বিশ্বজুড়ে সাড়া ফেলেছে প্যান্ডোরা পেপারস। কর স্বর্গ হিসেবে পরিচিত বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের অফশোর কোম্পানিতে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অর্থ ও গোপন লেনদেনের তথ্য ফাঁস করা হয়েছে প্যান্ডোরা পেপারসের নথিতে। সাড়াজাগানো এসব তথ্য নিয়ে যখন আলোচনা-সমালোচনা চলছে, তখন নিজেদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সরাসরি এড়িয়ে গেছেন অনেকেই। তালিকায় থাকা অনেকেই দিয়েছেন এ বিষয়ে দায়সারা বক্তব্য। কেউ কেউ আবার এ নিয়ে এখনো মুখ খোলেননি। খবর ওয়াশিংটন পোস্ট ও গার্ডিয়ানের।
তথ্য সামনে আসার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে একটি পোস্ট করেছেন ইমরান খান। সেখানে তিনি বলেছেন, প্যান্ডোরা পেপারসে পাকিস্তানে যাঁদের নাম এসেছে, তাঁদের তদন্তের আওতায় আনবে সরকার। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি। এ সবকিছুর মধ্যে আবার প্যান্ডোরা পেপারসের ইস্যু ধরে ইমরান খানের পদত্যাগ দাবি করেছেন বিরোধী দল পাকিস্তান মুসলিম লিগের মহাসচিব আহসান ইকবাল।
প্যান্ডোরা পেপারসে ৭০০ জনের বেশি পাকিস্তানির নাম এসেছে। তাঁদের মধ্যে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মন্ত্রিসভার সদস্যসহ ঘনিষ্ঠ বৃত্তের লোকজন রয়েছেন। পাকিস্তানের সামরিক নেতাদের নামও প্যান্ডোরা পেপারসে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ইমরান খান নিজে কোনো অফশোর কোম্পানির মালিক, এমন ইঙ্গিত নথিতে নেই।
প্যান্ডোরা পেপারসে নাম আসা চেক প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী আন্দরেজ বাবিস নিজের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর দাবি, কোনো ‘অবৈধ’ কাজের সঙ্গে তাঁর সংশ্লিষ্টতা নেই। দেশটিতে আসন্ন নির্বাচনে প্রভাব সৃষ্টি করতেই এসব সামনে আনা হচ্ছে বলে অভিযোগ এনেছেন তিনি। ফাঁস হওয়া নথি অনুযায়ী, চেক প্রধানমন্ত্রী ২০০৯ সালে অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে ফ্রান্সে ২ কোটি ২০ লাখ পাউন্ড খরচা করে একটি বিলাসবহুল বাড়ি কিনেছিলেন। বাড়ি কেনার সময় আন্দরেজ বাবিসের নাম গোপন করেছিল ওই কোম্পানিগুলো।
ফাঁস হওয়া নথিতে দেখা গেছে, জর্ডানের বাদশাহ গোপনে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশে ১০ কোটি ডলারের সম্পদ করেছেন। তবে রাজপরিবারের বিরুদ্ধে এমন তথ্য ভালোভাবে নেয়নি দেশটির সরকার। প্রতিবেদন প্রকাশের পর ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টসের ওয়েবসাইটে দেশটি থেকে প্রবেশ করা যাচ্ছিল না বলে খবর মিলেছে। তবে কিছু সময় পর এ সমস্যার সমাধান হয় বলে জানা গেছে। এদিকে প্রথম দিকে প্যান্ডোরা পেপারসে জর্ডানের বাদশাহর নাম আসার খবর প্রচার করেনি দেশটির কোনো গণমাধ্যম। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে ফাঁস হওয়া তথ্যের কড়া সমালোচনাও চলছে জর্ডানে।
শুধু জর্ডানই না, প্যান্ডোরা পেপারসে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন-সংশ্লিষ্ট অংশ এড়িয়ে গেছে রুশ সংবাদমাধ্যম। রাশিয়ার বার্তা সংস্থা তাস পুতিনের জড়িত থাকার বিষয়টি সামনেই আনেনি। এ খবর প্রকাশ করেনি দেশটির আরেক বার্তা সংস্থা আরআইএ। তারা বরং প্রতিবেদন করেছে পুতিনবিরোধী ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কিকে নিয়ে। প্যান্ডোরা পেপারসে ফাঁস হয়েছে, মোনাকোয় পুতিনের বান্ধবীর একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট রয়েছে। ২০০৩ সালের সেপ্টেম্বরে একটি গোপন লেনদেনের মাধ্যমে ওই ফ্ল্যাট কেনা হয়।
প্যান্ডোরা পেপারসে নাম আসা চিলির প্রেসিডেন্ট সেবাস্তিয়ান পিয়েরাও নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এ বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে তাঁর কার্যালয় থেকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে।
তালিকায় নাম রয়েছে যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ও তাঁর স্ত্রী চেরি ব্লেয়ারের। প্যান্ডোরা পেপারস বলছে, ৩ লাখ ১২ হাজার পাউন্ড কর ফাঁকি দিয়ে লন্ডনে ভবনের মালিকানা নিয়েছিলেন ব্লেয়ার দম্পতি। একটি অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে বাড়িটি কেনেন ব্লেয়ার দম্পতি। লন্ডনের ভবনটি কেনার বিষয়ে ‘অস্বাভাবিক’ কিছুই ছিল না বলে সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানকে জানিয়েছেন চেরি ব্লেয়ার। তিনি বলেছেন, বাড়িটি কেনার পর নিয়ম মেনে সব কর পরিশোধ করা হয়েছে। এমনকি আইনের আওতায় থেকে এ-সংক্রান্ত সব হিসাব-নিকাশও উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জোট ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টসের (আইসিআইজে) উদ্যোগে ৬৫০ জনের বেশি সাংবাদিক প্যান্ডোরা পেপারসে ফাঁস হওয়া নথিগুলো বিশ্লেষণ করেছেন। এতে নাম এসেছে ৯০টির বেশি দেশের মন্ত্রী, বিচারক, মেয়র, সেনাবাহিনীর জেনারেল থেকে শুরু করে ধনকুবের ও জনপ্রিয় ব্যক্তিদের। ফাঁস হওয়া নথিতে বিভিন্ন দেশের সাবেক ও বর্তমান ৩৫ জন নেতা এবং ৩০০-এর বেশি সরকারি কর্মকর্তার নাম রয়েছে।