সেই 'সন্ত্রাসীই' এখন যুক্তরাষ্ট্রের আদর্শ
২০০৮ সালে নেলসন ম্যান্ডেলার ৯০তম জন্মদিনের মাত্র কয়েক দিন আগে তাঁকে একটি বিশেষ উপহার দেয় যুক্তরাষ্ট্র। সন্ত্রাসী পর্যবেক্ষণ তালিকা থেকে তাঁর নাম বাদ দেওয়ার ঘোষণা দেয় দেশটি। এক দশকের বেশি সময় ধরে তাদের ওই তালিকায় এই কিংবদন্তির নাম ছিল। এখন সেই ‘সন্ত্রাসী’কেই আদর্শ মানে যুক্তরাষ্ট্র।
উথাল-পাতাল দীর্ঘ জীবনে অনেক কিছুই পেয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের অবিসংবাদিত এই নেতা। বর্ণবাদী সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে ২৭ বছর কারাবরণ, তারপর মুক্তি পেয়ে নির্বাচনে জয়, দেশের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন এবং বিশ্বব্যাপী বিংশ শতকের সবচেয়ে শ্রদ্ধাভাজন রাষ্ট্রনায়কের উপাধি তাঁর কপালে জুটেছে।
অতীতে মার্কিন কর্মকর্তারা ম্যান্ডেলার গ্রামের বাড়ি গিয়ে এই আশায় ধরনা দিতেন, ম্যান্ডেলার সান্নিধ্য পেলে তাঁর সন্তের মতো অলৌকিক আভা হয়তো তাঁদের গায়েও লাগবে। আর গত বৃহস্পতিবার ম্যান্ডেলা চিরবিদায় নিলেন, তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করলেন। তিনি মার্কিন সরকারি ভবনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। বিদেশি কোনো নেতার মৃত্যুতে এ ধরনের সম্মান দেখানো যুক্তরাষ্ট্রে বিরল ঘটনা। তিনি ম্যান্ডেলা তাঁর প্রেরণা হিসেবে উল্লেখ করেন।
কয়েক দশক আগেও ম্যান্ডেলা এবং তাঁর আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসকে (এএনসি) দেখতেই পারতেন না, এমন মার্কিন নাগরিকের সংখ্যা নেহায়েত কম ছিল না। তখন দক্ষিণ আফ্রিকা ও যুক্তরাষ্ট্র বর্ণবাদবিরোধী সশস্ত্র সংগ্রামের কারণে ম্যান্ডেলা ও এএনসিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছিল। এখন থেকে পাঁচ বছর আগেও ম্যান্ডেলা ও তাঁর দলের অন্য নেতাদের নাম ওই তালিকায় ছিল। ওই তালিকায় নাম থাকার অর্থ, যুক্তরাষ্ট্রে জাতিংসংঘের অধিবেশন বা অন্য কোনো অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আগে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের অনুমতি নিতে হবে।
২০০৮ সালে যখন ম্যান্ডেলার নাম ওই তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়, তখন তৎকালীন সিনেটর বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেন, ‘আমাদের সরকারের সন্ত্রাসী পর্যবেক্ষণ তালিকায় তাঁর (ম্যান্ডেলার) নামের কোনো স্থান নেই।’
আর বৃহস্পতিবার ম্যান্ডেলার মৃত্যুর খবর জানার পর প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেন, ‘কোটি মানুষ ম্যান্ডেলার কাছ থেকে অনুপ্রেরণা লাভ করেছেন। আমি তাঁদের একজন। আমিও প্রথম যে রাজনৈতিক কাজ করেছিলাম, তা ছিল বর্ণবাদের বিরুদ্ধে।’ এএফপি।