রাত ১০টায় ঘুমাতে গেলে হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমে: গবেষণা
রাতে ঘুমোতে যাওয়ার ধরাবাঁধা কোনো সময় নেই। কোনো দিন ১২টার আগে বিছানায় যাচ্ছেন। আবার কোনো দিন ঘুমাতে ঘুমাতে মধ্যরাত পার হয়ে যাচ্ছে। আবার অনেকেই আছেন, রাত জেগে কাজ করতে পছন্দ করেন। কিংবা গান শুনে, সিনেমা দেখে, এমনকি অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাত পার করেন। এমন রাত জাগা ব্যক্তিদের জন্য সতর্কবার্তা শুনিয়েছেন গবেষকেরা। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা রাত ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েন, তাঁদের হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তুলনামূলক কম।
আজ মঙ্গলবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এই গবেষণার তথ্য প্রকাশ হয়েছে। ৮৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের ওপর গবেষণাটি চালিয়েছে যুক্তরাজ্যের বায়োব্যাংকের গবেষক দল। গবেষণা প্রতিবেদনটি ইউরোপিয়ান হার্ট জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষকেরা বলছেন, তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাওয়া ও নিরবচ্ছিন্ন ঘুম আমাদের দেহঘড়ির (বডি ক্লক) সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। এই অভ্যাস একদিকে যেমন হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমায়, তেমনি স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও কমে আসে। দেরিতে ঘুমের জন্য মানুষের শরীরের ২৪ ঘণ্টার দেহঘড়িতে ব্যত্যয় ঘটলে রক্তচাপের সমস্যাও দেখা দেয়।
স্বেচ্ছাসেবকদের প্রত্যেককে একটি করে হাতঘড়ির মতো ডিভাইস পরিয়ে দিয়েছিলেন গবেষকেরা। এই ডিভাইস তাঁদের ঘুমাতে যাওয়া ও ঘুম থেকে ওঠার তথ্য নিয়েছে। দেখা গেছে, তিন হাজারের বেশি প্রাপ্তবয়স্ক স্বেচ্ছাসেবক বিভিন্ন মাত্রায় হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত ব্যক্তিদের বেশির ভাগের রাতে দেরিতে ঘুমাতে যাওয়া এবং সকালে দেরিতে ওঠার অভ্যাস রয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকেরা বলছেন, হৃদ্যন্ত্রের সুস্থতার জন্য রাতের ঘুমে দেরি করা যাবে না। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে হবে। দেহঘড়ির স্বাভাবিক নিয়মে ব্যত্যয় ঘটানো যাবে না। আর রাতে ঘুমানোর ‘আদর্শ সময়’ ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে।
গবেষণায় অংশ নেওয়া স্বেচ্ছাসেবকদের বয়স, ওজন, শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বিবেচনায় নেওয়ার পরেও গবেষকেরা হৃদ্রোগের অন্যতম কারণ হিসেবে ঘুমের ব্যাঘাতকে চিহ্নিত করেছেন। এ বিষয়ে গবেষণা প্রতিবেদনটির লেখক ও যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব এস্টারের গবেষক ডেভিড প্ল্যানস বলেন, ‘আমরা এখনো গবেষণায় উপসংহার টানিনি। তবে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময়ের সঙ্গে দেহঘড়ি ও হৃদ্রোগের যোগসূত্রের প্রমাণ পাওয়া গেছে।’
ডেভিড প্ল্যানস আরও বলেন, ‘মধ্যরাতের পর ঘুমাতে যাওয়া সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। কেননা এতে ভোরের আলো দেখার সুযোগ কমে আসে। যা আমাদের স্বাভাবিক দেহঘড়ির নিয়মের ব্যত্যয় ঘটায়।’
ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের হৃদ্রোগবিষয়ক জ্যেষ্ঠ নার্স রেজিনা গিবলিন বলেন, ‘এই গবেষণা আমাদের সুস্পষ্ট বার্তা দেয়। রাতে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে ঘুমাতে যান। দীর্ঘ সময় হৃদ্যন্ত্রকে সুস্থ রাখুন।’
হৃদ্রোগ এড়াতে ও সুস্থ থাকার জন্য নিরবচ্ছিন্ন ঘুম একমাত্র নয়, তবে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান—এমনটাই বলেছেন রেজিনা গিবলিন। তাঁর মতে, রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানো ও সকাল সকাল জেগে ওঠা মানুষের জীবনযাপনের প্রক্রিয়াকে (লাইফস্টাইল) স্বাভাবিক রাখে। এতে রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এর পাশাপাশি হৃদ্যন্ত্রকে সুস্থ রাখার জন্য নিয়ম মেনে ব্যায়াম করা, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, মদপান ও লবণ খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে আনার ওপর জোর দিয়েছেন তিনি।