আ.লীগ-জাপায় টানাপোড়েন

রংপুরের ছয়টি আসন ভাগাভাগি নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে। জাতীয় পার্টির এলাকা হিসেবে পরিচিত রংপুরে এই দলটি চারটি আসন চাইছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ তিনটির বেশি দিতে রাজি নয়। আর তেমন হলেও আওয়ামী লীগের একজন সাংসদকে নির্বাচন থেকে বিরত থাকতে হবে।

তবে জাতীয় পার্টিকে কোন আসনগুলো দেওয়া হচ্ছে, আর আওয়ামী লীগের হাতে কোনগুলো থাকছে, তা নিয়ে দুই দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা এখনো অন্ধকারে রয়েছেন।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আফতাব হোসেন বলেন, ‘আসন ভাগাভাগিতে সাধারণ মানুষের কোনো লাভ নেই। নির্বাচন করে যারাই আসুক, আমরা চাই এলাকার উন্নয়ন। উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোনো বৈষম্য যেন না হয়।’

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে রংপুরের ছয়টি আসনের মধ্যে চারটি পায় আওয়ামী লীগ। আর দুটি জাতীয় পার্টি। যদিও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ সম্প্রতি রংপুর এসে ঘোষণা দেন, ছয়টি আসনের একটিতেও ছাড় দিতে রাজি নন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত জোটগতভাবে নির্বাচনে গেলে সমঝোতার বিকল্প নেই।

জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, ছয়টির মধ্যে আওয়ামী লীগ তিনটি, জাপা তিনটি করে আসন পেতে পারে। এটি হলে আওয়ামী লীগের একজন সাংসদ এবার বাদ পড়বেন। আর জাপা চারটি আসন পেলে আওয়ামী লীগের দুজন সাংসদ বাদ পড়বেন। এ বিষয়টি নিয়েও আলোচনা চলছে।

>জাতীয় পার্টি চায় চারটি আসন। আওয়ামী লীগ ছাড়তে চায় বড়জোর তিনটি।

বর্তমানে ছয়টি আসনের সাংসদেরা হলেন রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) আসনে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা, রংপুর-২ (বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ) আসনে বদরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী, রংপুর-৩ (সদর) আসনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ, রংপুর-৪ (কাউনিয়া-পীরগাছা) আসনে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক টিপু মুনশি, রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) আসনে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমান এবং রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

সূত্র জানায়, রংপুর-৩ (সদর) আসনটি জাতীয় পার্টি দীর্ঘদিন ধরে দখলে রেখেছে। জোটগত নির্বাচন হলে এবারও এরশাদ এই আসনে প্রার্থী হবেন, এটা প্রায় নিশ্চিত।

এ ছাড়া রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনটি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শ্বশুরবাড়ির এলাকা। ২০০৮ ও ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে তিনি নির্বাচিত হন। পরে উপনির্বাচনে আসন ছেড়ে দিলে ২০০৮ সালে আবুল কালাম আজাদ ও ২০১৪ সালে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী সাংসদ নির্বাচিত হন।

এবার স্পিকার পীরগঞ্জের এই আসন থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। জোটগতভাবে নির্বাচন হলে এই আসনে প্রধানমন্ত্রী অথবা স্পিকার নির্বাচন করবেন, সেটা দলীয় একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম বলেন, জোটগত নির্বাচনে ছাড় তো দিতেই হবে। এতে দুই দলের টানাপোড়েন থাকতেই পারে। তবে এবার রংপুরের আসনগুলো বণ্টন নিয়ে কী হচ্ছে, তা এখনো পরিষ্কার নয়।

জেলা জাতীয় পার্টির একজন নেতা বললেন, ‘আশা করছি, এবার তিনটি আসন হবে। তবে চারটি আসন দাবি করা হয়েছে।’ জাতীয় পার্টি রংপুর মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসীর বলেন, ‘জাতীয় পার্টির রাজনীতি এই রংপুরকে ঘিরে। এখানে মহাজোটের রাজনীতিতে যদি আসন কমে যায়, তাহলে এটি হবে দলের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক। তাই আমাদের দাবি, রংপুরের অন্তত চারটি আসন দেওয়া হোক।’