সৌদিতে মাকে নির্যাতন, দেশে ছেলেদের আকুতি
গৃহপরিচারিকার কাজের কথা বলে সৌদি আরবে নিয়ে বগুড়ার এক নারীকে (৪৫) শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। ওই নারীকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য তাঁর দুই ছেলে গত বৃহস্পতিবার রাতে শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহীর (ইউএনও) কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। আবেদনে বলা হয়েছে, তাঁদের মাকে অন্য ‘খারাপ জায়গায়’ বিক্রি করে দিচ্ছে।
লিখিত আবেদনে তাঁরা বলেন, বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার মাঝিড়াপাড়ার ওই নারীকে সৌদি আরবে স্থানীয় এক বাসিন্দার বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কথা বলে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু যাওয়ার পর থেকেই তাঁর ওপর যৌন ও শারীরিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে। এ কথা মুঠোফোনে ওই নারী ছেলেদের জানিয়েছেন। ওই দুই ভাই জানান, নির্যাতনের বিষয়টি তাঁরা এজেন্সির লোকজনকে জানিয়েছেন। কিন্তু তাঁরা কোনো সহযোগিতা করেননি। উল্টো হুমকি-ধমকি দিয়েছেন। পরে বাধ্য হয়ে তাঁরা তাঁদের মাকে উদ্ধারের জন্য প্রশাসনের আশ্রয় নেন। ‘দালালদের’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেন।
ওই দুই তরুণের একজন আরও বলেন, ঢাকার ‘তাসলিম এয়ার ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সির’ সঙ্গে স্থানীয় আদম ব্যবসায়ী আবদুল হালিমের জানাশোনা ছিল। তিনিই তাঁর মাকে ওই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সৌদি আরবে পাঠান। হালিমের বাড়ি বগুড়ার শেরপুর উপজেলায়। তাঁর মাকে সৌদি আরবে নেওয়ার সময় হালিমকে ৬০ হাজার টাকাও দিয়েছিলেন। কিন্তু সৌদি আরব যাওয়ার পর থেকেই তাঁর মায়ের ওপর নির্যাতন শুরু হয়। পরে তাঁরা এজেন্সির কর্মকর্তা হাবিবুর রহমানকে মুঠোফোনে বিষয়টি জানিয়েছেন। হাবিবুর বলেন, সৌদিতে কাজের কোনো সমস্যা নেই। তাঁর মা ভালো আছেন। ওই নারীর সঙ্গে বগুড়ার একই এলাকার আরেক নারীও (৩৫) সৌদিতে গিয়েছিলেন। তিনি নির্যাতন সইতে না পেরে চলে এসেছেন। এই নারীর কাছ থেকেই ছেলেরা তাঁর মায়ের নির্যাতনের কথা শুনেছেন। এই নারীর বরাত দিয়ে এক ছেলে বলেন, নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে এক মাস পর তিনি কৌশলে দেশে চলে আসেন। ওই নারীর ভাষ্য, গৃহপরিচারিকার কাজে সৌদি আরবে যাওয়া নারীরা নিরাপদ নয়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুল হালিম বলেন, ওই নারীর সঙ্গে একই সময়ে ২৫ জনকে সৌদি আরবে পাঠানো হয়েছে। একই এজেন্সির মাধ্যমে। সবাই একসঙ্গে কাজ করছেন। কারও সমস্যা হচ্ছে না। ওই নারীই বাড়িতে চলে আসবেন বলে এমন কথাবার্তা ছড়াচ্ছে। নির্যাতনের অভিযোগ ভিত্তিহীন। সৌদি আরবে ভালো না লাগায় এই নারী দেশে চলে আসেন। তাঁকে নির্যাতন করা হয়নি।
তাসলিম এয়ার ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সির ব্যবস্থাপক মো. তারেক মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই নারী বাসায় একা থাকতে ভয় পান। তাঁকে কেউ নির্যাতন করছে না।’
তাসলিম এয়ার ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সির ভিসা প্রসেসিং কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, ওই নারী প্রতি মাসেই বাড়িতে টাকা পাঠান। মুঠোফোনে ওই নারী ছেলেদের সঙ্গে নিয়মিত কথাও বলেন। আর যে নারী ফিরে এসেছেন, তাঁর সেখানে ভালো লাগেনি।
তাঁদের মা বিদেশ থেকে টাকা পাঠায় কি না, জানতে চাইলে বড় ছেলে বলেন, বিদেশে যাওয়ার পর দুই মাসে ১৭ হাজার টাকা করে পাঠিয়েছেন। আর দুই মাসের টাকা তাঁর মায়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, গত শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাঁর মায়ের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয়েছে। তাঁর মা জানান, তাঁকে হাত-পা বেঁধে অন্য মালিকের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। এরপর লাইনটা কেটে যায়। লাইন কেটে যাওয়ার পর আর কথা হয়নি।
জানতে চাইলে শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. ফুয়ারা খাতুন বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। ওই নারীর সন্তানদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’