শ্রদ্ধায় অবনত সারা বিশ্ব

নেলসন ম্যান্ডেলার মৃত্যুতে শ্রদ্ধায় অবনত সারা বিশ্ব। বহু বিশ্বনেতা, ধর্মীয়, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। মহান এই মানবতাবাদীর প্রতি জানিয়েছেন গভীর শ্রদ্ধা।
বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের মহান নেতা ম্যান্ডেলার প্রয়াণের মধ্য দিয়েও শেষবারের মতো বিশ্বকে বেঁধে গেছেন ঐক্যের সুতোয়। কোনো একজন ব্যক্তির মৃত্যুতে সারা বিশ্ব এতটা ঐক্যবদ্ধ হতে পারে, তা দৃশ্যত এর আগে আর ঘটেনি।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা বলেছেন, ‘আমাদের দেশমাতা তার শ্রেষ্ঠ সন্তানকে হারাল। আর এ দেশের জনগণ হারাল তাদের জনককে।’
জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন প্রয়াত ম্যান্ডেলাকে ‘ন্যায়ের পক্ষে এক মহান ব্যক্তিত্ব’ আখ্যায়িত করে বলেন, মানবতা, সাম্য ও স্বাধীনতার জন্য ম্যান্ডেলার নিঃস্বার্থ ও আপসহীন লড়াই সারা বিশ্বের অগণিত মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে।
শোক প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, ‘আজ তিনি চলে গেছেন। আমরা বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী, সাহসী ও মহৎপ্রাণ ব্যক্তিদের একজনকে হারিয়েছি। তিনি আর আমাদের নন—তিনি মহাকালের।’
ওবামা মহান এই নেতার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য হোয়াইট হাউস ও সারা দেশের সরকারি কার্যালয়ের জাতীয় পতাকা আগামী সোমবার পর্যন্ত অর্ধনমিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। কোনো বিদেশি নেতার মৃত্যুতে যুক্তরাষ্ট্রে এভাবে শোক পালনের দৃষ্টান্ত বিরল।
যুক্তরাজ্যের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ বলেছেন, ‘নিজের দেশের মঙ্গলের জন্য তিনি (ম্যান্ডেলা) অক্লান্ত পরিশ্রম করেছিলেন।’
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ম্যান্ডেলা কঠিন অগ্নিপরীক্ষা দিয়ে গেছেন। কিন্তু শেষমেশ মানবতা ও ন্যায়ের জয়ের ব্যাপারে তিনি ছিলেন অঙ্গীকারবদ্ধ।
পৃথিবীর এক মহান আলো আজ নিভে গেছে বলে মন্তব্য করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। তিনি আরও বলেন, ‘মৃত্যুর পরও তিনি সত্যিকারের এক বিশ্বনেতা।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বলেছেন, ম্যান্ডেলা ‘সত্যিকারের গান্ধীবাদী’ ছিলেন। মৃত্যুর পরও তিনি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অহিংস আন্দোলনের প্রেরণা জোগাবেন।
নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট গুডলাক জোনাথন বলেছেন, ‘ম্যান্ডেলা ছিলেন বিশ্বমানবতার একজন মহান মুক্তিদাতা।’
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে অসীম ধৈর্য ও সাহস নিয়ে লড়াই করেছিলেন ম্যান্ডেলা। দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষকে মুক্তির দিকে পরিচালিত করেছিলেন। নতুন দক্ষিণ আফ্রিকার জন্মদানে ঐতিহাসিক অবদান রেখেছিলেন তিনি।
দক্ষিণ আফ্রিকার সাধারণ কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ম্যান্ডেলা চিরস্থায়ী পরিবর্তন এনেছেন বলে অভিমত দেন আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ গুল বলেন, নিজের লড়াইয়ের মাধ্যমে দেশের মানুষের জীবন বদলে দিয়েছিলেন ম্যান্ডেলা। আর পাল্টে দিয়েছিলেন বিশ্বের চিন্তা।
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, ফিলিস্তিনিরা মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপ্লব সফল হবে না বলে ম্যান্ডেলা যে মন্তব্য করেছিলেন, ফিলিস্তিনিরা তা কখনোই ভুলবে না।
১৯৯৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বশেষ শ্বেতাঙ্গ প্রেসিডেন্ট এফ ডব্লিউ ডি ক্লার্কের সঙ্গে যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল জয় করেছিলেন ম্যান্ডেলা। তাঁর মৃত্যুর খবর শোনার পর ডি ক্লার্ক বলেন, ম্যান্ডেলার সঙ্গে তাঁর প্রায়ই বাগিবতণ্ডা হতো, কিন্তু সংকটময় মুহূর্তে তাঁরা মতৈক্যে পৌঁছাতে পারতেন।
মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চি বলেন, ‘একজন মহৎপ্রাণ ব্যক্তি চলে গেছেন, যিনি আমাদের বুঝিয়ে গেছেন, আমরাই পারি এ বিশ্বকে বদলে দিতে।’
তিব্বতের স্বেচ্ছানির্বাসিত আধ্যাত্মিক নেতা দালাই লামা বলেছেন, ‘বিশ্ব আজ একজন ‘প্রিয় বন্ধুকে’ হারাল। এদিকে ম্যান্ডেলার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ভারতেও পাঁচ দিনের শোক পালিত হচ্ছে। এএফপি ও বিবিসি।