বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের উদ্দেশে ১৪ দলের মুখপাত্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, ‘হতাশায় না থেকে এই নির্বাচনে আসুন। আন্দোলন করে বা নির্বাচন করে আপনাদের নেত্রীকে মুক্ত করুন। আমাদের কোনো আপত্তি নেই। সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আছি, আওয়ামী লীগ চিরকালই জনগণের ভালোবাসায় বন্দী আছে, চিরদিনই বন্দী থাকবে।’
ধানমন্ডিতে একটি কমিউনিটি সেন্টারে আজ শনিবার দুপুরে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম এ মন্তব্য করেন।
৯, ১০ ও ১১ অক্টোবর রাজশাহী, নাটোর ও খুলনায় কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এই সমাবেশ কীভাবে সফল করা যায় এবং সমাবেশ ঘিরে নিজেদের প্রস্তুতির জন্য আজ বৈঠকে বসে ১৪ দল। এ ছাড়া বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন ঘিরে বিএনপি-জামায়াত আবারও যদি কোনো ধরনের নাশকতা কিংবা নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করে, সেটি জোটবদ্ধভাবে কীভাবে মোকাবিলা করা হবে—সেসব বিষয়ও বৈঠকে আলোচনায় আসে। কেন্দ্রীয় ১৪ দলের নেতারা মনে করছেন, একাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি-জামায়াত আবারও নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। এই ষড়যন্ত্র ঠেকানোর জন্য তাঁরা নিজেরা প্রস্তুত এবং নেতা-কর্মীদের মধ্যে এই বার্তা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করবে ১৪ দল।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের (বিএসপিপি) এক অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমি একটি কথা খুব সিরিয়াসলি বলছি, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন। তাঁকে মুক্তি না দিলে আপনারাও মুক্ত থাকতে পারবেন না। তাঁকে মুক্তি না দিলে যে সংকট তৈরি হবে, তা আপনারা মোকাবিলা করতে পারবেন না।’
মির্জা ফখরুল ইসলামের বক্তব্যের সমালোচনা করে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আওয়ামী লীগ নাকি দেউলিয়া হয়ে গেছে? দেউলিয়া কখন হয়? যখন কর্মী থাকে না, সংগঠন থাকে না, তখন দেউলিয়া হয়। আর বিএনপির অবস্থা কী? নেতাই এখন নেই, এখন নেতা ভাড়া করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, বিএনপি যখন দেউলিয়ার কথা বলে, এটি তামাশা ছাড়া কিছুই না। বিএনপিকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে এবং হুমকি-ধমকি না দেওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।
মন্ত্রী নাসিম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কোথায় বন্দী আছে? আওয়ামী লীগ একমাত্র জনগণের ভালোবাসার মধ্যে বন্দী আছে। এই ভালোবাসাকে আমরা ছোট করতে চাই না। কোনো দিন চিন্তাও করি না। তাঁরা একটি হতাশা থেকে এসব কথা বলেন। আপনার (মির্জা ফখরুল) নেত্রী আইন অনুযায়ী গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাই আইনের পথ দেখেন। তাঁর ব্যারিস্টার সহকর্মীরা কী করছেন? এত দিনেও মুক্ত করতে পারলেন না?’
এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদকে ইঙ্গিত করে নাসিম বলেন, ‘বিএনপির একজন ব্যারিস্টার নেতা আছেন। তিনি প্রতিনিয়ত দিন ঘোষণা করেন, মাস ঘোষণা করেন। একজন উকিল যখন মক্কেল ধরেন, তখন সব সময় বলে যান—তুমি বেঁচে যাবে। ওই ব্যারিস্টার নেতাও এখন এই কথা বলছেন। বিএনপিকে অক্সিজেন দিয়ে যাচ্ছেন। এই ধরনের ব্যারিস্টার ধরে লাভ হবে না।’
১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্র নাসিম প্রশ্ন করেন, ‘বিএনপি প্রতিনিয়ত আন্দোলনের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। কিসের আন্দোলন? কার বিরুদ্ধে আন্দোলন হবে? কার জন্য আন্দোলন হবে? আমরা এখনো বলছি, আপনারা নির্বাচনে আসুন, প্রস্তুতি নিন।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হোন। পানি ঘোলা করার চেষ্টা করবেন না। দয়া করে এটা করবেন না। এটা করে লাভও হবে না। কোনোভাবেই কেউ নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না।’
জাতীয় নির্বাচনে বিএনপিকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘দেশবাসী এখন দিন গুনছে কখন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জনগণ তার ইচ্ছা অনুযায়ী মতামত ব্যক্ত করতে পারবে। প্রায় সব দলই নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট নানা রকম বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নানা রকম হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। দেশ যখন নির্বাচনে প্রস্তুত হয়ে গেছে, যখন সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে, এটা মোটামুটি ঠিক হয়ে গেছে। তখন কী কারণে বিএনপি বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে, আমরা বুঝতে পারি না।’
সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়ার সভাপতিত্বে বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, জাসদের একাংশের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, জাতীয় পার্টির (জেপি) মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য আনিসুর রহমান মল্লিক, তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন, গণআজাদী লীগের এস কে শিকদার, বাসদের রেজাউর রশিদ খান প্রমুখ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।