টোয়েক কেলেঙ্কারি: শিক্ষার্থীদের ক্ষতিপূরণের দাবি ব্রিটিশ সাংসদের
ইংরেজি দক্ষতা যাচাই পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগ তুলে হাজারো বিদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করে দেয় যুক্তরাজ্য সরকার। ২০১৪ সালে নেওয়া সরকারের ওই বিতর্কিত সিদ্ধান্তের ভোগান্তি আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের শত শত শিক্ষার্থী। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য দেশটির রাজনীতিক, আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মীদের পক্ষ থেকে জোর দাবি উঠেছে।
গতকাল মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের পোর্টকালি হাউসে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে এই দাবি ওঠে। অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘মাইগ্রেশন ভয়েস’ এবং লেবার দলীয় আইনপ্রণেতা স্টিফেন টিমস ওই সেমিনারের পৃষ্ঠপোষকতা করেন।
লেবার দলীয় প্রভাবশালী আইনপ্রণেতা কিথ ভাজ বলেন, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে ছিল যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি ইটিএস (এডুকেশনাল টেস্টিং সার্ভিস)। জালিয়াতি ঘটে থাকলে সেই দায় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের। কিন্তু ইটিএসকে জবাবদিহি না করে ঢালাওভাবে শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল করা হয়েছে। তিনি জানান, ইটিএসের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র বিভাগের (হোম অফিস) একটি সমঝোতা হয়েছে বলে স্বীকার করেছে সরকার। তবে কত অর্থের বিনিময়ে সেটি করা হয়, তা বলা হয়নি। তিনি শুনেছেন ২০ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে এই সমঝোতা হয়েছে।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে সেই সময়ে অভিবাসনের দায়িত্বে ছিলেন ইঙ্গিত করে ভাজ বলেন, তাঁর কঠোর অভিবাসননীতি এবং অভিবাসন কমানোর নিষ্ঠুর কৌশলের কারণেই এত বড় কেলেঙ্কারি ঘটেছে।
উপস্থিত লেবার দলের আন্তর্জাতিক-বিষয়ক ছায়ামন্ত্রী ব্যারি গার্ডনারকে উদ্দেশ করে কিথ ভাজ বলেন, লেবার দলের উচিত ক্ষমতায় গেলে শিক্ষার্থীদের এই বিষয়টি পুনরায় তদন্তের প্রতিশ্রুতি দেওয়া। তিনি বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
আইনজীবী সোনালী নায়িক কিউসি বলেন, আদালত নয়; বরং সরকারের নির্বাহী সিদ্ধান্তে বিষয়টি শেষ করা উচিত। তিনি বলেন, এখন ভিসা ফিরিয়ে দিলেও শিক্ষার্থীদের পক্ষে তাঁদের আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই যৌক্তিক ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য লড়াই করে যেতে হবে।
আরেক আইনজীবী প্রেট্রিক লুইস বলেন, আইনের শাসন ও বিচারের অধিকারের মতো বিষয়গুলোর জন্য যুক্তরাজ্য সুপরিচিত। কিন্তু কোনো প্রমাণ ছাড়া ঢালাওভাবে শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিলের ঘটনা ঘটেছে। তাঁদের নির্দোষ প্রমাণের সুযোগ দেয়া হয়নি, এটি অগ্রহণযোগ্য।
প্যানেল আলোচক হিসেবে অংশ নিয়ে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস–এর সাংবাদিক রোবার্ট রাইট, গার্ডিয়ানের অ্যামেলিয়া জেন্টেলম্যান এবং মাইগ্রেন্ট ভয়েসের পরিচালক নাজেক রমাদানও শিক্ষার্থীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানান।
আলোচনার আগে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এতে অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কয়েকজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর ভোগান্তির গল্পও স্থান পেয়েছে।
টোয়েক কেলেঙ্কারির ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচারের দাবিতে সোচ্চার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী শেখ শরিফুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, গত প্রায় ৫ বছর ধরে ন্যায়বিচারের জন্য সংগ্রাম করে আসছেন তাঁরা। অনেকেই ইতিমধ্যে দেশে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। তবে এখনো শত শত ভুক্তভোগী যুক্তরাজ্যে থেকে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
যুক্তরাজ্যে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি করতে বা ভিসা পরিবর্তন করতে ইংরেজি দক্ষতার প্রমাণ দিতে হয়। ২০১৪ সালে বিবিসির এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ‘টেস্ট অব ইংলিশ ফর ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিকেশন’ (টোয়েক) পরীক্ষার কয়েকটি কেন্দ্রে একজনের পরীক্ষা অন্যজন দিয়ে দেওয়ার ঘটনা তুলে ধরা হয়। যার জের ধরে সরকার প্রায় ৩৪ হাজার বিদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করে দেয়। তাঁদের মধ্যে শত শত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন। সর্বশেষ দেশটির ন্যাশনাল অডিট অফিস বিষয়টিতে তদন্তের ঘোষণা দেয়। আগামী শুক্রবার ওই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানান স্টিফেন টিসম।