তাঁর স্মৃতিঘেরা কয়েকটি স্থান

দক্ষিণ আফ্রিকার পাহাড়ি ও গ্রামীণ অঞ্চল ট্রান্সকেইতে জন্ম নেলসন ম্যান্ডেলার। শৈশবে সেখানকার এমভেজো গ্রামে গরু চরিয়ে বেড়াতেন। সেখানকার মেথডিস্ট মিশনারি স্কুলেই তাঁর লেখাপড়ার শুরু। বড় হয়ে জোহানেসবার্গে আইনব্যবসা করেছেন। দেড় যুগ কারাবন্দী ছিলেন রোবেন দ্বীপে। এই স্থানগুলো ছাড়াও দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন জায়গায় ম্যান্ডেলার স্মৃতি ছড়িয়ে আছে। তাঁর স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো দক্ষিণ আফ্রিকা ভ্রমণে যাওয়া অনেক পর্যটকের কাছে অবশ্য দ্রষ্টব্য।

রোবেন দ্বীপ সফরে সেই কক্ষে ম্যান্ডেলা ও ক্লিনটন
রোবেন দ্বীপ সফরে সেই কক্ষে ম্যান্ডেলা ও ক্লিনটন

রোবেন দ্বীপ
কেপটাউনের সমুদ্র উপকূলের অদূরে অবস্থিত মাত্র পাঁচ বর্গকিলোমিটারের এ দ্বীপ। পাহাড় ও সাগরের মেলবন্ধনে অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্য এর। তবে এই দ্বীপটি ম্যান্ডেলার কারণেই বেশি পরিচিত। এখানকার সুরক্ষিত কারাগারেই ম্যান্ডেলা কাটিয়েছেন তাঁর ২৭ বছর কারাজীবনের মধ্যে ১৮ বছর। রোবেন দ্বীপের কারাগার স্মরণ করিয়ে দেয় বর্ণবাদের সময়কার দুঃসহ স্মৃতি। দ্বীপের পাথরের খনিতে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করানো হতো ম্যান্ডেলাসহ বন্দীদের। এর প্রতিটি বালুকণা আর পাথর যেন সেই কালো স্মৃতি বহন করছে।
সোয়েটো
জোহানেসবার্গের সোয়েটো অঞ্চলের ভিলাকাজি স্ট্রিটে ম্যান্ডেলার পুরোনো বাড়ি। বর্তমানে এটি একটি ছোট জাদুঘর। আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করা ম্যান্ডেলা পরিবার নিয়ে চার কক্ষের এ ছোট বাড়িটিতে থাকতেন। কারাগার থেকে ছাড়া পাওয়ার কিছুদিন পর তিনি এখানে বাস করেন। এ বাড়িটি দেখলে বর্ণবাদের সময়কার অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। আইনজীবী ম্যান্ডেলার মতো অপেক্ষাকৃত অবস্থাপন্ন কৃষ্ণাঙ্গরাও ‘ম্যাচের বাক্স’ ধরনের ওই সব ছোট বাড়িতে থাকতেন। ভিলাকাজি স্ট্রিটেই তখন বাস করতেন ম্যান্ডেলার দীর্ঘ সময়ের সহযোগী আরেক নোবেল বিজয়ী ধর্মযাজক আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু। ম্যান্ডেলার এ বাড়ি থেকে কাছেই পাহাড়ের ওপর অবস্থিত হেক্টর পিটারসেন স্মৃতিসৌধ এবং জাদুঘর। ১৯৭৬ সালের ১৬ জুন বর্ণবাদী সরকারের নির্দেশে চালানো গুলিতে নিহত হয় ১৩ বছরের কিশোর হেক্টর।
ভিক্টর ভের্স্টর কারাগার
দক্ষিণ আফ্রিকার পার্ল শহরের কাছে অবস্থিত এ কারাগারে ম্যান্ডেলা তাঁর কারাজীবনের শেষ ১৪ মাস কাটিয়েছেন। ১৯৯০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি এখান থেকেই তিনি মুক্তি পান। কারাগারের ফটক দিয়ে বেরিয়ে স্ত্রী উইনি ম্যান্ডেলার হাত ধরে এগিয়ে যান তাঁকে স্বাগত জানাতে সমবেত ব্যক্তিদের দিকে। এ স্মৃতি ধরে রাখতে কারাগারের ফটকের সামনে স্থাপিত হয়েছে বজ্রমুষ্টি উঁচিয়ে থাকা ম্যান্ডেলার ব্রোঞ্জমূর্তি।
কনস্টিটিউশন হিল
দক্ষিণ আফ্রিকার সাংবিধানিক আদালত এখন যেখানে অবস্থিত, সে প্রাঙ্গণটিই কনস্টিটিউশন হিল নামে পরিচিত। সাংবিধানিক আদালতটি একটি উত্তরাধুনিক স্থাপনা। তবে এখানকার পুরোনো স্থাপনাগুলোর রয়েছে বিশেষ কুখ্যাতি। এই আদালতের পাশেই ১৮৯২ সালে নির্মিত ‘ওল্ড ফোর্ড প্রিজন কমপ্লেক্স’ কারাগার। নেলসন ম্যান্ডেলা ও ভারতের অহিংস আন্দোলনের পথিকৃৎ মহাত্মা গান্ধী কিছুদিন এ কারাগারে ছিলেন।

লিলিজলিফ খামার
জোহানেসবার্গের উত্তরাঞ্চলের এক উপশহরে এ বিখ্যাত খামারটি অবস্থিত। ১৯৬০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার কমিউনিস্ট পার্টি খামারটি কিনেছিল। এর মালিক হিসেবে দেখানো হতো আর্থার গোল্ডরিখ নামের এক শ্বেতাঙ্গকে। পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে ম্যান্ডেলাসহ এএনসির অনেক নেতা এখানে লুকিয়ে ছিলেন। ম্যান্ডেলাকে রোবেন দ্বীপে পাঠিয়ে দেওয়ার পর ১৯৬৩ সালে খামারটিতে অভিযান চালিয়ে পুলিশ এএনসির অনেক নেতাকে গ্রেপ্তার করে। সিএনএন।