মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথে নাব্যতা–সংকটে টানা চার দিন ধরে বন্ধ ফেরি চলাচল। নাব্যতা–সংকট নিরসনে নৌপথে বিভিন্ন অংশে একাধিক খননযন্ত্র ব্যবহার করে খননকাজ করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ দাবি, আজ শনিবার সন্ধ্যায় খননকাজ শেষ হলে নৌপথটি সচল হতে পারে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ড্রেজিং বিভাগের সূত্র জানিয়েছে, ধীরে ধীরে পদ্মা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। পানির সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে পলি ভেসে আসছে। নৌপথের গুরুত্বপূর্ণ দুটি চ্যানেলে সেই পলি জমা হয়ে সৃষ্টি হচ্ছে ডুবোচরের। নদীশাসনের জন্য নৌপথটির বিভিন্ন স্থানে আটটি শক্তিশালী খননযন্ত্র বসিয়ে পলি অপসারণের কাজ করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে আজ সকালে বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাশরেকুল আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘পদ্মা সেতুর ড্রেজিং বিভাগের সবচেয়ে বড় খননযন্ত্রটি ব্যবহার করে খননকাজ করা হচ্ছে। শক্তিশালী খননযন্ত্রটি নৌপথের মাগুরখণ্ড এলাকায় বসানো হয়েছে। ড্রেজিং লোকজন আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় নিয়েছে। আশা করছি, আজ সন্ধ্যার পরে পরিস্থিতি উন্নত হলে নৌপথটি দিয়ে নৌযান চলাচল স্বাভাবিক হবে।’
কাঁঠালবাড়ি ঘাট কর্তৃপক্ষ জানায়, বর্তমানে এই নৌপথে ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ১৯টি ফেরি চলাচল করে। কিন্তু নাব্যতা–সংকট থাকায় বর্তমানে দুটি ঘাটেই ফেরিগুলো নোঙর করে রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) কাঁঠালবাড়ি ঘাটের ব্যবস্থাপক সালাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ চার দিন ধরে আমরা কোনো ফেরি চলাতে পারছি না। পণ্যবাহী ট্রাকগুলো ঘাটে আটকে আছে। এ ছাড়া কোনো ছোট-বড় যানবাহন ফেরিতে পারাপার করতে পারছি না। নৌপথটি বন্ধ থাকায় ঘাটে যানবাহনগুলোকে আমরা বিকল্প পথ ধরে যেতে বলেছি।’
আজ সকালে কাঁঠালবাড়ি ঘাটে দিয়ে দেখা যায়, টার্মিনাল ভর্তি রয়েছে পণ্যবাহী ট্রাকে। ট্রাকের নিচে চাদর পেতে বিশ্রাম নিচ্ছে চালকেরা। কেউবা আবার ট্রাকের ওপর বসে আছেন। চারটি ঘাটে অন্তত ১৩ ফেরি নোঙর করে রাখা হয়েছে। ঘাটের সংযোগ সড়কে কয়েকটি ট্রাক ছাড়া কোনো ছোট যানবাহন নেই। ফেরি বন্ধ থাকার কথা শুনে যানবাহনগুলো ফিরে যাচ্ছে। ফেরি বন্ধ থাকায় লঞ্চ ও স্পিডবোটে যাত্রীদের চাপ দেখা গেছে।
খুলনা থেকে আসা মাইক্রোবাসচালক জুলহাস কাজী বলেন, ‘ঘাটে এসে শুনি ফেরি চলে না। তাই মাইক্রোবাস ঘুরিয়ে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া হয়ে যাচ্ছি। কিন্তু শুনেছি সেখানেও ফেরি ঠিকমতো চলে না। গাড়িতে অসুস্থ রোগী আছে। তাদের নিয়ে কীভাবে যে ঢাকা পৌঁছাব? খুব দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়েছি।’
চট্টগ্রামগামী ট্রাকের চালক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘ঘাটে ট্রাক নিয়ে বসে থাকলে আমাদের ব্যয় ছাড়া কোনো আয় নেই। মালিককে মাল বুঝিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত কোনো টাকা পাচ্ছি না।’