সমস্যা সমাধানই শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত: জাফর ইকবাল
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) অধ্যাপক ও লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন, জিপিএ-৫ পাওয়ার জন্য পড়ালেখা করে লাভ নেই। তারা শুধু পরীক্ষায় ভালো করে, এ ছাড়া আর কিছু না। সমস্যা সমাধানই শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত।
আজ শনিবার দুপুরে মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে এক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মুহম্মদ জাফর ইকবাল এ মন্তব্য করেন। ডিবেট, বিজনেস ও বিজ্ঞান—এই তিন বিষয়ের ওপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে ‘ক্রিয়েটিনোভা’ কার্নিভ্যাল অনুষ্ঠিত হয়। আজ পুরস্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হলো কার্নিভ্যালটি।
জাফর ইকবাল বলেন, শিক্ষার্থীরা মুখস্থ করে জিপিএ-৫ পায়, তারা শুধু নির্দিষ্ট ওই পরীক্ষাটিতে ভালো করে। এর বাইরেও অনেক বিষয় থাকে। তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীরা প্রবলেম সলভ (সমস্যা সমাধান) করতে শিখবে। এটির উদ্দেশ্য হচ্ছে, যে বিষয়টি বইয়ে নেই, কখনো পড়া হয়নি কিংবা শেখা হয়নি—এমন সমস্যার সমাধান করতে হবে। এটি করতে পারলে শিক্ষার প্রকৃত মজা পাওয়া যাবে।
আজ কার্নিভ্যালের শেষ দিন থাকায় মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে উৎসবের আমেজ ছিল। গোটা স্কুল মাঠজুড়ে বিভিন্ন বয়সের শিক্ষার্থীরা ছোটাছুটি করছে। কেউ অতিথি বরণ করে নিচ্ছে, কেউ ব্যস্ত অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিতে। এরই মধ্যে অনুষ্ঠানে যোগ দেন মুহম্মদ জাফর ইকবাল। এ সময় শিক্ষার্থীরা তাঁকে স্বাগত জানায়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মিলিটারি ইনস্টিটিউট আব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল মো. আবুল খায়ের বলেন, খুব অল্প সময় হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি সারা দেশে সুনাম কুড়িয়েছে। গত ২০১৭ সালে পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে সারা দেশের ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের মধ্যে প্রথম রানারআপ হয়ে সেনাপ্রধান অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে মৌলিক বিষয়গুলো বের করে আনতে হবে। মৌলিক বিষয়গুলো চিহ্নিত করা গেলে তারা গবেষণা থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় ভালো করতে পারবে। তরুণ সমাজের কাছে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে হবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. কায়কোবাদ ক্রিয়েটিনোভা কার্নিভ্যালের সায়েন্স ফেস্টিভ্যালের প্রধান বিচারক ছিলেন। তিনি বলেন, যে খোঁজে, সে পায়। এ দেশে সীমিত সম্পদের কারণে হয়তো শিক্ষার্থীদের খুব বেশি সুবিধা দেওয়া সম্ভব না। কিন্তু এর মধ্যেও শিক্ষার্থীদের এগিয়ে যেতে হবে। এ দেশের মানুষকে সমৃদ্ধ করা গেলে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।
উদ্বোধনী বক্তব্যে মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ এ কে সাব্বির আহমেদ বলেন, এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে শিক্ষার সামগ্রিক মান বজায় রাখা এবং শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত করার জন্য তাঁরা কাজ করছেন। তিনি আরও বলেন, তাঁদের প্রতিষ্ঠান আয়োজিত এই কার্নিভ্যালে ২৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে। এই আয়োজনে সহযোগিতা করার জন্য সবার প্রতি তিনি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। এরপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ওপর নির্মিত ১২ মিনিটের একটি ডকুড্রামা দেখানো হয়।
কার্নিভ্যালে ডিবেটে চ্যাম্পিয়ন ও রানারআপ হয়েছে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ। স্কুল শাখায় ডিবেটে সেন্ট গ্রেগরি স্কুল চ্যাম্পিয়ন এবং রানারআপ হয়েছে এসওএস হারমেন মেইনার স্কুল। এ ছাড়া সায়েন্স অ্যান্ড বিজনেস ফেস্টে নন-মেকানিক্যালে প্রথম স্থান অর্জন করে মণিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ। আর মেকানিক্যালে প্রথম হয়েছে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ। মাধ্যমিক পর্যায়ের নন-মেকানিক্যালে প্রথম হয়েছে মণিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং মেকানিক্যালে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রথম হয়েছে।
উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে নন-মেকানিক্যালে প্রথম স্থান অর্জন করে মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ। আর মেকানিক্যালে প্রথম হয়েছে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এদিকে বিজনেস আইডিয়া প্রজেক্টে সিনিয়র লেভেলে প্রথম হয় আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং জুনিয়র লেভেলে মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রথম হয়েছে।
চ্যাম্পিয়ন, রানারআপ এবং প্রথম স্থান অধিকারীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধান অতিথি মেজর জেনারেল মো. আবুল খায়ের এবং অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। এরপর একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মেফতাউল করিমসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে কার্নিভ্যালে বিভিন্ন বিভাগের বিচারকেরাও উপস্থিত ছিলেন।