কপ-২৬ বিশ্বকে বাঁচাতে পারবে কি?
এবারের কপ-২৬ সম্মেলন কি যুক্তরাজ্যের প্রেসিডেন্ট বরিস জনসনের প্রত্যাশা অনুযায়ী জলবায়ু সংকট নিরসনে ঘুরে দাঁড়ানোর মঞ্চ হবে, নাকি জলবায়ু অধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গের নিন্দা কুড়ানোর আলোচনাস্থল হবে? বিবিসির এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এবারের জলবায়ু সম্মেলনকে খুব বেশি আশাব্যঞ্জক মনে করা হচ্ছে না। এর সহজ কারণ, আগের সম্মেলনগুলোর ব্যর্থতা। আগের ২৫টি বড় সম্মেলনের পরও বিশ্বে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন ঠেকিয়ে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ঠেকানো সম্ভব হয়নি। তিন দশক ধরে আলোচনার পরও শিল্পপূর্ব যুগের তুলনায় বিশ্ব ১.১ ডিগ্রি বেশি উষ্ণ। এ উষ্ণতা ক্রমেই বাড়ছে।
সবাই নির্গমন কমাতে তাদের বর্তমান প্রতিশ্রুতিতে অটল থাকলেও এ শতকের শেষ নাগাদ বিশ্বে তাপামাত্রা বৃদ্ধি ২.৭ ডিগ্রির বিপজ্জনক পথেই থাকবে। তাই এবারের সম্মেলন ঘিরে প্রকৃত অগ্রগতির প্রত্যাশা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি।
এর আংশিক কারণ, ঝুঁকি এখন ঘরে উঠে আসতে শুরু করেছে। এ বছরের বন্যায় জার্মানিতে ২০০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। শীতল কানাডায়ও তীব্র তাপদাহ দেখা গেছে। এমনকি সাইবেরিয়ার উত্তর মেরুও পুড়তে দেখা গেছে।
এখন বিজ্ঞানীদের হাতেও প্রমাণ রয়েছে। তাঁরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে পারেন, জলবায়ু পরিবর্তনের পেছনে মানুষের কর্মকাণ্ডই দায়ী। এতে সহিংস পরিণতির ঝুঁকি আরও বেড়েছে।
আগের চেয়ে আরও পরিষ্কার যে সবচেয়ে ক্ষতিকারক তাপমাত্রা এড়ানো মানে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী কার্বন নির্গমন অর্ধেক করা। কিন্তু কয়েক বছর আগেও যা ছিল অকল্পনীয়, তা এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি। অনেক দেশ ও প্রতিষ্ঠান এ শতকের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে কার্বন নির্গমন শুন্যে নামানোর প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।
তবে কি গ্লাসগো সেই স্থান হতে যাচ্ছে, যেখান থেকে বিশ্ব একটি শূন্য-কার্বন নির্গমন ভবিষ্যতের দিকে এগোচ্ছে? প্রকৃতপক্ষে এটি কখনোই সম্ভব নয় যে একটি একক সম্মেলন থেকে তা অর্জিত হতে পারে। ‘কপ’ মানে কনফারেন্স অব দ্য পার্টিজ। এটি জাতিসংঘের একটি উদ্যোগ। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সরকারের জন্য বিশেষভাবে কপ ঠিক করা হয়। বার্ষিক সম্মেলনের মাধ্যমে সমষ্টিগতভাবে সমস্যা মোকাবিলা করার একমাত্র ফোরাম হয়ে গেছে এটি। কিন্তু এটি প্রায় ২০০ দেশের ঐকমত্য নিয়ে কাজ করে। এসব দেশের ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে।
তেল বা কয়লাসমৃদ্ধ অনেক দেশ জলবায়ু নিয়ে আলোচ্যসূচিতে সব সময় প্রতিকূলতা সৃষ্টি করে। তারা সবকিছুর গতি কমানোর চেষ্টা করে থাকে। কিন্তু দরিদ্র ও ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলো তাদের অস্তিত্ব নিয়ে হুমকির মধ্যে পড়ে সাহায্যের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে।
২০০৫ সালের সম্মেলন থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত একই চিত্র চোখে পড়ে। কপের বিরল সফলতা বলতে ২০১৫ সালের প্যারিস সম্মেলনকে ধরা যেতে পারে। জলবায়ু বিপর্যয় এড়াতে এসব দেশ ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তিতে বৈশ্বিক উষ্ণতা প্রাক্-শিল্পায়ন যুগের চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি যাতে না বাড়ে, সে ব্যাপারে সম্মত হয়েছিল। এটাই প্যারিস চুক্তি। এই চুক্তির মানে হলো, ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ কার্যত শূন্যে নামিয়ে আনার জন্য দেশগুলো ব্যাপকভাবে নিঃসরণ কমাবে।
স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে গত ৩১ অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন (কপ-২৬)। ১২ নভেম্বর পর্যন্ত এই সম্মেলন চলবে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় এই সম্মেলনকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। প্যারিস চুক্তিপরবর্তী সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই সম্মেলন আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন। প্রাক্-শিল্পায়ন যুগের তুলনায় তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখা গেলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয়কর প্রভাব এড়ানো যাবে বলে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করছেন।