‘ভূতে’র দেখা পেলেন না জাপানের প্রধানমন্ত্রী
জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত সরকারি বাসভবনে উঠেছেন। ৯ বছর পর আবারও জাপানের প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব পালনের সময় পরিবার নিয়ে বসবাসের জন্য নির্ধারিত বাসভবনে উঠলেন। এর আগে দুই প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ও ইয়োশিহিদে সুগা নিজেদের বাসভবনে থেকে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি কার্যালয়ে নিয়মিত অফিস করেছেন। সরকারি কার্যালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন হাঁটাপথে মিনিট দুয়েকের দূরত্বে অবস্থিত হলেও নিজেদের বাসভবনে থাকা তাঁরা বেছে নিয়েছিলেন। বিশেষ করে আবে তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদের পুরো সময়ে একবারের জন্যও সরকারি বাসভবনে রাত্রি যাপন করেননি। বরং তিনি থেকেছেন টোকিওর শিবুইয়া এলাকায় নিজের বাসভবনে। সুগাও একই ধারা অনুসরণ করেছেন।
এর আগে ২০১২ সাল পর্যন্ত জাপানের প্রায় সব প্রধানমন্ত্রী সরকারি বাসভবনে থেকেছেন। যদিও ১০২৯ সালে নির্মিত সেই ভবন নিয়ে নানা রকম ভৌতিক গল্প লোকমুখে প্রচলিত আছে। এসব গল্পের পেছনে উপাদান হিসেবে কাজ করে গত ৯২ বছরে সেই ভবনকে ঘিরে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা।
১৯৩২ সালের ১৫ মে জাপানের রাজকীয় নৌবাহিনীর কয়েকজন কর্মকর্তার রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানে সেখানে নিহত হয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ৎসুইয়োশি ইনুকাই। এর মাত্র চার বছর পর ১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সামরিক বাহিনীর এক দল তরুণ কর্মকর্তার অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার সময়েও অবরোধের মুখে পড়েছিল প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন এবং প্রধানমন্ত্রীর জীবন বিপন্ন না হলেও হতাহতের ঘটনা সেখানে ঘটে। এ ছাড়া জাপানের যুদ্ধের সময়ের প্রধানমন্ত্রীরাও সেই একই বাসভবনে থেকে গেছেন, যাঁদের মধ্যে হিদেকি তোজোকে ঝুলতে হয়েছে ফাঁসিতে এবং ফুমিমারো কনোয়ে যুদ্ধে জাপানের পরাজয়ের পর গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মহত্যা করেন। এর ফলে তাঁদের বিদেহী আত্মা এখনো সেই ভবনকে ঘিরে আছে বলে লোকমুখে একটি কথা জাপানে চালু আছে।
শিনজো আবে অবশ্য ২০০৬ সালে স্বল্প মেয়াদে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা অবস্থায় সরকারি বাসভবনে ছিলেন এবং শারীরিক অসুস্থতার কারণে সেবার অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি পদত্যাগ করেছিলেন। হতে পারে সুস্থ হয়ে দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর নতুন করে আবার কোনো বাধার মুখে পড়ার সম্ভাবনা এড়িয়ে যেতে সরকারি বাসভবনে তিনি আর ওঠেননি। তবে তিনি নিজে অবশ্য এর কোনো ব্যাখ্যা দেননি। দীর্ঘ সময় তাঁর সরকারি বাসভবনে না থাকা নিয়ে জাপানে সমালোচনা হয়। সমালোচনার কারণ হলো ভবনটি খালি পড়ে থাকা সত্ত্বেও এর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরকারি কোষাগার থেকে প্রতিবছর বড় অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ করতে হচ্ছে। এখনকার হিসাবে প্রতিবছর প্রায় ১৬ কোটি ইয়েন ভবন পরিচর্যার জন্য সরকারকে খরচ করতে হচ্ছে, যা আসছে জনগণের পরিশোধ করা করের আয় থেকে।
জাপানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সে রকম সমালোচনা এড়িয়ে যেতে গত সপ্তাহের শেষে সরকারি বাসভবনে ওঠেন। সেখানে রাত কাটানোর পর আজ সোমবার সকালে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হওয়ার সময় রাতে ভূতের দেখা তিনি পেয়েছেন কি না, সেই প্রশ্ন তাঁকে করা হয়েছিল। উত্তরে তিনি বলেছেন, খুব ভালো ঘুম হয়েছে তাঁর এবং এখন পর্যন্ত সে রকম কোনো অনাহূত অতিথির দেখা তিনি পাননি।