সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় রোহিঙ্গাদের অংশগ্রহণ থাকতে হবে: অ্যামনেস্টি
বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকতে হবে, তাদের কথা বলার সুযোগ দিতে হবে। মঙ্গলবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
‘লেট আস স্পিক ফর আওয়ার রাইটস’ শীর্ষক ওই ব্রিফিংয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অংশগ্রহণ না থাকার প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। এতে বলা হয়, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় রোহিঙ্গাদের অংশগ্রহণ না থাকায় তাদের মানবাধিকার চর্চা বিঘ্নিত হচ্ছে। বিশেষ করে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সভা-সমাবেশ করা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্ষেত্রে সুযোগ পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় চলাফেরার অধিকার বিঘ্নিত হচ্ছে। রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মানুষ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছে—এমন অভিযোগের নিবিড় তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এই ব্রিফিংয়ে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিবের কার্যালয়ের পরিচালক ডেভিড গ্রিফিথস বলেন, কয়েক দশক ধরে মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা নিপীড়ন ও বৈষম্যের শিকার হয়েছে।
মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের শিকার হয়ে বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে হচ্ছে লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে। নিজেদের বাস্তু থেকে উৎখাত হওয়ার তিন বছর পরও তারা ভুগছে এবং নিজেদের অধিকার সম্পর্কে কথা বলতে পারছে না। তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সমর্থন দেওয়ার জন্য বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ অনেক ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় রোহিঙ্গাদের অংশগ্রহণ নেই, তাদের এ থেকে পৃথক রাখা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার পুরোপুরি রক্ষার জন্য তাদের অংশগ্রহণমূলক একটি স্বচ্ছ নীতি প্রণয়ন করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশি মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের বরাত দিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলে, ২০১৭ সালের আগস্ট মাস থেকে ২০২০ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত ১০০ জনেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। বলা হচ্ছে, এসব ঘটনায় কোনো তদন্ত হয়নি এবং দায়ী কাউকেই বিচারের আওতায় আনা হয়নি।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলে, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকার বিঘ্নিত হচ্ছে। ভাসানচরে যাওয়া শরণার্থীরা অ্যামনেস্টিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ৫০ বর্গফুটের একটি ঘরে দুই থেকে পাঁচজন মানুষের গাদাগাদি করে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে আসার পর থেকে তাদের দেওয়া হয়েছে একটি কাপড়, একটি মশারি ও একটি থালা। শরণার্থীদের অভিযোগ, প্রায় সময়ই তাদের ঘর থেকে বের হতে দেওয়া হয় না।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে কথা বলে অ্যামনেস্টি আরও জানায়, একইভাবে রোহিঙ্গারা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যগত অধিকার, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা ও বৈষম্য, তথ্য পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের রক্ষার জন্য বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষকে একটি প্রকৃত ও কার্যকর নীতি তৈরিতে সহযোগিতা করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।