ভারতের মতো পরিস্থিতির মুখে নেপাল, চিকিৎসকদের সতর্কবার্তা
দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ নেপাল প্রতিবেশী ভারতের মতো ভয়াবহ করোনার সংক্রমণের মুখে পড়তে যাচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন দেশটির চিকিৎসকেরা। এরই মধ্যে ভারতের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে উদ্বেগজনক হারে সংক্রমণ বৃদ্ধি এবং হাসপাতালে শয্যা ও অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন তাঁরা।
মঙ্গলবার ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, ভারতের উত্তর প্রদেশের সীমান্তবর্তী লুম্বিনি প্রদেশের বাঙ্কে জেলার ভেরি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা সেখানকার পরিস্থিতি বর্ণনায় ‘মিনি ইন্ডিয়া’ বলেছেন।
তাঁদের ভাষ্যমতে, ওই এলাকায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।
হাসপাতালের চিকিৎসক রাজন পান্ডে বলেছেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আমরা অসহায় অবস্থায় আছি।’
গত দুই সপ্তাহে ওই হাসপাতালের ৮০ জন কর্মীর করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে। সেখানে নার্সের সংকট চলছে বলে রাজন পান্ডে জানিয়েছেন।
নেপালের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হরিদায়েশ ত্রিপাঠি সম্প্রতি দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসছে বলে সতর্ক করেছিলেন। এবারের ভাইরাসটি আরও বেশি ‘সংক্রামক ও প্রাণঘাতী’ বলে জানিয়েছিলেন তিনি। এরপর বৃহস্পতিবার থেকে রাজধানী কাঠমান্ডুতে দুই সপ্তাহের লকডাউন দেওয়া হয়। নেপালি টাইমসকে ত্রিপাঠি বলেছেন, নেপালের স্বাস্থ্যব্যবস্থার মহামারি সামাল দেওয়ার মতো যথেষ্ট শক্তিশালী নয়।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন বলছে, কাঠমান্ডুর বাইরে যেসব এলাকায় করোনার সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি হয়েছে, তার একটি বাঙ্কে জেলা। শুক্রবার সকালে আগের ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ১২ জনের মৃত্যুর তথ্য জানানো হয়।
এখন পর্যন্ত নেপালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৩ লাখ ২৩ হাজার ১৮৭ জন এবং এতে মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ২৭৯ জনের। তবে এখন সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে।
গত বছর অক্টোবরে দেশটিতে সংক্রমণের চূড়ান্ত পর্যায়ে দিনে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৫ হাজার ৭৪৩ জন। সেখানে শুক্রবার ৫ হাজার ৬৫৭ জনের সংক্রমণ ধরা পড়ার কথা জানানো হয়েছে।
রাজন পান্ডেসহ অন্যান্য চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করছেন, ভারতে প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসের বি ১৬১৭ ধরনটিই এখনকার সংক্রমণ ঘটাচ্ছে। এই ধরনটি বেশি সংক্রামক বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে ভারতের মতো তরুণ এমনকি শিশুরাও আক্রান্ত হচ্ছে। তবে এই ধারণার পক্ষে এখনো যথেষ্ট বৈজ্ঞানিক তথ্য–উপাত্ত পাওয়া যায়নি।
রাজন পান্ডে বলেন, এটা কোন ভ্যারিয়েন্ট, তা পরীক্ষা করে দেখার মতো যন্ত্র তাঁদের নেই। জিনোম সিকোয়েন্সের মেশিন কেনা হয়েছে বলে তাঁকে বলা হয়েছে। তবে এটার ব্যবহার এখনো শুরু হয়নি। তিনি এমন একটি হাসপাতালের বিবরণ দেন, যেটা কোভিড–১৯ রোগীদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। ওই হাসপাতালে ভর্তির জন্য শ্বাসকষ্ট নিয়ে অনেককে ঘণ্টার পর ঘণ্টার বাইরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। রোগীর তুলনায় সেখানে আইসিইউ বেড ও ভেন্টিলেটরের ঘাটতি রয়েছে।
সুদিল কুমার লাখে নামে বাঙ্কের একজন বাসিন্দা বলেন, তিনি, তারঁ মা ও বাবা করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। বাবার অবস্থা খারাপ হতে থাকে। সে সময় একটি ভেন্টিলেটর পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। সে জন্য তাঁদের প্রায় লড়াই করতে হয়।
কোভিড সংক্রমণের পর তাঁর বাবার নিউমোনিয়া দেখা দেয় বলে জানান সুদিল কুমার।
নেপালের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চলতি সপ্তাহে এক বিবৃতিতে বলেছে, ভারতের সীমান্তবর্তী জেলাগুলো সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে এবং করোনার সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে।
‘সংক্রমণ এত দ্রুত বাড়ছে যে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা সামাল দিতে পারছে না। আমরা সবাইকে দায়িত্বশীল হওয়ার অনুরোধ করছি,’ বলা হয়েছে সরকারি বিবৃতিতে।
নেপালে জনসংখ্যার মাত্র ৭ শতাংশ করোনাভাইরাসের টিকা পেয়েছেন। প্রথম দিকে নয়াদিল্লির ‘টিকা কূটনীতির’ সুবিধাভোগী হয়েছিল নেপাল। সে সময় দেশটিতে এক লাখ ডোজ টিকা পাঠিয়েছিল ভারত সরকার। তবে পরে ভারত টিকা রপ্তানি বন্ধ করায় এখন এ জন্য চীনের ওপর নির্ভরশীল হতে হচ্ছে দেশটিকে।