সেরা করদাতা সাংবাদিক মতিউর রহমান ও মাহ্ফুজ আনাম
সাংবাদিক শ্রেণিতে এবারও সেরা করদাতা হচ্ছেন প্রথম আলো সম্পাদক ও প্রকাশক মতিউর রহমান এবং ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার–এর সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম। করদাতার দিক থেকে সেরা পাঁচ সাংবাদিকের অন্যরা হচ্ছেন চ্যানেল আইয়ের পরিচালক (বার্তা) শাইখ সিরাজ, চট্টগ্রামের দৈনিক আজাদী–এর সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল মালেক এবং বাংলাদেশ প্রতিদিন–এর সম্পাদক নঈম নিজাম।
অন্যবারের মতো এবারও সিটি করপোরেশন ও জেলা পর্যায়ে সর্বোচ্চ করদাতা, দীর্ঘ সময় ধরে কর দিচ্ছেন এমন করদাতা, সর্বোচ্চ করদাতা নারী ও তরুণ করদাতার তালিকা প্রকাশ করেছে এনবিআর। এবার ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকায় সর্বোচ্চ করদাতার তালিকায় রয়েছেন ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান। দীর্ঘ বছর ও নিয়মিত কর দেওয়ায় গত বছর লতিফুর রহমান পরিবার এনবিআর থেকে ‘কর বাহাদুর পরিবার’ স্বীকৃতি পেয়েছিল। এবার অবশ্য নতুন করে কোনো পরিবারকেই কর বাহাদুর পরিবারের স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে না।
কোম্পানি পর্যায়ে ‘প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া’ শ্রেণিতে সেরা চার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তিনটিই ট্রান্সকম গ্রুপের সঙ্গে সম্পর্কিত। এগুলো হচ্ছে ট্রান্সক্রাফট লিমিটেড, মিডিয়া ওয়ার্ল্ড লিমিটেড এবং মিডিয়া স্টার লিমিটেড। ট্রান্সক্রাফট লিমিটেড থেকে প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকা ছাপা হয়। এই শ্রেণিতে এবারের সেরা চার প্রতিষ্ঠানের অন্যটি হচ্ছে ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেড।
জাতীয় ট্যাক্সকার্ড নীতিমালা, ২০১০ (সংশোধিত) অনুযায়ী গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকসহ সেরা করদাতা মোট ১৪১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামের তালিকা উল্লেখ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করেছে। এই প্রজ্ঞাপনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
ব্যক্তিপর্যায়ে ট্যাক্সকার্ড দিতে ‘বিশেষ শ্রেণি’ এবং ‘আয়ের উৎস বা পেশা’ নামের দুটি শ্রেণি করা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে। বিশেষ শ্রেণির মধ্যে রয়েছে সিনিয়র সিটিজেন, গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী, নারী এবং ৪০ বছরের কম বয়সী তরুণ। অন্যদিকে আয়ের উৎস বা পেশার মধ্যে ১৩ ক্যাটাগরির মধ্যে রয়েছেন ব্যবসায়ী, বেতনভোগী, চিকিৎসক, সাংবাদিক, আইনজীবী, প্রকৌশলী, স্থপতি, হিসাববিদ, নতুন করদাতা, খেলোয়াড়, অভিনেতা/অভিনেত্রী, শিল্পী (গায়ক/গায়িকা) এবং অন্যান্য। আর কোম্পানি পর্যায়ে করা হয়েছে ১৪টি শ্রেণি।
আলাদা শ্রেণি করে তিন বছর আগে থেকে সেরা করদাতাদের ট্যাক্স কার্ড দিয়ে আসছে এনবিআর। প্রথমবার ২০১৬ সালে ও দ্বিতীয়বার ২০১৭ সালেও মতিউর রহমান এবং মাহ্ফুজ আনাম সেরা করদাতা হন। আবার, এবারের মতো ওই দুই বছরেও ট্রান্সক্রাফট লিমিটেড, মিডিয়া ওয়ার্ল্ড লিমিটেড এবং মিডিয়া স্টার লিমিটেড ‘প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া’ শ্রেণিতে সেরা করদাতা পুরস্কার পেয়ে আসছে।
এদিকে কোম্পানি পর্যায়েও এবার ট্রান্সকম গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ট্রান্সকম বেভারেজেস সেরা করদাতার তালিকায় রয়েছে। খাদ্য ও আনুষঙ্গিক শ্রেণিতে সেরা করদাতা হিসেবে ট্রান্সকম বেভারেজেসের পাশাপাশি রয়েছে নেসলে বাংলাদেশ ও অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ।
