ভোটের মাঠে সম্ভাব্য প্রার্থীরা সরব। কিন্তু জনপরিসরে এখনো জমেনি এ–সংক্রান্ত আলোচনা। গেল নির্বাচনে ঢাকা-১২ আসনে কোনো ভোট গ্রহণ হয়নি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ভোটদানের পরিবেশ তৈরি, এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনসহ রাজনৈতিক দলগুলোর কর্তব্য—এমন নানা বিষয়ে কথা বলেছেন ঢাকা-১২ আসনের ভোটাররা। তাঁরা নিরাপদে ভোট দেওয়ার সুযোগ চান। তাঁদের প্রত্যাশা নির্বাচন হতে হবে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ।
তেজগাঁও থানা, শেরেবাংলা নগর থানা ও রমনা থানার একাংশ নিয়ে ঢাকা-১২ আসন। ভোটারসংখ্যা ৪ লাখের বেশি। ২০০৮ সালে সংসদীয় সীমানা পুনর্নির্ধারণ হওয়ার আগে এটা ছিল ঢাকা–১০ আসন।
১৯৯১ সালে বিএনপির মেজর (অব.) আবদুল মান্নান এই আসনে জয়লাভ করেন। ১৯৯৬-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এইচ বি এম ইকবাল জয়লাভ করলেও ২০০১ সালে পুনরায় আসনটিতে বিজয়ী হন বিএনপির প্রার্থী। ২০০৪ সালের উপনির্বাচনে বিএনপির নেতা মোসাদ্দেক আলী নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৮–এর নির্বাচনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি।
গত শনিবার এই সংসদীয় আসনের পূর্ব ও পশ্চিম নাখালপাড়া, তেজকুনিপাড়া, বেগুনবাড়ি, হ্যাপি হোমসসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে ও দলীয় সূত্রে জানা যায়, এই আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে বর্তমান সাংসদ আসাদুজ্জামান খান এবং যুবলীগের উপ ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম চৌধুরী দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। তবে আসাদুজ্জামান খানের মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি মোটামুটি নিশ্চিত। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বলেন, আগে তেজগাঁওসহ আশপাশ এলাকায় মাদকের প্রকোপ বেশি ছিল। তা অনেকখানি কমেছে। তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করা হয়েছে। এসব উদ্যোগ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর জন্য ইতিবাচক হতে পারে ভোটের মাঠে।
বিএনপি থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহকারীদের তালিকায় আছেন পাঁচ নেতা। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিরা হলেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সহসভাপতি মো. শাহাবউদ্দিন, যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুল আলম, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান প্রমুখ। তাঁদের মধ্যে মো. শাহাবউদ্দিন ২০০৮ সালের নির্বাচনে আসাদুজ্জামান খানের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। তিনি এবারও দলের প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। তিনি সম্প্রতি বলেন, এলাকায় থাকা নোয়াখালী অঞ্চলের ভোটারদের ভোট তাঁর পক্ষে যাবে বলে তিনি আশাবাদী।
বিএনপির আরেক শক্ত মনোনয়নপ্রত্যাশী সাইফুল আলম তেজগাঁও এলাকায় বেড়ে উঠেছেন। তিনি বলেন, এলাকার লোকজনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক দীর্ঘদিনের।
হ্যাপি হোমস এলাকায় কথা হয় ভোটার আরিফ হোসেনের সঙ্গে। পেশায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এই তরুণ বলেন, পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে সব দল এবারের নির্বাচনে আসবে। এটা একটা আশার কথা।
একই এলাকার আরেক ভোটার নুরুন্নবী বলেন, ‘আমরা কিন্তু এখন পর্যন্ত মাঠে আওয়ামী লীগ বাদে অন্য কোনো দলের তৎপরতা দেখতে পাচ্ছি না। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সব দলের জন্যই সমান সুযোগ তৈরি করাটা জরুরি।’
মধ্য কুনিপাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ ইয়াসিন সংশয় প্রকাশ করে বলেন, ‘আগে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, তারপর ভোট দেওয়ার প্রশ্ন। এবারের ইলেকশনও যদি ২০১৪ সালের মতো হয়, তাহলে আমি ভোট দিতে যাব না।’
পশ্চিম নাখালপাড়ার লিচুবাগান এলাকার মোসাদ্দেকুর রহিমের ভাষ্য, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোকেও নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে।