চট্টগ্রামে ১৬টি আসনের মধ্যে মহাজোটের শরিক দলগুলো পাচ্ছে ৪টি। অন্য ১২টিতে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীরা লড়বেন বলে জানিয়েছেন জোটের নেতারা। অবশ্য চট্টগ্রাম–৯ আসন নিয়ে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মধ্যে দর–কষাকষি চলছে বলেও জানান তাঁরা। এই আসনের সাংসদ জাতীয় পার্টির জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু।
শরিক দলগুলোর মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নাম জানা গেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের দু–চারজন ছাড়া অন্যদের নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য সবাই তাকিয়ে আছেন প্রধানমন্ত্রীর দিকে।
মহাজোট সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম–২ (ফটিকছড়ি) আসনে তরীকত ফেডারেশনের সভাপতি সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, চট্টগ্রাম–৫ (হাটহাজারী ও নগরের একাংশ) আসনে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, চট্টগ্রাম–৮ (বোয়ালখালী–চান্দগাঁও) আসনে জাসদের মইন উদ্দিন খান বাদল, চট্টগ্রাম–৯ (কোতোয়ালি–বাকলিয়া) আসনে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদের মনোনয়ন পাওয়া প্রায় নিশ্চিত। তাঁরা চারজনই এই চার আসনের বর্তমান সাংসদ।
তবে চট্টগ্রাম–৯ আসনটি আওয়ামী লীগের শক্তিশালী একজনকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে তৃণমূলের নেতা–কর্মীদের প্রত্যাশা। এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ২৬ জন। তাঁদের মধ্যে আছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী ও সিডিএর চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম।
মহাজোটের নেতা–কর্মীরা জানান, চট্টগ্রাম–২ আসনেও আওয়ামী লীগের একটি অংশের বিরোধিতার মুখোমুখি হবেন শরিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থী। বিশেষ করে ফটিকছড়ি আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম তরীকত ফেডারেশনের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন না বলে আলোচনা আছে। পেয়ারুল ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচন করে পরাজিত হন। ২০১৪ সালে মনোনয়ন পাননি। এবার তিনি মনোনয়ন চেয়েছেন।
নজিবুল বশর প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ফটিকছড়ি থেকে তিনবার নির্বাচিত সাংসদ। ১৪–দলীয় জোট তাঁর মনোনয়ন আবার নিশ্চিত করেছে। তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী না হলে জামায়াত প্রথম কোপটা আমাকে দেবে। কারণ, জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল, সাঈদীসহ জামায়াত নেতাদের গ্রেপ্তার করতে ভূমিকা রেখেছিলাম।’
আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ভান্ডারী
মনোনয়ন পাবেন না। কারণ, তাঁর পক্ষে ১ শতাংশ নেতা–কর্মীও নেই।
এদিকে চট্টগ্রাম–৯ আসন নিয়ে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মধ্যে দর–কষাকষি শেষ হয়নি বলে জানা গেছে। যদিও জাতীয় পার্টি আসনটি নিজেদের বলে দাবি করছে। কারণ, ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনে জিয়াউদ্দিন আহমেদ এ আসনের সাংসদ হন। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক সংসদ নির্বাচনে তিনি কতটুকু প্রস্তুত, তা নিয়ে তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের মধ্যে সংশয় আছে। তাই মহিবুল হাসান চৌধুরীকে তৃণমূল আওয়ামী লীগ চাইছে। মহিবুল প্রয়াত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে।
>অন্য ১২টিতে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীরা লড়বেন বলে জানিয়েছেন জোটের নেতারা।
জিয়াউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের তৃণমূলের নেতা–কর্মীরা তাঁর সঙ্গে আছেন। এ আসনটি আবার জাতীয় পার্টিকে দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘কে কোথায় মনোনয়ন পাচ্ছেন, তা ঠিক করবেন প্রধানমন্ত্রী। চূড়ান্ত তালিকা ঘোষণা হলে আমরা তাঁদের জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করব।’
চট্টগ্রাম–৮ আসনে জাসদের মইন উদ্দিন খান বাদলের মনোনয়ন এক প্রকার নিশ্চিত। কিন্তু ওই আসনে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদও মনোনয়নপ্রত্যাশী। মোছলেম উদ্দিন বলেন, যাঁর সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক নেই তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হলে সবাই হতাশ হবেন। তবে নৌকার স্বার্থে দলের সিদ্ধান্ত মেনে তিনি কাজ করবেন।
সাংসদ মইন উদ্দিন খান বলেন, ‘মনোনয়ন পাওয়ার জন্য বৈরিতা দেখা দেওয়া স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু আমি ১০ বছর ধরে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের নিয়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালিয়েছি। প্রার্থী চূড়ান্ত এবং নৌকা প্রতীক বরাদ্দ হলে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়বে। তারপরও কিছু বিতর্ক থাকলে দ্রুত নিষ্পন্ন করা যাবে।’