'প্রচারণা থামি গেইছে কিছুই ভালো লাগে না'

>

কুড়িগ্রাম জেলা নির্বাচন কার্যালয় থেকে গতকাল ব্যালট পেপারসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম পিকআপে বিভিন্ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।  ছবি: প্রথম আলো
কুড়িগ্রাম জেলা নির্বাচন কার্যালয় থেকে গতকাল ব্যালট পেপারসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম পিকআপে বিভিন্ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। ছবি: প্রথম আলো

সারা দেশে গতকাল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা শেষ হওয়ায় এই পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

কুড়িগ্রামের ধরলা সেতুর পূর্ব পাশে রিকশার ওপর বসে ঝিমাচ্ছিলেন চালক মহির উদ্দিন। বসে আছেন কেন—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রচারণা থামি গেইছে। কিছুই ভালো লাগে না। এ কয় দিন মিছিল–মিটিং, মোটরসাইকেল, মাইকে প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় জমজমাট ছিল।’

রিকশাচালকের এই মন্তব্যের সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে গতকাল শুক্রবার শহর ও গ্রামের সড়কগুলো ফাঁকা পাওয়া যায়। গতকাল সদর উপজেলার যাত্রাপুর, পাঁছগাছি, ঘোগাদহ ও ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ও হাটবাজার ছিল সুনসান। সড়কগুলো প্রায় ফাঁকা। সড়কের পাশে অধিকাংশ দোকান বন্ধ। কুড়িগ্রাম সদর থেকে যাত্রাপুর যাওয়ার পথে সড়কের পাশে একটি ছোট মুদি দোকান পড়ে। বেলা ১১টায় সেখানে গিয়ে দোকানমালিক মেহের আলীকে চাদর গায়ে বসে থাকতে দেখা যায়। চাদর দিয়ে শরীর ঢাকার পরও তিনি কাঁপছিলেন। আকাশ কুয়াশায় ঢাকা। গতকাল কুড়িগ্রামে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

মোটরসাইকেল থামিয়ে ভোটের কোনো খবর আছে কি না—জানতে চাইলে দোকানমালিক মেহের আলী বলেন, ‘এ কয়দিন বেচাকেনা ভালো হইল। প্রার্থীর পক্ষে লোকজন আইসে। কথা কয়। পান, বিড়ি-সিগারেট কেনে। তাই বেচাও হয়েছে ভালো। আজ সকাল থাকি সুনসান। সড়কোত গাড়ি তো দূরের কথা, মানুষই নাই।’

যাত্রাপুর ইউনিয়নে গড়ের পারে অসংখ্য দোকানপাট। এখানকার দোকানগুলো সব সময় সরব থাকে। বেলা সাড়ে ১১টায় এসে দেখা গেল প্রায় দোকান বন্ধ। ধানের শীষ, নৌকা ও হাতপাখা প্রতীকের অসংখ্য পোস্টার ঝুলছে।

কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর দেখা হলো শিক্ষক সাহাদাৎ হোসেনের সঙ্গে। এলাকার অবস্থা এমন কেন—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রচারণা থেমে যাওয়ায় সমর্থকেরা ঘুমাচ্ছে। এ ছাড়া শুক্রবার ও শীত থাকায় এই অবস্থা। কুড়িগ্রাম শান্তিপ্রিয় এলাকা। তাই প্রচার-প্রচারণায় মুখর ছিল এলাকা। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলত নির্বাচনী প্রচার। গতকাল থেকে থেমে যাওয়ায় এখন সব নীরব হয়ে গেছে। খালি পাখির ডাক শোনা যায়।’

যাত্রাপুর ব্রহ্মপুত্র নদের ঘাটে দুপুর সাড়ে ১২টায় গিয়ে দেখা যায়, অসংখ্য নৌকা ঘাটের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে। অথচ এ সময় এত নৌকা থাকার কথা না। মাঝি আবদুস সামাদ বলেন, ‘গত কয়েক দিন দিন-রাত প্রার্থী ও সমর্থকদের নিয়ে খ্যাপ মারছি। আজ এখানে কেউ আসে নাই। শুধু দুই-চারটা চাকরিজীবী ভোট দেওয়ার জন্য বাড়িতে এসেছেন। তাঁদের ওপারে পার করে দিয়েছি।’

জুমার নামাজের পর ঘোগাদহ বাজারে গিয়ে সব দোকান বন্ধ পাওয়া যায়। বাজারে মানুষ নেই বললেই চলে। এ সময় স্থানীয় বাসিন্দা শিক্ষক মোয়াজ্জেম হোসেন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, ‘ভাইজান, কেমন যেন অবস্থা। এ কয়দিন বাজারে মানুষের কোলাহলে থাকা যায়নি। গভীর রাত পর্যন্ত বাজার মুখরিত থাকত। আজ আর ভালো লাগছে না। সকালে সেনাবাহিনী, বিজিবি টহল দিয়ে গেছে।’

ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নেও একই অবস্থা। মিজানুর রহমান নামের একজন আওয়ামী লীগের সমর্থক বলেন, এবার নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে। নির্বাচনে তাঁদের প্রার্থী বিজয়ী হবেন।

কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদ বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ পরিবেশে মানুষ ভোট দিতে পারলে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীর জয় হবে।’

জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে গিয়ে দেখা যায়, কুড়িগ্রামের চারটি আসনের কেন্দ্রগুলোতে ব্যালট পেপার, ব্যালট বাক্সসহ অন্য নির্বাচনী সরঞ্জাম পাঠানো হচ্ছে। প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা নির্বাচনী সরঞ্জাম নিয়ে নিজ নিজ ভোটকেন্দ্রে যাচ্ছেন।

জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার চারটি আসনে মোট ৬৯৭টি কেন্দ্র রয়েছে। এসব কেন্দ্রে নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ১১ হাজার সদস্য। মোট ভোটার ১৫ লাখ ৪৭ হাজার ২ জন। ভোটকেন্দ্রগুলোর মধ্যে ৩৫৭টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রের জন্য বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা রয়েছে।

জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা সুলতানা পারভীন বলেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করার জন্য সব ধরনের  প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

কুড়িগ্রাম-২ (সদর, ফুলবাড়ী, রাজারহাট) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে মহাজোটের প্রার্থী জাতীয় পার্টির পনির উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী গণফোরামের নেতা মেজর জেনারেল (অব.) আমসাআ আমিনের।