বিশ্বের প্রায় সব দেশের মানুষই বর্তমানে গুরুতর পুষ্টি সমস্যায় আক্রান্ত। দেশগুলোর অনেকে হয় অতিরিক্ত খেয়ে স্থূলতা সমস্যার শিকার হচ্ছে, নয় অনেকে খাবারের অভাবে অপুষ্টিতে ভুগছে। গতকাল শনিবার প্রকাশিত এক গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
১৪০টি দেশের ওপর ভিত্তি করে এই ‘গ্লোবাল নিউট্রিশন রিপোর্ট’ তৈরি করা হয়েছে। গবেষকেরা বলেন, সার্বিকভাবে এই পুষ্টি সমস্যা মানব উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। এ জন্য বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবিলায় সাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনার আহ্বান জানান তাঁরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী পুষ্টিহীনতার হার কমছে। তবে যে হারে কমছে তা আন্তর্জাতিকভাবে মতৈক্যে পৌঁছা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) পূরণে যথেষ্ট গতির নয়। এসডিজিতে ২০৩০ সালের মধ্যে সব ধরনের পুষ্টিহীনতা দূর করার কথা বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পুষ্টি ঘাটতিতে বিশ্বব্যাপী পাঁচ বছরের কম বয়সের সাড়ে ১৫ কোটির (১৫৫ মিলিয়ন) বেশি শিশুর বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং আরও ৫ কোটি ২০ লাখ শিশু দুর্বল ও ক্ষীণকায় হচ্ছে; অর্থাৎ তাদের ওজন উচ্চতা অনুযায়ী যথেষ্ট নয়। প্রতিবেদনে বিপরীত চিত্রও ফুটে উঠেছে। অতিরিক্ত ভোজনে সারা বিশ্বেই সব বয়সী মানুষের মধ্যে স্থূলতার সমস্যা প্রবল। বিশ্বের ৭০০ কোটি মানুষের মধ্যে ২০০ কোটিই বাড়তি ওজন বা স্থূলতা সমস্যার শিকার।
গবেষণায় দেখা গেছে, উত্তর আমেরিকার সব নারী ও পুরুষের এক-তৃতীয়াংশ স্থূলকায়। আর বিশ্বে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের অন্তত ৪ কোটি ১০ লাখ এ সমস্যায় আক্রান্ত। শুধু আফ্রিকায় প্রায় ১ কোটি শিশু স্থূলকায় হিসেবে বিবেচিত।
গ্লোবাল নিউট্রিশন রিপোর্টের সহ-নেতৃত্বদানকারী যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জেসিকা ফানজো বলেন, ‘ঐতিহাসিকভাবে, মায়ের রক্তাল্পতা ও শিশুর অপুষ্টিকে স্থূলতা ও অসংক্রামক রোগের থেকে ভিন্ন সমস্যা হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এগুলো ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। এর পেছনে রয়েছে বিশ্বের সব স্থানে বিরাজমান অসমতার বিষয়টি। তাই সরকারগুলোর উচিত এটি পৃথক সমস্যা হিসেবে নয়; বরং সার্বিক সমস্যা হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে তা মোকাবিলা করা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালে পুষ্টি সমস্যা মোকাবিলায় দাতাদের অর্থায়ন মাত্র ২ শতাংশ বেড়ে ৮৬ কোটি ৭০ লাখ ডলারে দাঁড়ায়। অথচ এ খাতে অর্থায়ন ব্যাপকভাবে বাড়ানো দরকার। গবেষকেরা আগামী ১০ বছরে এই খাতে বৈশ্বিক বিনিয়োগ তিন গুণ বাড়িয়ে ৭ হাজার কোটি ডলার করার আহ্বান জানান।