রাজীব শ্বাসটুকুই নিচ্ছেন শুধু
রাজীব হোসেনের বুকের ওঠা-নামাটুকু শুধু বোঝা যায়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের বিছানায় তিনি একরকম অসাড় পড়ে আছেন। বুকের ওই ওঠা-নামাটুকু দেখতে আজ বুধবার বারবার রাজীবের কাছে গিয়ে দাঁড়াচ্ছিলেন তাঁর খালা জাহানারা বেগম।
৩ এপ্রিল সার্ক ফোয়ারার কাছে দুই বাসের রেষারেষিতে হাত হারানো রাজীবের খালা জাহানারা বেগম গত সাত দিন ধরে আইসিইউয়ের বাইরে আছেন। ডাক পড়লেই ছুটছেন ভেতরে। এখন তাঁর একমাত্র চাওয়া, হাত গেছে যাক। রাজীব শুধু বেঁচে থাকুক। গতকাল তিনি প্রথম আলোকে বলছিলেন, ‘আমি বারবার ছুঁয়ে দেখেছি। কতবার বলেছি, রাজু, ওঠ বাবা। চোখ মেল। কোনো সাড়া দেয় না। ছেলেটা সোমবারও আমার দিকে তাকিয়ে কথা বলল ...।’
ঢাকা মেডিকেল কলেজের নিউরোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অসিত চন্দ্র সরকার প্রথম আলোকে বলছিলেন, ‘রাজীব এখন চোখ খুলছে না। কথা বলছে না। জোরে চিমটি দিলেও নড়ছে না। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় রাজীব এখন গ্লাসগো কোমা স্কেলের (জিসিএস) তিন নম্বর মাত্রায় আছে। স্রষ্টা চাইলে সব পারেন। তবে রাজীবের যে শারীরিক লক্ষণ, তা থেকে খুব বেশি কিছু আশা করা যাচ্ছে না।’ জিসিএস তিন থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার নজির আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, কারও কারও ক্ষেত্রে তিনে নেমে আসার অল্প সময় পরেই উন্নতি দেখা যায়। তবে রাজীবের অবস্থা দুই দিন ধরে একই রকম আছে। এটাই ভয়ের কারণ। হঠাৎ রাজীবের শরীর খারাপ হলো কেন? এমন প্রশ্নে তিনি জানান, দুর্ঘটনার সময় রাজীবের মাথায় যে আঘাত লেগেছিল, সেখান থেকে তাৎক্ষণিকভাবে রক্তক্ষরণ হয়নি। সোমবার থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে। মাথার ভেতর পানির পরিমাণও হঠাৎ বেড়ে গেছে। সে কারণেই এ অবস্থা।
জাহানারা বেগম তাঁর ভাগনে রাজীব হোসেনের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। তৃতীয় শ্রেণি থেকে পটুয়াখালীর বাউফলে খালাই কোলেপিঠে করে বড় করেছেন রাজীবকে। ডাক বিভাগের কর্মচারী জাহানারা তাঁর অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে আর শিশু শ্রেণির মেয়েকে ফেলে তাঁর আদরের ‘রাজু’র চোখ মেলার অপেক্ষায় আছেন। তিনি বলছিলেন, ‘ও যদি সুস্থ হয়, সবার সঙ্গে গিয়ে দেখা করবে। খুব ভালো ছেলে। বাপ-মা নাই। অমানুষ হয়ে যেতে পারত। হয় নাই। আমি ওকে দেখেছি, ও আমাকে দেখে সব সময়। আমার হাতের লাঠি রাজু। সবাই একটু দোয়া করবেন।’