নেতারা ঢাকায় তদবিরে ব্যস্ত, কর্মীরা খবরের অপেক্ষায়

অপেক্ষা যেন শেষ হচ্ছে না। প্রতিদিন সকাল থেকে মাঝরাত পর্যন্ত দলীয় অফিসে ভিড় করছেন নেতা-কর্মীরা। তাঁদের অপেক্ষা এই বুঝি খবর এল, তাঁদের নেতা মনোনয়ন পেয়েছেন। ঝিনাইদহ-৪ নির্বাচনী এলাকার সরকারি দলের দুই পক্ষেই এই অবস্থা চলছে।

দলটির বেশ কয়েকজন নেতা মনোনয়নপ্রত্যাশী হলেও সাবেক ও বর্তমান দুই সাংসদের সমর্থকদের মনোনয়ন নিয়ে বেশি উৎসাহ। তাঁরা পৃথক অফিসে খবরের অপেক্ষায় সময় পার করছেন।

কালীগঞ্জ উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন, ১টি পৌরসভা ও সদর উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ঝিনাইদহ-৪ আসন। এই আসনের বর্তমান সাংসদ কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল আজিম আনার ও সাবেক সাংসদ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মান্নান। দুজনই মনোনয়ন দৌড়ে লড়াই করে যাচ্ছেন।

নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মনোনয়নপ্রত্যাশী আবদুল মান্নান ও আনোয়ারুল আজিম ঢাকায় তদবির করে যাচ্ছেন। দুই নেতা একসময় একসঙ্গে থাকলেও এখন পরস্পরের কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আনোয়ারুল আজিম দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী হলেও আবদুল মান্নান তাঁকে পেছনে ফেলে টিকিট পেয়ে যান। সেই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীকে পরাজিত করে তিনি সাংসদও নির্বাচিত হন। একইভাবে ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আনোয়ারুল আজিম তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী আবদুল মান্নানকে পেছনে ফেলে দলীয় মনোনয়ন পান। তিনি বাম জোটের এক নেতার বিরুদ্ধে লড়াই করে সাংসদ নির্বাচিত হন।

আবদুল মান্নান ও আনোয়ারুল আজিমের কালীগঞ্জ সদরে রয়েছে আলাদা দলীয় কার্যালয়। এমনকি তাঁরা কেন্দ্রীয় সব কর্মসূচিও আলাদাভাবে পালন করেন। মনোনয়ন পেতে তাঁরা বেশ কয়েক মাস ধরে এলাকায় নানাভাবে মহড়া দিয়েছেন। কখনো মোটরসাইকেল আবার কখনো মিছিল করে এ মহড়া দেন। কিন্তু মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার পর থেকেই তাঁরা ঢাকায় অবস্থান করছেন।

>বর্তমান সাংসদ আনোয়ারুল আজিম আনার ও সাবেক সাংসদ আবদুল মান্নান মনোনয়ন দৌড়ে পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী।

নেতা-কর্মীরা জানান, মনোনয়ন ফরম কেনার পর থেকেই দুই নেতা তাঁদের অনুসারীদের নানান খবর দিয়ে যাচ্ছেন। আর অনুসারীরাও সেই খবর নিয়ে আশ্বস্ত হচ্ছেন। উভয় নেতার কিছু আস্থাভাজন কর্মী ও সমর্থক রয়েছেন, যাঁরা উড়ো খবরে সন্তুষ্ট হতে পারছেন না, তাই তাঁরা সকাল হলেই চলে আসছেন নেতার কার্যালয়ে। আবদুল মান্নানের সমর্থকেরা তাঁর বাসার সামনের কার্যালয়ে ভিড় করছেন। আর আনোয়ারুল আজিমের সমর্থকেরা তাঁর বাসার সামনের দলীয় কার্যালয়ে ভিড় করছেন। মাঝেমধ্যে খবর পেয়ে কখনো তাঁরা খুশি হচ্ছেন, আবার কখনো মন খারাপ করছেন। উভয় পক্ষই ভালো-খারাপ খবরের মধ্যে সময় পার করছেন।

গতকাল দুপুর ১২টার দিকে আবদুল মান্নানের বাসার সামনের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, দলটির সাবেক উপজেলা সাধারণ সম্পাদক ইসরাইল হোসেন, ইউনিয়ন নেতা আফতাব উদ্দিন, ইমদাদুল হক, পৌর কাউন্সিলর মার্জেদ আলী, তুহিঙ্গির আলম, আবদুর রশিদ, রাশেদ কবির, দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ নেতা কর্মীদের নিয়ে অপেক্ষা করছেন। ইসরাইল হোসেন বলেন, তাঁরা আশাবাদী তাঁদের নেতাই মনোনয়ন নিয়ে ফিরবেন।

আধা ঘণ্টা পর আনোয়ারুল আজিমের বাসার সামনে কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানেও নেতা-কর্মীরা অপেক্ষায় করছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সাংসদের বড় ভাই আবেদ আলী, ভারপ্রাপ্ত মেয়র আশরাফুল আলম, ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, কৃষক লীগের নেতা আবুল কালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা সাখাওয়াত হোসেন প্রমুখ। ভারপ্রাপ্ত মেয়র আশরাফ হোসেন দাবি করেন, তাঁদের নেতা এলাকার মানুষের সঙ্গে আছেন। তাই তিনিই মনোনয়ন পাবেন।