বিএনপিতে ফের আলোচনায় সাবেক সাংসদ আবু হেনা

আবু হেনা
আবু হেনা

রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে আবারও আলোচনায় এসেছেন সাবেক আমলা ও সাংসদ আবু হেনা। তিনি বিএনপির প্রার্থী হচ্ছেন বলে এলাকায় প্রচার শুরু হয়েছে। তাঁকে নিয়ে পক্ষে–বিপক্ষে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলনও করেছে স্থানীয় যুবদল। ইতিমধ্যে তাঁর পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। তাঁকে ঘিরে স্থানীয় রাজনীতিতে চলছে নানা আলোচনা।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, বাগমরা উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনটিতে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে আবু হেনা বিএনপির প্রার্থী হয়ে সাংসদ হন। এর আগে আসনটি ছিল জাতীয় পার্টির প্রয়াত নেতা সরদার আমজাদ হোসেনের দখলে। বিএনপির সাংসদ থাকাকালে আবু হেনা স্থানীয় এক মন্ত্রীকে জড়িয়ে জঙ্গির মদদদাতা উল্লেখ করে প্রকাশ্যে সংবাদ সম্মেলন করে আলোচনায় আসেন। তাঁর এলাকার লোকজন জঙ্গির হাতে নির্যাতিত হওয়ার পর তিনি প্রকাশ্যে এ ধরনের বক্তব্য দেন। এ ঘটনার পর দল থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর তিনি দল থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন। দলীয় কর্মকাণ্ডে ছিলেন নিষ্ক্রিয়। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দল তাঁকে মনোনয়ন দেয়নি। তিনিও মনোনয়ন চাননি।

স্থানীয় শিক্ষক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ বলছে, আবু হেনা আলোচিত ব্যক্তি। তাঁর দ্বিতীয় দফায় সাংসদ থাকাকালে এলাকায় বাংলা ভাই বাহিনীর আবির্ভাব হলেও তিনি এর বিরোধিতা করে আলোচিত হয়েছিলেন। তিনি নির্বাচনের মাঠে একজন শক্তিশালী প্রার্থী হতে পারেন।

আবু হেনার সমর্থকেরা বলছেন, বিএনপির সংস্কারপন্থী হিসেবে দীর্ঘদিন দলের বাইরে থাকলেও এলাকার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল তাঁর। দলীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলায় তাঁদের জামিনসহ সহযোগিতা করেছেন তিনি। আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তিনি আবারও প্রকাশ্যে সক্রিয় হয়েছেন। দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দলে ফেরেন তিনি। দলীয় প্রার্থী হতে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ এবং সাক্ষাৎকারও দিয়েছেন। তাঁর পক্ষে গত বৃহস্পতিবার বিএনপির স্থানীয় নেতারা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র কিনেছেন। তিনি আবারও বিএনপির প্রার্থী হচ্ছেন এমন শোনা যাচ্ছে।

বিএনপির সাংসদ থাকাকালে আবু হেনা স্থানীয় এক মন্ত্রীকে জঙ্গির মদদদাতা উল্লেখ করে প্রকাশ্যে সংবাদ সম্মেলন করে আলোচনায় আসেন।

যদিও তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া না–দেওয়ার দাবিতে স্থানীয় যুবদলের নেতারা পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলনও করেছেন। দলের একটি অংশ বলছে, আসনটি বিএনপির দখলে নিতে আবু হেনা একজন শক্তিশালী প্রার্থী। এখানে তাঁর বিকল্প নেই। আবার দলের আরেকাংশ তাঁর সমালোচনা করে বলছে, আবু হেনাকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হলে তারা মানবে না।

জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও মনোনয়নপ্রত্যাশী আবদুল গফুর বলেন, আবু হেনা ১১ বছর ধরে দলের কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন না। নেতা-কর্মীদেরও খোঁজখবর রাখেননি। সংস্কারপন্থী হিসেবে দলকে বিতর্কিত করেছেন। দল তাঁকে মনোনয়ন দেবে না বলে তাঁর বিশ্বাস, আর মনোনয়ন দিলেও মানা হবে না।

জেলা বিএনপির আরেক সহসভাপতি ও ভবানীগঞ্জ পৌর শাখার সভাপতি আবদুর রাজ্জাক বলেন, আবু হেনা বিএনপির শক্তিশালী প্রার্থী হবেন। তিনি ঘুষ, অনিয়ম, দলীয়করণের ঊর্ধ্বে থেকে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁকে দিয়েই আসনটি পুনরায় উদ্ধার করা সম্ভব।

মুঠোফোনে আবু হেনা প্রথম আলোকে বলেন, তিনিই বিএনপির হারানো আসনটি উদ্ধার করেছেন। দলীয় নেতা-কর্মী ছাড়াও এলাকার সব শ্রেণির লোকজন তাঁর পাশে আছেন। প্রতিদিনই তাঁরা মুঠোফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে প্রার্থী হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। তাঁদের সাড়াও পাওয়া যাচ্ছে। দল তাঁকে মনোনয়ন দেবে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, তিনি দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাবেন না।

এ আসন থেকে বিএনপির ১২ জন দলীয় মনোনয়নের জন্য ফরম সংগ্রহ করেছেন। ইতিমধ্যে দুজন মনোনয়নপত্রও তুলেছেন।