পেগাসাসের শিকার হয়েছিলেন নেতানিয়াহুর ছেলেও
ইসরায়েলি যে স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে বিশ্বজুড়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মুঠোফোনে আড়িপাতা হয়েছে, সেই পেগাসাস স্পাইওয়্যারের শিকার হয়েছেন দেশটির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা। তাঁদের তালিকায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ছেলে আভনের নেতানিয়াহুও রয়েছে। এ ছাড়া শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তা ও অধিকারকর্মীদের ফোনেও এটা দিয়ে আড়িপাতার খবর এসেছে।
হিব্রু ভাষায় প্রকাশিত ইসরায়েলের সংবাদপত্র কেলকালিস্ট-এর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য এসেছে। এর আগে গত জানুয়ারিতে এই সংবাদপত্রের অপর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, গত বছর বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে চলা বিক্ষোভের সময় ইসরায়েলের পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর পেগাসাস ব্যবহার করে নজরদারি চালিয়েছিল।
আজ সোমবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে সংবাদপত্রটি জানিয়েছে, কয়েক ডজন প্রভাবশালী ব্যক্তির মুঠোফোন হ্যাক করতে পেগাসাস ব্যবহার করেছে ইসরায়েলের পুলিশ। তাঁদের কারও বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কাজের রেকর্ড ছিল না। এ জন্য আদালতের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতি নেওয়া হয়নি। তবে এ তথ্যের উৎস সম্পর্কে কিছুই জানায়নি সংবাদপত্রটি।
পেগাসাস ব্যবহার করে নেতানিয়াহুর ছেলে আভনের নেতানিয়াহু এবং অর্থ, বিচার ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ফোন হ্যাক করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে কেলকালিস্ট। প্রতিক্রিয়ায় আভনের নেতানিয়াহু সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া পোস্টে বলেন, ‘এই ঘটনায় আমি সত্যিই বিস্মিত।’
গোপন নজরদারির ঘটনা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় ইসরায়েলি সরকারের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী ওমের বারলেভ বলেছেন, এই অভিযোগ গভীরভাবে খতিয়ে দেখা হবে। অভিযোগের বিষয়ে ইসরায়েলের পুলিশ কমিশনার কোবি সাবতাই বলেন, আইন অনুযায়ী একজন বিচারকের নেতৃত্বাধীন কমিশন এই অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত করবে। পুলিশের ব্যর্থতা থাকলে, সেটাও চিহ্নিত করা হবে।
সমালোচনার মুখে এই অভিযোগের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট। ব্যবস্থা নেওয়ার অঙ্গীকার জানিয়ে সোমবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘এটা গুরুতর অভিযোগ। আমরা প্রমাণ না করে ছেড়ে দিতে পারি না।’ যদিও সন্ত্রাসবাদ দমনের ক্ষেত্রে চলমান লড়াইয়ে পেগাসাস গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম।
আড়িপাতার আলোচিত স্পাইওয়্যার পেগাসাসের উদ্ভাবক ইসরায়েলের গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা প্রযুক্তিবিষয়ক প্রতিষ্ঠান এনএসও গ্রুপ। ধারণা করা হয়, ২০১৬ সাল থেকে পেগাসাস কখনো ‘কিউ সুইট’, কখনোবা ‘ট্রাইডেন্ট’ নামে ব্যবহার করা হয়েছে। গোপন নজরদারির জন্য এটি সহজেই আইওএস, অ্যাপল ও অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনে অনুপ্রবেশ করতে পারে। এটা এতটাই ভয়ংকর যে একবার স্পাইওয়্যারটি ইনস্টল হয়ে গেলে সহজেই যে কারও হোয়াটসঅ্যাপ ম্যাসেজিং ও কথা বলা, ভয়েস কল, পাসওয়ার্ড, কন্টাক্ট তালিকা, বিভিন্ন ইভেন্টের ক্যালেন্ডার, ফোনের মাইক্রোফোন, এমনকি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণও পেগাসাস ব্যবহারকারীর হাতে চলে যায়।
গত বছরের মাঝামাঝি বিশ্বজুড়ে পেগাসাস ব্যবহার নিয়ে ধারাবাহিকভাবে তথ্য প্রকাশিত হয়। এই ঘটনা বিশ্বজুড়ে পেগাসাস কেলেঙ্কারি নামে পরিচিতি পায়। ওই সময় এনএসও গ্রুপ জানায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার বৈধ লাইসেন্সের মাধ্যমে পেগাসাস ব্যবহার করছে। ২০১৯ সাল থেকে সীমিত পরিসরে এই হ্যাকিং প্রযুক্তি বিক্রি শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। এনএসও গ্রুপের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, সন্ত্রাসবাদ নিয়ে অনুসন্ধান ও বৈশ্বিক অপরাধ প্রতিরোধের মাধ্যমে হাজারো মানুষকে রক্ষায় সরকারি সংস্থাকে সহায়তার করে তারা। তবে তারা পেগাসাসের ক্রেতাদের পরিচয় প্রকাশ করেনি।