এবার যে পাঁচজন সাংবাদিক সেরা করদাতা হচ্ছেন তাঁদের মধ্যে চারজন গতবারও ছিলেন। গতবার সমকাল–এর সম্পাদক প্রয়াত গোলাম সারওয়ার ছিলেন সেরা করদাতাদের একজন। সে জায়গায় এবার এসেছে বাংলাদেশ প্রতিদিন–এর সম্পাদক নঈম নিজামের নাম।
সেরা করদাতা হিসেবে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে এবারও ১৪১টি ট্যাক্সকার্ড দেবে এনবিআর। এর মধ্যে ব্যক্তি রয়েছেন ৭৬ জন, বাকিগুলো প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কোম্পানি পর্যায়ে ট্যাক্সকার্ড পাচ্ছে ৫৪টি কোম্পানি। কোম্পানিগুলোকে ট্যাক্সকার্ড দেওয়া হবে ১৪টি ক্যাটাগরিতে। এগুলো হচ্ছে ব্যাংকিং, অব্যাংকিং আর্থিক, টেলিযোগাযোগ, প্রকৌশল, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক, জ্বালানি, পাটশিল্প, স্পিনিং ও টেক্সটাইল, ওষুধ ও রসায়ন, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া, আবাসন, তৈরি পোশাক, চামড়াশিল্প ও অন্যান্য।
প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যান্য করদাতা পর্যায়ে চারটি ক্যাটাগরিতে দেওয়া হবে আরও ১১টি ট্যাক্সকার্ড। ক্যাটাগরিগুলো হচ্ছে ফার্ম, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, ব্যক্তিসংঘ ও অন্যান্য।
যোগ্য করদাতা হিসেবে সবাইকে চলতি মাসেই আনুষ্ঠানিকভাবে ট্যাক্সকার্ড ও সম্মাননা দেবে সরকার। নীতিমালা অনুযায়ী, ট্যাক্সকার্ডধারীদের সরকার বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠান এবং সিটি করপোরেশন, পৌরসভাসহ স্থানীয় সরকার আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনায় আমন্ত্রণ জানাবে। যেকোনো ভ্রমণে সড়ক, বিমান বা জলপথে টিকিট পাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁরা অগ্রাধিকার পাবেন।
স্ত্রী-স্বামী, নির্ভরশীল পুত্র-কন্যা নিজেদের চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কেবিন–সুবিধাও পাবেন তাঁরা। এ ছাড়া বিমানবন্দরে সিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার এবং তারকা হোটেলসহ সব আবাসিক হোটেলে বুকিং পাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁরা অগ্রাধিকার পাবেন। ট্যাক্সকার্ড দেওয়ার পর থেকে এর মেয়াদ থাকবে এক বছর।
সিনিয়র সিটিজেন
এ শ্রেণিতে ট্যাক্সকার্ড পাবেন স্যামুয়েল এস চৌধুরী, তপন চৌধুরী ও রাজশাহীর অনিতা চৌধুরী এবং গোলাম দস্তগীর গাজী ও খন্দকার বদরুল হাসান। তাঁদের মধ্যে সাংসদ গোলাম দস্তগীর গাজী বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ) করদাতা। স্যামুয়েল এস চৌধুরী ও অনিতা চৌধুরী রাজশাহী কর অঞ্চল এবং খন্দকার বদরুল হাসান ঢাকা কর অঞ্চল ৩-এর করদাতা।
গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা
এ শ্রেণিতে ট্যাক্সকার্ড পাবেন ঢাকার চারটি কর অঞ্চলের লে. জেনারেল আবু সালেহ মো. নাসিম (অব.), মো. নাসির উদ্দিন মৃধা, এস এম আবদুল ওয়াহাব, মো. ইদ্রিস আলী মিয়া এবং মো. আতাউর রউফ।
নারী
এ শ্রেণিতে ঢাকার কর অঞ্চল–৩-এর রুবাইয়াত ফারজানা হোসেন, কর অঞ্চল–৬-এর মাহমুদা আলী শিকদার ও কর অঞ্চল–৯-এর পারভীন হাসান এবং রাজশাহী কর অঞ্চলের রত্না পাত্র ও রংপুর কর অঞ্চলের নিশাত ফারজানা চৌধুরী ট্যাক্সকার্ড পাবেন।
তরুণ
এ শ্রেণিতে রয়েছেন এলটিইউর করদাতা নাফিস সিকদার, ঢাকার কর অঞ্চল–৪-এর গাজী গোলাম মতুর্জা, কর অঞ্চল–৩-এর মো. হাসান, কর অঞ্চল–১০–এর জুলফিকার হোসেন মাসুদ রানা এবং চট্টগ্রাম কর অঞ্চল–৪-এর মো. আমজাদ খান।
প্রতিবন্ধী
এ শ্রেণিতে ঢাকার কেউ পাননি। পাচ্ছেন চট্টগ্রামের সুকর্ণ ঘোষ, সিলেটের মো. মামুনুর রশিদ ও খুলনার কাজী আখতার হোসেন।
