>
- প্রধানমন্ত্রীর ইঙ্গিত, ৭০ জন সাংসদ মনোনয়ন ঝুঁকিতে
- দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গেলে আজীবনের জন্য বহিষ্কার
- মন্ত্রী-সাংসদদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে কেন্দ্রে
- তফসিল ঘোষণার পর দলীয় দ্বন্দ্ব আরও বাড়তে পারে
- দ্বন্দ্ব যেন সংঘাতে রূপ না নেয়, সে জন্য তৎপরতা
- নির্বাচন পরিচালনার জন্য ৩৩ সদস্যের কোর কমিটি
- নির্বাচন পরিচালনায় ১৫টি উপকমিটির নাম ঘোষণা
আগামী নির্বাচনের জন্য আটঘাট বেঁধেই মাঠে নেমেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে দলীয় কোন্দল, প্রতিটি আসনে প্রার্থীজট দুশ্চিন্তায় ফেলেছে দলের নীতিনির্ধারকদের। এ জন্য বিদ্রোহী ঠেকাতে দলের পক্ষ থেকে কঠোর শাস্তির বার্তা দেওয়া হয়েছে।
ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে—এই বার্তা আওয়ামী লীগের সব স্তরে পৌঁছে গেছে। এ অবস্থায় দলটির নীতিনির্ধারক ও মন্ত্রী-সাংসদের মধ্যে দুই ধরনের শঙ্কা কাজ করছে। নীতিনির্ধারকদের ধারণা, মনোনয়নবঞ্চিতরা বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচনে থাকবেন কিংবা তলেতলে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করতে পারেন, যা দলীয় প্রার্থীর ভরাডুবির কারণ হতে পারে।
নির্বাচন সামনে রেখে গত শুক্রবার গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, সংসদীয় দল ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথ সভা হয়। এতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা ইঙ্গিত দেন যে ৭০ জন বর্তমান সাংসদ মনোনয়ন ঝুঁকিতে আছেন। পাশাপাশি তিনি আরও হুঁশিয়ারি দেন, কেউ মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গেলে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হবে। বৈঠকে নির্বাচন পরিচালনার জন্য ৩৩ সদস্যের একটি কোর কমিটি ও ১৫টি উপকমিটির নাম ঘোষণা করা হয়।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা দেশি-বিদেশি নানা সংস্থা দিয়ে জরিপ চালিয়েছেন। এসব জরিপের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে যাঁরা ভালো অবস্থানে আছেন, তাঁদের একটি তালিকা করেছেন। এ তালিকায় মন্ত্রী, সাংসদের পাশাপাশি নতুন প্রার্থীও আছেন। আর জনপ্রিয়তার দিক থেকে পিছিয়ে, এমন তালিকাও আছে। এই সংখ্যাটা প্রায় ১০০। কাউকে কাউকে নিজের অবস্থান উন্নতির জন্য দল থেকে আগেই তাগিদ দেওয়া হয়েছিল। এরপর অনেকে নিজের অবস্থান কিছুটা সংহত করতে সক্ষমও হন। তবে এখন পর্যন্ত অন্তত ৭০ জন মনোনয়ন না পাওয়ার ঝুঁকিতে আছেন।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র জানায়, দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রতিদিনই নামে-বেনামে মন্ত্রী-সাংসদদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে। কারও কারও বিরুদ্ধে দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছেও স্থানীয় নেতারা অভিযোগ দিয়েছেন। তফসিল ঘোষণার পর এই দ্বন্দ্ব আরও বাড়তে পারে। তবে তা যেন সংঘাতে রূপ না নেয়, সে জন্য তৎপর নীতিনির্ধারকেরা।
আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা প্রথম আলোকে বলেন, ১০ বছর ধরে দল ক্ষমতায়। মন্ত্রী-সাংসদদের অনেকেই প্রভাব খাটাতে গিয়ে অজনপ্রিয় হয়ে পড়েছেন। নতুন পয়সাওয়ালা হয়েছেন অনেকেই। তাঁরাও মনোনয়ন চান। ফলে মুখোমুখি অবস্থার তৈরি হয়েছে। এ জন্য ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ আর দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দূরত্বের কারণে এক ডজন সাংসদকে এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা, প্রতিহত করার ডাক কিংবা মনোনয়ন না দেওয়ার জন্য প্রকাশ্যে কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। ওই নেতা আরও বলেন, নির্বাচন হবে সংসদ বহাল রেখে। সে ক্ষেত্রে বর্তমান সাংসদের মধ্য থেকে যাঁরা মনোনয়ন পাবেন না, তাঁরাও সাংসদ হিসেবে বহাল থাকবেন। দীর্ঘদিনের প্রভাব তো থাকছেই। ফলে ভোটের মাঠে নতুন প্রার্থীকে হারাতে সাংসদ ভূমিকা রাখতেই পারেন।
শুক্রবারের যৌথসভা শেষে অনেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সালাম করেন। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, সালাম যাঁরা করেছেন, তাঁদের সালাম নিয়েছেন তিনি। তবে মনোনয়ন পাবেন কি না, সেই নিশ্চয়তা নেই। আর মনোনয়ন না পেয়ে দলের বিরোধিতা করলে এবং এ কারণে দল হারলে করুণ পরিণতি ভোগ করতে হবে—এটা যেন সবাই মনে রাখেন। মনোনয়ন কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে যৌথসভায় শেখ হাসিনা নেতাদের উদ্দেশে বলেন, এ বিষয়ে এখন অনানুষ্ঠানিক প্রস্তুতি চলবে। তফসিল ঘোষণার পর আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও অন্যতম মুখপাত্র মাহবুব উল আলম হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের নির্বাচনের সব প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত। দলীয় নেতাদের বিদ্রোহী হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এবার কেউ দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করলে আজীবন নিষিদ্ধ হবেন, এটা দলীয় প্রধান জানিয়ে দিয়েছেন। অতীতে বিদ্রোহীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হলেও এবার আর কোনো মাফ হবে না।
একাধিক কমিটি গঠন
আগামী নির্বাচনে দলের কৌশল নির্ধারণ এবং সমন্বয় করার জন্য একটি কোর কমিটি গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এর আগেই দলের কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছিল। শুক্রবারের সভায় এই কমিটির বাইরে ৩৩ সদস্যের একটি কোর কমিটি করা হয়। এই কমিটির চেয়ারম্যান শেখ হাসিনা, কো-চেয়ারম্যান উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এইচ টি ইমাম এবং সদস্যসচিব দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এই কমিটির সদস্য প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। কিছু তরুণ নেতাকেও রাখা হয়েছে কমিটিতে।
এর বাইরে নির্বাচন পরিচালনার জন্য বিষয়ভিত্তিক ১৫টি উপকমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে নির্বাচনের ইশতেহার প্রণয়ন, প্রচারকৌশল ঠিক করা, পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ, আইনি সহায়তাসহ নানা বিষয় রয়েছে।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ–সংক্রান্ত উপকমিটির নেতৃত্বে রাখা হয়েছে সাংসদ সাবের হোসেন চৌধুরীকে। শিগগিরই প্রতিটি নির্বাচনী এলাকা থেকে দুজন করে ঢাকায় এনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন। প্রশিক্ষণ পেয়ে তাঁরা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি কেন্দ্রের পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দেবেন। কেন্দ্রীয় উপকমিটি তা তত্ত্বাবধান করবে। আর ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির প্রধান দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাক ও সদস্যসচিব উপদপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া। ইতিমধ্যে এই কমিটির নেতারা তিনটি বৈঠক করেছেন।