতিবিলম্বে স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জ্যেষ্ঠ নেতাদের বৈঠক করুন। দলের অঙ্গ-সংগঠনেরগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে যৌথসভা করে কর্মসূচি দিতে হবে। ঘরে বসে আলোচনা করে কর্মসূচি দেন। কারণ আলোচনা করে লাভ নেই, রাজপথে আন্দোলনই একমাত্র পথ।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে ও বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরীর সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আহমদ আযম খান, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স প্রমুখ বক্তব্য দেন।