ব্যবসায়ী
এ শ্রেণিতে রয়েছেন ঢাকার কর অঞ্চল–২-এর মো. কাউছ মিয়া, কর অঞ্চল–১২-এর আব্দুল কাদির মোল্লা, কর অঞ্চল–১৫-এর কামরুল আশরাফ খান, এলটিইউর সৈয়দ আবুল হোসেন এবং কর অঞ্চল–১০-এর মো. নুরুজ্জামান খান।
বেতনভোগী
কর অঞ্চল–৩ ও ৮-এর এ শ্রেণির পাঁচজনের ঠিকানা একই। তাঁরা হলেন লায়লা হোসেন, মোহাম্মদ ইউসুফ, হোসনে আরা হোসেন, খাজা তাজমহল এবং এম এ হায়দার হোসেন।
চিকিৎসক
এ শ্রেণির সেরা পাঁচ করদাতাই কর অঞ্চল–১০-এর। তাঁরা হলেন এ কে এম ফজলুল হক, প্রাণ গোপাল দত্ত, জাহাঙ্গীর কবির, এন এ এম মোমেনুজ্জামান ও মো. নুরুল ইসলাম।
আইনজীবী
এ শ্রেণির সবাই কর অঞ্চল–৮-এর। তালিকায় রয়েছেন মাহবুবে আলম, শেখ ফজলে নূর তাপস, আহসানুল করিম, কাজী মুহাম্মদ তানজীবুল আলম ও নিহাদ কবির।
খেলোয়াড়
এ শ্রেণিতে রয়েছেন তিন ক্রিকেটার। কর অঞ্চল–৭-এর সাকিব আল হাসান এবং কর অঞ্চল–১-এর তামিম ইকবাল ও মাশরাফি বিন মুর্তজা।
অভিনেতা/অভিনেত্রী
এ শ্রেণিতে রয়েছেন মাহফুজ আহমেদ, এম এ জলিল অনন্ত এবং এস এ আবুল হায়াত।
শিল্পী
এ শ্রেণিতে রয়েছেন রুনা লায়লা, তাহসান রহমান খান ও এস ডি রুবেল।
স্থপতি
এ শ্রেণিতে তিনজন পাবেন ট্যাক্সকার্ড। তাঁরা হলেন ফয়েজ উল্লাহ, হাসান সামস উদ্দীন ও ইকবাল হাবিব।
প্রকৌশলী
এ শ্রেণিতে ঢাকার কেউ পাচ্ছেন না। পাচ্ছেন চট্টগ্রামের মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, রাজশাহীর মো. হাফিজুর রহমান ও বগুড়ার মোহাম্মদ হামিদুল হক।
হিসাবরক্ষক
এ শ্রেণিতে কার্ড পাচ্ছেন ঢাকার মো. মোক্তার হোসেন, এম বি এম লুৎফুল হাদী ও বিমলেন্দু চক্রবর্ত্তী।
নতুন করদাতা
এ শ্রেণিতে সাতজনের মধ্যে ঢাকার মিয়া মনিকা রফিকুলোভনা, তাফিজুল ইসলাম পিয়াল ও সাইফুল ইসলাম, সিলেটের রানা মালিক, মোসাম্মাৎ সেলিনা আক্তার ও রাসেল রায় এবং রাজশাহীর মোছা. ছিয়াতুন নেছা।
অন্যান্য
এলটিইউর করদাতা এ শ্রেণিতে পাচ্ছেন সদর উদ্দিন খান, আবু মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন খান ও নজরুল ইসলাম মজুমদার।
ব্যাংকিং
প্রাতিষ্ঠানিক করদাতার এ শ্রেণিতে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, এইচএসবিসি, সাউথইস্ট ব্যাংক ও পূবালী ব্যাংক।
অব্যাংকিং আর্থিক
এ শ্রেণিতে রয়েছে আইডিএলসি ফাইন্যান্স, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফাইন্যান্স ফান্ড এবং উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট।
খাদ্য ও আনুষঙ্গিক
প্রাতিষ্ঠানিক করদাতার এ শ্রেণিতে রয়েছে নেসলে বাংলাদেশ, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ ও ট্রান্সকম বেভারেজেস।
প্রকৌশল
এ শ্রেণিতে বিএসআরএম স্টিলস, পিএইচপি কোল্ড রোলিং মিলস এবং পিএইচপি নফ কন্টিনিউয়াস গ্যালভানাইজিং মিলস কার্ড পাচ্ছে।
তৈরি পোশাক
এ শ্রেণিতে কার্ড পাচ্ছে রিফাত গার্মেন্টস, জিএমএস কম্পোজিট, দ্যাটস ইট স্পোর্টস ওয়্যার, ফোর এইচ ফ্যাশন, কেডিএস গার্মেন্টস ও অ্যাপেক্স লেনজারি।
এ ছাড়া টেলিযোগাযোগে গ্রামীণফোন; জ্বালানিতে তিতাস গ্যাস, সিলেট গ্যাস ও শেভরন বাংলাদেশ; পাটশিল্পে জনতা জুট, সুপার জুট ও আইয়ান জুট; আবাসনে স্পেসজিরো, বে ডেভেলপমেন্টস ও স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার্স; চামড়াশিল্পে বাটা শু, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার ও লালমাই ফুটওয়্যার; অন্যান্য শ্রেণিতে ব্রিটিশ–আমেরিকান টোব্যাকো, মেটলাইফ, লাফার্জহোলসিম ও নিটল মোটরস; অন্যান্য করদাতার ফার্ম পর্যায়ে ওয়ালটন মাইক্রোটেক করপোরেশন, এস এন করপোরেশন, ওয়ালটন প্লাজা ও এ এস বি এস কার্ড পাচ্ছে।