তাইওয়ানের কাছে চীনের ‘উসকানিমূলক’ সামরিক তৎপরতার সমালোচনা যুক্তরাষ্ট্রের
তাইওয়ানের কাছে চীনের ‘উসকানিমূলক ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারী’ সামরিক তৎপরতার কড়া সমালোচনা করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন। আজ শনিবার তিনি এ সমালোচনা করেন। দ্বীপটির বিষয়ে বেইজিং যুদ্ধে যেতেও প্রস্তুত বলে আগের দিন তাঁকে সতর্ক করেছেন চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফেঙ্গহি। খবর এএফপির।
গণতান্ত্রিক ও স্বশাসিত তাইওয়ান নিয়ে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। তাইওয়ানকে নিজের ভূখণ্ড মনে করে চীন। কোনো এক দিন দ্বীপটি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছে বেইজিং। এ জন্য প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগে দ্বিধা করবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছে দেশটি।
দ্বীপটির কাছে যুদ্ধবিমান উড্ডয়নের সংখ্যা বাড়িয়েছে বেইজিং। দৃশ্যত তাইওয়ান নিয়ে কয়েক দশকের মার্কিন নীতি থেকে সরে এসে গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, চীন হামলা করলে সামরিকভাবেই তাইওয়ানকে রক্ষা করবে ওয়াশিংটন।
তাইওয়ান ইস্যুতে সরাসরি বৈঠকে বিরোধে জড়ান যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। পরদিন দ্বীপটির বিরুদ্ধে চীনের ‘ক্রমবর্ধমান জবরদস্তির’ বিষয়টি কড়া সুরেই তুলে ধরেন অস্টিন। সিঙ্গাপুরে শাংরি-লা ডায়ালগ নিরাপত্তা সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমরা তাইওয়ানের আশপাশে উসকানিমূলক ও অস্থিতিশীল সামরিক তৎপরতা ক্রমশ বৃদ্ধি প্রত্যক্ষ করছি।’
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এর মধ্যে রয়েছে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তাইওয়ানের কাছে চীনের সামরিক উড়োজাহাজের উড্ডয়ন চলছে প্রায় প্রতিদিনই। আমরা উভয় পক্ষ থেকে বর্তমান স্থিতাবস্থায় কোনো একতরফা পরিবর্তনের দৃঢ়ভাবে বিরোধিতা করি। আমাদের নীতিতে কোনো পরিবর্তন আসেনি।’
গতকাল শুক্রবার সম্মেলনের পাশাপাশি (সাইডলাইনে) অস্টিন ও ফেঙ্গহির মধ্যে বৈঠকে আলোচনার প্রধান বিষয়বস্তু ছিল তাইওয়ান। এতে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে সতর্ক করে ফেঙ্গহি বলেন, কেউ যদি তাইওয়ানকে চীন থেকে আলাদা করার দুঃসাহস দেখায়, যেকোনো কিছুর বিনিময়ে হলেও যুদ্ধ শুরু করতে নিশ্চিতভাবে কোনো দ্বিধা করবে না চীনের সেনাবাহিনী। চীনের কর্মকর্তারা এ কথা জানিয়েছেন।
চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতে ফেঙ্গহি আরও বলেন, তাইওয়ানের স্বাধীনতা অর্জনের যেকোনো ধরনের ষড়যন্ত্র চুরমার করে দেবে বেইজিং। একই সঙ্গে দৃঢ়তার সঙ্গে মাতৃভূমিকে একীভূত রাখবে।
গত ৩০ মে তাইওয়ানের আকাশসীমায় চীনের ৩০ যুদ্ধবিমান অনুপ্রবেশ করে বলে অভিযোগ করে তাইওয়ান। এটি চলতি বছরে চীনের দ্বিতীয় বৃহৎ যুদ্ধবিমানের বহরের অনুপ্রবেশ। তাইপে বলছে, এই বহরে থাকা ৩০টি যুদ্ধবিমানের ২০টি ছিল জঙ্গিবিমান। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিজেদের অসন্তোষের বিষয়টি জানাতে তাইওয়ানের আকাশসীমায় যুদ্ধবিমানের বড় বহর পাঠাচ্ছে চীন।
এর আগে গত ২৩ জানুয়ারি ৩৯টি যুদ্ধবিমান তাইওয়ানের আকাশ প্রতিরক্ষা শনাক্ত অঞ্চলে (এডিআইজেড) প্রবেশ করেছিল। তবে দাবি করা এডিআইজেড অঞ্চলের মধ্যে চীনের নিজস্ব এডিআইজেডের অনেক বড় একটি অংশ পড়ে। এমনকি এর মধ্যে চীনের মূল ভূখণ্ডেরও কিছু অংশ অন্তর্ভুক্ত।
চলতি বছর এ পর্যন্ত তাইওয়ানে ৪৬৫ বার চীনের যুদ্ধবিমানের অনুপ্রবেশের কথা বলা হচ্ছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি। ২০২১ সালে এডিআইজেডে ৯৬৯ বার চীনের যুদ্ধবিমান অনুপ্রবেশের ঘটনা নথিভুক্ত করে তাইওয়ান।