দেশে ১৪ শতাংশ শিশু ঠিক সময়ের আগে জন্ম নেয়। পৃথিবীর যে ১০টি দেশে অকালিক শিশু বেশি জন্মায়, সে তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। সময়ের আগে জন্ম নেওয়া ২০ হাজার শিশু প্রতিবছর মারা যায়। সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, এই মৃত্যু ঠেকাতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘কম জন্ম-ওজন ও অসুস্থ নবজাতকের যত্নে পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করি’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে সরকারি কর্মকর্তারা এ তথ্য দেন। বিশ্ব অকালিক শিশু দিবস সামনে রেখে জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) সহযোগিতায় প্রথম আলো এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। ১৭ নভেম্বর এই দিবস পালিত হবে।
দেশে নবজাতক (২৮ দিন পর্যন্ত বয়স) মৃত্যু সন্তোষজনকভাবে কমেনি উল্লেখ করে মূল উপস্থাপনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নবজাতক স্বাস্থ্য কর্মসূচির উপকর্মসূচি ব্যবস্থাপক ডা. মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, দেশে প্রতিবছর ছয় লাখের বেশি শিশু সময়ের আগেই জন্মায়। এরা মোট জন্ম নেওয়া শিশুর ১৪ শতাংশ।
ডা. মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, গর্ভধারণের পর ৩৭ সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার আগে জন্মালে সে অকালিক শিশু। এসব শিশুর শরীরে তাপমাত্রা কম থাকে, ফুসফুসে সমস্যা থাকে, এদের সংক্রমণ প্রবণতা বেশি, খাওয়ার সামর্থ্য কম, ওজন বৃদ্ধিতে সমস্যা থাকে।
মাতৃ, নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ্য কর্মসূচির বিষয়ভিত্তিক পরিচালক সুলতান মো. শামসুজ্জামান বলেন, অকালিক শিশু জন্মে এমন সব কারণ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে হবে।
বাংলাদেশ নিওনেটাল ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক তাহমিনা বেগম বলেন, ৪০ সপ্তাহ মায়ের গর্ভে থেকে বড় হওয়ার পরিবেশ থেকে বঞ্চিত হয় অকালিক শিশু। বেঁচে থাকলে তার নানা সমস্যা হয়। এসব শিশুর চোখে সমস্যা হয়। জন্মের এক সপ্তাহের মধ্যে চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে নিতে হবে।
ইউনিসেফের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ শামিনা শারমীন বলেন, অকালিক শিশুর যত্নে ২০০টি হাসপাতালে ক্যাঙারু মাদার কেয়ার (কেএমসি) কেন্দ্র খোলার কথা। বর্তমানে ৪০টির মতো কেন্দ্র চালু আছে। ৫০০ নার্সকে এসব শিশুর যত্নে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন কি না বা কেএমসি কেন্দ্রগুলো ঠিকমতো চলছে কি না, সে ব্যাপারে নজরদারি বাড়ানো দরকার।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ্য কর্মসূচির ব্যবস্থাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, স্বাস্থ্যকর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি, সেবা প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রাখা, সেবার মান দেখতে ৬৪ জেলায় জোর দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) শামস এল আরেফিন বলেন, অকালিক শিশুর ব্যাপারে নিজস্ব কোনো তথ্য-উপাত্ত নেই। হাসপাতালের পরিমাপযন্ত্র ঠিক আছে কি না, যাঁরা পরিমাপ করেন তাঁদের সঠিক জ্ঞান বা দক্ষতা আছে কি না, তা বড় ব্যাপার। এসব ঠিক না থাকলে এ ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তনও ঠিকভাবে পরিমাপ করা যাবে না।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের নবজাতক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক এম এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, ১৩-১৪ বছরের মেয়েরা মা হচ্ছে। এরা অকালিক শিশু জন্ম দেয়। এটা সামাজিক সমস্যা। তিনি বলেন, মাঠপর্যায়ে কেএমসি সেবাকে জোরদার করতে হবে। মানুষকে বোঝাতে হবে, এই সেবায় নবজাতকের সমস্যা কমে, মৃত্যু কমে।
সম্প্রতি মাঠপর্যায়ের অনেক প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছেন ইউএসএআইডির হেলথ সিস্টেম স্ট্রেনদেনিং শাখার প্রধান ইফতেকার রশিদ। তিনি বলেন, মাঠপর্যায়ে কর্মীদের কেএমসি সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসের অভাব আছে। অন্যদিকে নবজাতক সেবাকেন্দ্রগুলোতে শয্যার চেয়ে রোগী বেশি দেখা গেছে।
নবজাতকের সেবার আলোচনায় মায়ের দুধ খাওয়ানোর বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে বলে মত দেন সেভ দ্য চিলড্রেনের মামণি কর্মসূচির জ্যেষ্ঠ পরামর্শক উজমা সাইদ। ব্র্যাকের মা, নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ্য কর্মসূচির ব্যবস্থাপক রেশমা খানম বলেন, সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, খাদ্যবৈচিত্র্য জন্ম-ওজন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।