মামলা, ধরপাকড় চলছেই

বরিশাল-৫ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহিদ ফারুক শামীমের নির্বাচনী কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার ঘটনায় বিএনপি ও জামায়াতের ৫২ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। এদিকে, গত শুক্রবার বরিশাল নগরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাঙচুর করার অভিযোগে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ৪৪ জন নেতা-কর্মীর নামে মামলা হয়েছে। বরগুনার বিভিন্ন উপজেলা থেকে গত শুক্রবার রাতে বিএনপি ও যুবদলের ১০ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সদর আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহিদের নির্বাচনী কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার ঘটনায় নগরের বিমানবন্দর থানায় গত শুক্রবার রাতে এই মামলা হয়। সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আমির হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলা দায়ের করার পর ওই রাতেই বাবুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অহিদুল ইসলাম ওরফে প্রিন্সকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে বরিশাল নগরের উপকণ্ঠে কাশিপুর গণপাড়া আবেদ শাহ মাজার এলাকায় জাহিদের নির্বাচনী কার্যালয়ে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে সেখানে থাকা বেশ কিছু চেয়ার-টেবিল ও অন্যান্য আসবাব পুড়ে যায়। পরে স্থানীয় ব্যক্তিরা বিষয়টি পুলিশকে জানালে পুলিশ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

পুলিশ জানায়, ওই ঘটনায় শুক্রবার রাতে বাবুগঞ্জ উপজেলা ও সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়ন বিএনপি ও জামায়াতের ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ২৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা হয়।

শুক্রবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বরিশাল নগরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা সবাই বিএনপির নেতা-কর্মী। তাঁদের মধ্যে আছেন বরিশাল সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ আবদুর রহিম, নগর যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান প্রমুখ।

এর আগে গত সোম থেকে বুধবার পর্যন্ত তিন দিনে বরিশাল নগরে বিএনপি-জামায়াতের ৪৬ জন নেতা-কর্মীকে নাশকতার অভিযোগে দায়ের করা আগের মামলায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বিএনপির নেতাদের অভিযোগ, নির্বাচনী মাঠে বিএনপির প্রার্থীদের কোণঠাসা করতে এই গণগ্রেপ্তার চালাচ্ছে পুলিশ।

কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানাসহ বিভিন্ন থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একাধিক মামলা রয়েছে।

>বরিশাল নগরে শুক্রবার ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ৪৪ জনের নামে মামলা। বরগুনায় ১০ জনকে আটক।

অপর দিকে বরিশালের বাকেরগঞ্জে গতকাল দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ উপজেলা জামায়াতের আমির মাহামুদুল হাসানসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।

বাকেরগঞ্জ থানার ওসি মো. মাসুদুজ্জামান বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা রয়েছে।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের মোস্তফাপুর গ্রামে একটি ক্লাবঘরসহ বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাঙচুর করার অভিযোগে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ৪৪ জন নেতা-কর্মীর নামে মামলা করা হয়েছে। এ মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ৪০-৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য মো. নাসির উদ্দিন হাওলাদার বাদী হয়ে শুক্রবার রাতে কলাপাড়া থানায় এ মামলা দায়ের করেন।

মামলার বাদী বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যার পর মোস্তফাপুর গ্রামে নৌকা মার্কার সমর্থনে একটি মিছিল বের করা হয়। কতিপয় সন্ত্রাসী মোস্তফাপুর গ্রামের সামসুন্নাহার দাখিল মাদ্রাসার ভেতর থেকে মিছিল লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। স্থানীয় মানুষজন মাসুম নামের একজনকে তাৎক্ষণিকভাবে আটক করে। এরপর মাসুমের অনুসারী ৩০-৩৫ জন সন্ত্রাসী মোস্তফাপুর গ্রামে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা চালায়। হামলাকারীরা ওই কার্যালয়সহ বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি ভাঙচুর করেছে।

এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর পুলিশ বিএনপির কর্মী মিলন মৃধা, হাসান আকন, কাদের খান ও মোকছেদ হাওলাদারকে আটক করেছে।

নীলগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি কামরুজ্জামান শহীদ মাতুব্বর বলেন, এলাকার সবাই জানে, এটি সাজানো নাটক। যাঁরা নির্বাচনে ধানের শীষের পোলিং এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন, তাঁদের সাজানো মামলায় আসামি করা হয়েছে।

কলাপাড়া থানার ওসি মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, আটককৃতদের আদালতে সোপর্দ করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

বরগুনায় নাশকতা চেষ্টার মামলায় পুলিশ শুক্রবার রাতে আমতলী, তালতলী ও বামনা উপজেলা থেকে বিএনপি ও যুবদলের ১০ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আমতলী উপজেলা যুবদল সভাপতি কবির ফকিরসহ পাঁচজনকে পৌর শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা নাশকতার পরিকল্পনা ও আওয়ামী লীগ নির্বাচনী বৈঠকে হামলা মামলার আসামি। পরে তাঁদের আমতলী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

এ ছাড়া বামনা ও তালতলী উপজেলা থেকে বিএনপির পাঁচ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

[প্রতিবেদন তৈরি করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল ও প্রতিনিধি, বরগুনা ও কলাপাড়া, পটুয়াখালী]