অভিজ্ঞ ও অনভিজ্ঞের লড়াই
![রেবেকা মমিন, তাহমিনা জামান, ওয়ারেসাত হোসেন, আবু তাহের](http://media.prothomalo.com/prothomalo%2Fimport%2Fmedia%2F2018%2F12%2F28%2Fdd2eca1bc998dcf83d1ce0c1379e3752-5c2602a75c709.jpg?w=640&auto=format%2Ccompress)
টানা দুইবারের বর্তমান সাংসদ তাঁরা। ছাত্রজীবন থেকেই তাঁরা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ছিলেন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদেও। উভয়ের পরিবারের রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে অবিস্মরণীয় অবদান। তাঁদের মধ্যে একজন রয়েছেন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। অপরজনের স্বামী মুক্তিযোদ্ধের সংগঠক। তাঁরা এবারও আওয়ামী লীগের প্রার্থী।
তাঁরা হলেন নেত্রকোনা-৪ (মোহনগঞ্জ-মদন-খালিয়াজুরি) আসনের রেবেকা মমিন ও নেত্রকোনা-৫ (পূর্বধলা) আসনে ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল বীর প্রতীক। এবার একাদশ সংসদ নির্বাচনে তাঁদের আসনে বিএনপির দুই প্রার্থীই নতুন মুখ। বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে রেবেকা মমিনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাহমিনা জামান। আর ওয়ারেসাত হোসেনের সঙ্গে লড়ছেন আবু তাহের তালুকদার। এই পরিস্থিতিকে স্থানীয় লোকজন বলছেন, এবার ভোটের মাঠে অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের সঙ্গে অনভিজ্ঞদের খেলা হবে।
আওয়ামী লীগের রেবেকা মমিন ষাটের দশকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন। পরবর্তী সময়ে দলের বিভিন্ন পদে থেকে বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক প্রয়াত আবদুল মমিনের স্ত্রী। আর ওয়ারেসাত হোসেন বর্তমানে পূর্বধলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। তাঁদের পরিবারের সবাই মুক্তিযোদ্ধা। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আনোয়ার হোসেন ও প্রয়াত কর্নেল তাহেরের ছোট ভাই।
এদিকে বিএনপির তাহমিনা জামানেন ধানের শীষের প্রার্থিতার মধ্য দিয়েই রাজনীতিতে প্রথম পদার্পণ। তিনি বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেট হামলা মামলার অন্যতম আসামি ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের স্ত্রী। তিনি এর আগে স্বামীর এলাকাতেও তেমন আসেননি। তাঁর বাবার বাড়িও ঢাকায়। তাঁর প্রার্থিতা চূড়ান্ত হলে দীর্ঘ প্রায় এক যুগ পর তিনি স্বামীর গ্রামের বাড়ি মদনে আসেন। বিএনপির অপর নতুন প্রার্থী আবু তাহের তালুকদার ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি নেত্রকোনা সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক সহসভাপতি (ভিপি) ছাড়াও জেলা ছাত্রদলের সভাপতি, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদকের পর টানা তিনবার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে তিনি জেলা কমিটির সদস্য।
স্থানীয় ও দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শীত-কুয়াশা ভেদ করে কাকডাকা ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত প্রার্থীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন। সব ভেদাভেদ ভুলে সাংসদ রেবেকা মমিন ও ওয়ারেসাত হোসেনকে আবারও নির্বাচিত করতে এককাট্টা হয়ে মাঠে কাজ করছেন। অন্যদিকে বিএনপির দুই প্রার্থী অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী যতটা স্বচ্ছন্দে প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারছেন, বিএনপি তা পারছে না। নানাভাবে বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাঁদের। তাঁরা বিভিন্ন সময় সংবাদ সম্মেলন করে জানান, একের পর এক অভিযোগ রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে জমা দিচ্ছেন। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। প্রার্থীদের দাবি, বিএনপির নেতা–কর্মী ও সমর্থকদের ওপর হামলা, হুমকি-ধমকি এবং মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। গ্রেপ্তার–আতঙ্কে অনেকে এলাকা ছেড়েছেন। তবে তাঁরা এ–ও বলছেন, ভোটকেন্দ্রে লোকজন যেতে পারলে তাঁরা জয়লাভ করবেন।
রেবেকা মমিন ও ওয়ারেসাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপির অভিযোগ সব ভিত্তিহীন, মিথ্যা। বরং তাঁরাই বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারে বাধা দিচ্ছে। ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে টানা দুইবার ক্ষমতায় থেকে এলাকায় যে উন্নয়ন করেছি, মানুষ এখন নৌকা ছাড়া কিছু ভাবতে পারে না। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে মানুষ বেইমানি করবে না।’