অন্য রকম লড়াইয়ে তাঁরা
কিশোরগঞ্জ-৪ থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী সাংসদ রেজওয়ান আহাম্মদ। তিনি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের বড় ছেলে।
কিশোরগঞ্জ-৬ থেকে এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের ছেলে সাংসদ নাজমুল হাসান। প্রায় সবার ধারণা, ওই দুই আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকলেও শেষে দলীয় টিকিট পাবেন রাষ্ট্রপতিদের সন্তানেরা। একইভাবে সর্বমহলের ধারণা, রেজওয়ান আহাম্মদ ও নাজমুল হাসানের প্রতিদ্বন্দ্বী হতে চলেছেন তাঁদের বাবাদের প্রতিদ্বন্দ্বীরা। বিষয়টি নির্বাচনী মাঠে বেশ আলোচিত হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ-৪ থেকে ধানের শীষ প্রতীক পেতে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা ফজলুর রহমান। আর কিশোরগঞ্জ-৬ থেকে এককভাবে মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-সাংগঠনিক সম্পাদক শরীফুল আলম। ফজলুর রহমান এর আগে দুবার রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে পরাজিত হন। জিল্লুর রহমানের সঙ্গে একবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান শরীফুল আলম।
ভৈরব ও কুলিয়ারচর নিয়ে কিশোরগঞ্জ-৬। আর হাওর উপজেলা অষ্টগ্রাম, ইটনা ও মিঠামইন নিয়ে কিশোরগঞ্জ-৪।
ফজলুর রহমান ১৯৮৬ সালে কিশোরগঞ্জ-১ (সদর) আসন থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে বিজয়ী হন। তিনি ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য ছিলেন। আসনটি থেকে বিএনপি কেবল একবার জয় পায়।
দলীয় মনোনয়ন ইস্যুতে ফজলুর রহমান কখনোই আবদুল হামিদের সঙ্গে পেরে ওঠেননি। ওই দুঃখবোধ থেকে ১৯৯৬ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে অল্প ভোটে হেরে যান ফজলুর রহমান। ২০০১ সালে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী হয়ে পরাজিত হন। পরে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি কিশোরগঞ্জ-৪ থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে আবদুল হামিদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান।
এবার আসনটি থেকে ফজলুর রহমান ছাড়াও দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন আরও চারজন। তাঁরা হলেন জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, ছাত্রলীগ ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দেওয়া সৈয়দ মহিতুল ইসলাম, হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের সাবেক ট্রাস্টি সুরঞ্জন ঘোষ ও সাবেক সাংসদ ফরহাদ আহমেদের ছেলে ফেরদৌস আহমেদ।
বাবার দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে লড়তে কেমন লাগবে—এমন প্রশ্নে মুঠোফোনে রেজওয়ান আহাম্মদ বলেন, ‘তিনি (ফজলুর রহমান) আমার বাবার সঙ্গে ভোটের লড়াই পেরে ওঠেননি। আশা করি, আমার সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারবেন না।’
এ ক্ষেত্রে ফজলুর রহমানেরও ভাষ্য হলো, ‘বাবার (আবদুল হামিদ) আমল আর বর্তমান সময়ের রাজনৈতিক পরিবেশের মধ্যে বড় পার্থক্য তৈরি হয়েছে। বাবার আমলে এলাকায় গিয়ে রাজনীতি করতে পেরেছি। কিন্তু ছেলের আমলে এলাকায় যাওয়া নিষেধ।’
নৌকা প্রতীক পেতে রেজওয়ান আহাম্মদের পাশাপাশি কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরুল আহসানও আছেন।
জিল্লুর রহমানেরও শেষ নির্বাচন ছিল নবম জাতীয় সংসদ। ওই নির্বাচনে শরীফুল আলমকে তিনি পরাজিত করেন। জিল্লুর রহমান রাষ্ট্রপতি হলে তাঁর শূন্য আসনে উপনির্বাচনে অংশ নেওয়ার মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে আসেন নাজমুল হাসান।
এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী নাজমুল হাসান ছাড়াও আছেন ভৈরব উপজেলা পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ইফতেখার হোসেন।
আসনটি থেকে শরীফুল আলম দলটির একক মনোনয়নপ্রত্যাশী। মুঠোফোনে চেষ্টা করেও সাংসদ নাজমুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। পুরোনো প্রতিদ্বন্দ্বীর ছেলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হলে কেমন হবে—এমন প্রশ্নে শরীফুল আলম বলেন, ‘জিল্লুর রহমানের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছিলাম। এখন আছি শঙ্কায়। শঙ্কা নিয়ে ছেলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে।’