দুই হাজার বছর আগের ‘বিড়াল’
বিড়ালটি দুই হাজার বছর আগের! না, ঠিক বিড়াল নয়। বিড়ালজাতীয় প্রাণী। জীবন্ত নয়, পাহাড়ের গায়ে খোদাই করা। প্রত্নতত্ত্ব গবেষকেরা দাবি করছেন, দুই হাজার বছর আগে ১২১ ফুট এলাকাজুড়ে খোদাই করা হয়েছে বিড়ালজাতীয় প্রাণীটির ছবি।
মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, পেরুর দক্ষিণাঞ্চলের একটি পাহাড়ের গায়ে খোদাই করা এই ছবির খোঁজ মিলেছে। পেরুর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বলছে, এই শিল্পকর্ম দুই হাজার বছরের বেশি পুরোনো।
পেরুর রাজধানী লিমা থেকে ২৫০ মাইল দক্ষিণের এলাকাটি আসলে মালভূমি। দেশটিতে ‘নাজকা লাইনস’ বলে পরিচিত যে প্রাচীন ভূরেখাচিত্র রয়েছে, তারই অংশ এটি। সেখানে এ পর্যন্ত শত শত রহস্যময় শিল্পকর্মের সন্ধান পেয়েছেন প্রত্নতত্ত্ব গবেষকেরা।
ওই এলাকায় বিগত শতাব্দীতে বিভিন্ন সময়ে অনুসন্ধান চলেছে। এর ফলে যেসব প্রাচীন শিল্পকর্মের সন্ধান মিলেছে, তার মধ্যে রয়েছে হামিংবার্ড, গগনবেড় পাখি ও বানরের ছবি। প্রাচীন শিল্পকর্মের কারণে অনেক আগে থেকেই এলাকাটি পর্যটকদের কাছে পছন্দের জায়গা। পর্যটনসুবিধা বাড়াতে এর রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলার সময় নতুন শিল্পকর্মটির সন্ধান মিলেছে।
পেরুর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিড়ালজাতীয় প্রাণীর ছবিটি কদাচিৎই দৃশ্যমান ছিল। জায়গাটির পাশেই একটি খাড়া ঢাল রয়েছে। সেখানে প্রাকৃতিকভাবে ভূমিধস প্রায়ই ঘটে। এ কারণে শিল্পকর্মটি প্রায় মুছে যেতে বসেছিল।
মন্ত্রণালয় বলছে, শিল্পকর্মটি আবিষ্কৃত হওয়ার পর সেখানে পরিচ্ছন্নতা ও সংরক্ষণের কাজ হাতে নেওয়া হয়। এরপরই শিল্পকর্মটি দৃশ্যমান হয়েছে। অনেক রেখাচিত্রের মাধ্যমে এটি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। জায়গাভেদে এই রেখাচিত্র ৩০ থেকে ৪০ সেন্টিমিটার (১২ থেকে ১৬ ইঞ্চি) প্রশস্ত। আর আঁকার বৈশিষ্ট্য দেখে প্রত্নতত্ত্ববিদেরা বলছেন, এটি খ্রিষ্টপূর্ব ২০০ থেকে ১০০ খিষ্টপূর্বের মধ্যে খোদাই করা হয়েছে। ওই সময় প্যারাকাস আমলের অন্তর্ভুক্ত। দক্ষিণ আমেরিকায় প্যারাকাস সভ্যতার যেসব মৃৎশিল্প ও বয়নশিল্পসামগ্রী এ পর্যন্ত পাওয়া গেছে, তাতে বিড়ালজাতীয় ওই প্রাণীর ছবি সচরাচরই মেলে।
পেরুর এই ‘নাজকা লাইনস’ ৪৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। এলাকাটি ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত। সংস্থাটির মতে, ‘নাজকা লাইনস’ সৃষ্টি করা হয় খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০ থেকে ৫০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে। বিশ্বে যেসব বিপুল রহস্যময় প্রত্নসম্পদ রয়েছে, তার একটি এটি।
সর্বশেষ ২০১৯ সালে এই এলাকায় অনুসন্ধান চালায় জাপানের ইয়ামাগতা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। তাঁরা ত্রিমাত্রিক চিত্রধারণের মাধ্যমে ১৪০টির বেশি ভূরেখাচিত্র খুঁজে পেয়েছিলেন।