হামলা-বাধা নিয়েই প্রচার

>* সবচেয়ে বেশি সহিংসতার ঘটনা চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীতে
* প্রতিপক্ষের হামলায় রক্তাক্ত হয়েছেন ১৩ প্রার্থী
* প্রার্থীর গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটেছে ৩০ টি

নির্বাচনী প্রচার বললেই উৎসবমুখর পরিবেশের যে ছবি মনে ভেসে ওঠে, এবার তেমনটা দেখা যায়নি। এর পরিবর্তে পাল্টাপাল্টি হামলা, প্রচারকেন্দ্রে আগুন–ভাঙচুর, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা, সংঘর্ষ, মামলা ও গ্রেপ্তারের ঘটনা ভোটারদের মধ্যে ভীতি ছড়িয়েছে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রচারণায় নতুন প্রবণতা দেখা গেছে, প্রার্থীদের ওপর শারীরিক আক্রমণ। প্রতিপক্ষের হামলায় রক্তাক্ত হয়েছেন ১৩ জন প্রার্থী। আর প্রার্থীর গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটেছে ৩০ টি।

১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পরই সারা দেশে ভোটের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু হয়। বলতে গেলে নির্বাচনী প্রচারে সহিংসতার শুরুও সেদিন থেকে।

.
.

প্রথম আলোর তথ্য অনুযায়ী, ১০ থেকে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৬ দিনে সারা দেশে সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে ২০৭ টি। এসব ঘটনা ঘটেছে ১৫৯টি সংসদীয় আসনে। ৬৪ জেলার মধ্যে ৫৫ জেলাতেই হামলা, বাধা ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। সহিংসতায় মারা গেছেন দুজন, একজন নোয়াখালীতে অন্যজন ফরিদপুরে। দুজনই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

সবচেয়ে বেশি সহিংসতার ঘটনা চট্টগ্রামে, ১১ টি। এরপরই নোয়াখালী জেলায় ৯ টি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদের বাড়ি এই জেলায়। দুজনই একই সংসদীয় এলাকা (নোয়াখালী–৫) থেকে প্রার্থী হয়েছেন।

ঢাকা, কক্সবাজার ও নাটোরে ৮টি করে সহিংস ঘটনা ঘটেছে। সাতটি করে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে কুমিল্লা, যশোর ও ফেনী জেলায়। সহিংসতাপ্রবণ জেলার মধ্যে রয়েছে গাজীপুর, চাঁদপুর, বগুড়া, বরিশাল, সাতক্ষীরা, সিরাজগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, কুষ্টিয়া, নেত্রকোনা, নরসিংদী, পটুয়াখালী ও ফরিদপুর।

ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বলছেন, নির্বাচনী প্রচার শুরুর আগে–পরে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন ধানের শীষ প্রতীকের ১৬ প্রার্থী। তাঁদের প্রায় সবাইকে নাশকতাসহ বিভিন্ন পুরোনো মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

নির্বাচনী সহিংসতা ও বিরোধীদের ধরপাকড়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ। ২১ ডিসেম্বর জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিখ বলেন, ‘নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে সহিংসতা ও বিরোধীদলীয় সদস্যদের গ্রেপ্তারের যেসব খবর পাওয়া যাচ্ছে, তাতে আমরা উদ্বিগ্ন।’ একই দিনে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) এক প্রতিবেদনে বলেছে, ‘বিরোধীদলীয় কর্মী-সমর্থকেরা সহিংসতার শিকার হলে পুলিশ ও নির্বাচন কমিশন অনেক ক্ষেত্রে অভিযোগ আমলেই নেয়নি। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে সহিংস ঘটনা যে ঘটেছে, তা–ও মানতে চায়নি।’

নির্বাচনী প্রচার চালাতে গিয়ে প্রতিপক্ষের হামলায় শারীরিকভাবে আহত হয়েছেন ঢাকা-৩ আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ঢাকা-৪ আসনে সালাহ উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা-৬ আসনে সুব্রত চৌধুরী, ঢাকা-৮ আসনে মির্জা আব্বাস, ঢাকা-৯ আসনে প্রার্থী আফরোজা আব্বাস, নোয়াখালী-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, শরীয়তপুর-৩ আসনে মিয়া নুরুদ্দিন আহম্মেদ, চট্টগ্রাম-২ আসনে আজিম উল্লাহ বাহার, কিশোরগঞ্জ-৬ আসনে শরিফুল আলম-৫, নাটোর–২ সাবিনা ইয়াসমিন, বরিশাল–৪ আসনে নুর উর রহমান, ঝালকাঠি–২ আসনে জিবা আমিনা খান, নেত্রকোনা-৪ আসনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের জলি তালুকদার।

এর বাইরে ক্ষমতাসীন দলের তিন প্রার্থীর গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। কক্সবাজার–১ আসনে জাফর আলম, চট্টগ্রাম–১০ আসনে আফছারুল আমীন ও কুমিল্লা-২ আসনে সেলিমা আহমদের গাড়িবহরে হামলা হয়েছে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট হামলা–মামলা–গ্রেপ্তার বন্ধে ইসিতে লাগাতার অভিযোগ করেও কার্যত কোনো ফল পায়নি। উল্টো গত মঙ্গলবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা পুলিশের হয়রানির নানা অভিযোগ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) কাছে তুলে ধরলেও সিইসি পুলিশের পক্ষ নিয়েই কথা বলেছেন।

এদিকে, গতকাল বুধবার রাজধানীতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে নির্বাচনী প্রচারের পরিবেশ সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ভোট দিতে পারা নিয়ে সব নাগরিকের মধ্যেই ভয় কাজ করছে।